শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষকের বিদায়বেলায় সাবেক, বর্তমান শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৪ নং খাড়খাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মন্টু চন্দ্র দেবনাথ স্যার।
প্রধান শিক্ষকের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মন্টু চন্দ্র দেবনাথ স্যারের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৯০ সালে বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে। এরপর ২০০০ সালে তিনি বদলি হয়ে লোহাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে ২০০৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত উপাধী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি খাড়খাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দীর্ঘ ৩৪ বছরের কর্মজীবন শেষে ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
কর্মজীবন শেষে নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক চাকরিজীবীকে নির্দিষ্ট সময়ে অবসর নিতে হয়। কর্মগুণে সেই বিদায় যেমন স্মৃতি হয়ে থাকে, তেমনি ভালোবাসায় মুগ্ধতা ছড়ায়। প্রিয় শিক্ষককে এমনই এক রাজকীয় বিদায় জানালেন তার শিক্ষার্থীরা।
প্রিয় স্যারকে গাড়িতে উঠিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে মঞ্চে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় চারপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। শিক্ষাগুরুর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী নূরুল ইসলাম শাওন ও তারেকসহ অনেকে বলেন, “স্যার আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন। তার নির্দেশিত পথে আমরা অনেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। স্যারের স্মৃতি কখনো ভোলার নয়। তিনি আমাদের হৃদয়ের অন্তস্থলে স্থায়ী হয়ে থাকবেন। তার সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও আদর্শ আমাদের সারা জীবনের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।”
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনির তপদার বলেন, “স্যারের শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। তিনি অত্যন্ত সময়ানুবর্তী ও নিয়মিত ছিলেন। তার নেতৃত্বে বিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস কখনোই খালি থাকত না। তার কাছ থেকে সহকারী শিক্ষকরা অনেক কিছু শিখেছেন। তিনি আমাদের জন্য সত্যিকারের আদর্শ ছিলেন।”
ছোট শিক্ষার্থীরাও আবেগ প্রকাশ করে বলেন, “আজকের পর থেকে স্যারকে আর বিদ্যালয়ে দেখতে পাব না। তিনি আমাদের খুব যত্ন করে পড়ালেখা করাতেন। আমরা তাকে খুব মিস করব।”
একজন শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের এমন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা সত্যিই অনুকরণীয় হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।