ঢাকা ০১:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo উপদেষ্টাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিলো মালয়েশিয়া Logo রাজাকার সবগুলোকে ফাঁসি দিছি, আন্দোলনকারীদেরও ছাড়বো না: সাবেক ঢাবি ভিসিকে শেখ হাসিনা Logo দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২,আহত আরও ১৭ বাংলাদেশী Logo লক্ষ্মীপুরে আলোচিত সন্ত্রাসী কদু আলমগীর গ্রেপ্তার Logo কুষ্টিয়ার মিরপুরে সাংবাদিকের উপরে সন্ত্রাসী হামলা Logo প্রথমে ‘অমানবিক’ নির্যাতন করেন, এরপর ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করেন Logo রাজধানীতে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিলের ডাক Logo সিরাজগঞ্জে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে পাচঁ শতাধিক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান Logo আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন হবে -তারেক রহমান Logo পাথরঘাটায় রহস্যজনক বিষপান: ৫ স্কুলছাত্রী অসুস্থ

নিজের সম্পদের হিসাব ফেসবুকে দিলেন প্রেসসচিব শফিকুল আলম

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখার লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার তাগিদ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সে উদ্দেশ্যে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার জন্য সময়ও বেঁধে দেয় সরকার। সর্বশেষ সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের সময়সীমা বাড়িয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে।

এবার সেই সম্পদের বিবরণী নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আইডিতে প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এক ফেসবুক পোস্টে সেই বিবরণী লিখে প্রকাশ করেন তিনি।

বিবরণীতে তিনি লেখেন, ২০০০ সালের দিকে আমার বাবা ঢাকা শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত এলাকা ডেমরার কাছে জুরাইন এবং যাত্রাবাড়ীর মধ্যবর্তী দনিয়া এলাকায় পাঁচতলা একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণ করেন। সেই ভবনের একটি ১,১৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট আমি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। ২০১০ সালে দনিয়া ছেড়ে চলে আসলেও এখনো সেই ফ্ল্যাট আমার মালিকানায় আছে। একসময় আমি সেটি আমার এক ভাইয়ের কাছে বিক্রি করার কথা ভেবেছিলাম, যিনি এখনো সেখানে থাকেন। তবে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি। জীবনের এক পর্যায়ে হয়ত আবার দনিয়ায় ফিরে যাব। বাবা-মায়ের বাড়িতে গেলে আমি এখনো সেই সরু করিডোরগুলোতে তাদের হাঁটতে দেখি। আমার প্রয়াত বাবার কোরআন তেলাওয়াতের শব্দ শুনি, মা যেভাবে বিনয়ের সঙ্গে সালাত আদায় করতেন তাও যেন দেখতে পাই।

তিনি আরও লেখেন, ২০১৪ সালে আমি শাহীনবাগে ১,১০০ বর্গফুটের একটি তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। ভাই এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন কিছু টাকা দিয়েছিলেন, আর বাকিটা আমার সঞ্চয় থেকে দিয়েছিলাম। আমি জায়গাটি ভালোবাসি। তবে নিরাপত্তার কারণে হয়ত খুব শিগগিরই এই ফ্ল্যাট ছেড়ে যেতে হবে। সম্প্রতি দেখছি, আমাদের এলাকার মসজিদের ভিক্ষুকরাও আমাকে চেনেন। কিছুদিন আগে কয়েকজন তরুণ আমাকে তাদের আড্ডার সামনে দিয়ে হাঁটার সময় ‘গণশত্রু’ বলে ডেকেছিল। এ কারণে আমাকে হয়ত শিগগিরই সরকারি একটি ফ্ল্যাটে চলে যেতে হবে। আমার পরিবার এই নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত।

এছাড়া তিনি আরও লেখেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে আমি আমার এক শ্যালকের কাছ থেকে ময়মনসিংহে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। খুব সস্তায় পেয়েছিলাম সেটি। একই ভবনে আমার স্ত্রী তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন। এই দুটি ফ্ল্যাট আমাদের জন্য মাসিক আয়ের একটি উৎস। এছাড়া গ্রামে আমার ৪০ শতাংশ আবাদি জমি আছে। বহু বছর ধরে একটা ভ্রান্ত ধারণায় ভুগেছি যে, অবসরে গ্রামে ফিরে যাব। শুধু লিখব আর হাঁটব—এটাই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু এখন মনে হয়, গ্রামে আর কখনো ফিরে যাওয়া হবে না। হয়ত আমি মরে গেলে আমার সন্তানরা আমাকে বাবা-মায়ের পাশেই কবর দেবে।

