ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও গুমের শিকার হয়েছেন। কখনো কখনো মায়েদের সঙ্গে শিশুদেরও তুলে নিয়ে বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়। বাদ যাননি অন্তঃসত্ত্বা নারীও। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর ভয়াবহ নির্যাতনের এসব তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার (২০ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গুম সংক্রান্ত কমিশনের বরাত দিয়ে এমন কিছু ঘটনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে পুরুষ বন্দীকে মানসিক নির্যাতন করতে স্ত্রীকে আটকে রেখে কোলের সন্তানকে মায়ের দুধপান থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করা হয়েছে।
এদিকে রোববার (১৯ জানুয়ারি) গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে তদন্তের অগ্রগতি তুলে ধরে। বৈঠকের পর জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা শিগগির ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে যাবেন।
সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে অন্তত চারজন নারীর গুমের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এই নারীদের মধ্যে একজন এখনো ফিরে আসেননি।
প্রতিবেদনে কমিশন জানায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের কারণে নারীদের গুমের জন্য টার্গেট করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজের অভিযোগে, বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নারীদের তুলে নেয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই ও মনগড়া অভিযোগে তাদের তুলে নেয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীদের চেয়ে পুরুষদের গুমের শিকার হওয়ার বেশি ঘটনা পাওয়া গেছে। তবে নারীরা গুমের শিকার হলেও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে এ নিয়ে তারা মুখ খোলেননি। এরপরও গুমের শিকার কিছু নারী তাদের তুলে নেয়া ও বন্দিশালায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিজ্ঞতা কমিশনের কাছে তুলে ধরেছেন। গুমের এমন ঘটনা কমিশন পেয়েছে, যেখানে মায়েদের সঙ্গে তাদের সন্তানদেরও তুলে নিয়ে গেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এমন এক নারীর সঙ্গে কমিশন কথা বলেছে। ওই নারীকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তুলে নিয়ে এক মাস বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়। ওই নারীর সঙ্গে তার তিন বছর ও দেড় বছরের দুই সন্তানও ছিল। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিরাপত্তা বাহিনীর একজন পুরুষ সদস্য তাকে মারধর করেন।
এতে আরও বলা হয়, অন্তঃসত্ত্বা নারীর ওই ঘটনা কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। ঘটনা আরও আছে। এক নারীকে তার ছয় বছরের সন্তানসহ তুলে নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। ওই সন্তানের সঙ্গে কথা বলেছে কমিশন।
গত ২৭ আগস্ট বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলোর তদন্ত করছে। ১৪ ডিসেম্বর কমিশনের দেয়া অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে গুমের বিভিন্ন ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথাও তুলে ধরা হয়েছে।