আমার একটি মাত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে যেখানে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা (১১.৪ মিলিয়ন টাকা) সঞ্চিত আছে। এই আগস্টে আমি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিতে দুই দশকের চাকরি ছেড়েছি। অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থের বেশিরভাগই আমার এএফপির চাকরির পেনশন এবং গ্র্যাচুইটির। কিছু মানুষ আমার কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ধার নিয়েছে। আমার ধারণা, বছরের শেষে আমার সঞ্চয় হয় অপরিবর্তিত থাকবে, নয়তো খরচের কারণে কমে যাবে। আমার একটি গাড়ি আছে। ঢাকা শহরে একটি গাড়ি পরিচালনা এবং ড্রাইভার রাখার মাসিক খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

আমি জানি না, প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে কাজ শেষ করার পর আমার ভাগ্য কোথায় নিয়ে যাবে। তবে নিশ্চিত জানি, এই সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কোনো কাজ না পেলেও আমি মধ্যবিত্তের মতোই সাধারণ জীবনযাপন করতে পারব। ক্ষমতায় থাকলে অনেকেই আপনার উপার্জন নিয়ে মিথ্যা রটায়। এটাই আমার পূর্ণাঙ্গ সম্পত্তির প্রকাশ।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

উপদেষ্টাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিলো মালয়েশিয়া

নিজের সম্পদের হিসাব ফেসবুকে দিলেন প্রেসসচিব শফিকুল আলম

আপডেট সময় ১০:৪১:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখার লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার তাগিদ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সে উদ্দেশ্যে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার জন্য সময়ও বেঁধে দেয় সরকার। সর্বশেষ সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের সময়সীমা বাড়িয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে।

এবার সেই সম্পদের বিবরণী নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আইডিতে প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এক ফেসবুক পোস্টে সেই বিবরণী লিখে প্রকাশ করেন তিনি।

বিবরণীতে তিনি লেখেন, ২০০০ সালের দিকে আমার বাবা ঢাকা শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত এলাকা ডেমরার কাছে জুরাইন এবং যাত্রাবাড়ীর মধ্যবর্তী দনিয়া এলাকায় পাঁচতলা একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণ করেন। সেই ভবনের একটি ১,১৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট আমি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। ২০১০ সালে দনিয়া ছেড়ে চলে আসলেও এখনো সেই ফ্ল্যাট আমার মালিকানায় আছে। একসময় আমি সেটি আমার এক ভাইয়ের কাছে বিক্রি করার কথা ভেবেছিলাম, যিনি এখনো সেখানে থাকেন। তবে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি। জীবনের এক পর্যায়ে হয়ত আবার দনিয়ায় ফিরে যাব। বাবা-মায়ের বাড়িতে গেলে আমি এখনো সেই সরু করিডোরগুলোতে তাদের হাঁটতে দেখি। আমার প্রয়াত বাবার কোরআন তেলাওয়াতের শব্দ শুনি, মা যেভাবে বিনয়ের সঙ্গে সালাত আদায় করতেন তাও যেন দেখতে পাই।

তিনি আরও লেখেন, ২০১৪ সালে আমি শাহীনবাগে ১,১০০ বর্গফুটের একটি তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। ভাই এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন কিছু টাকা দিয়েছিলেন, আর বাকিটা আমার সঞ্চয় থেকে দিয়েছিলাম। আমি জায়গাটি ভালোবাসি। তবে নিরাপত্তার কারণে হয়ত খুব শিগগিরই এই ফ্ল্যাট ছেড়ে যেতে হবে। সম্প্রতি দেখছি, আমাদের এলাকার মসজিদের ভিক্ষুকরাও আমাকে চেনেন। কিছুদিন আগে কয়েকজন তরুণ আমাকে তাদের আড্ডার সামনে দিয়ে হাঁটার সময় ‘গণশত্রু’ বলে ডেকেছিল। এ কারণে আমাকে হয়ত শিগগিরই সরকারি একটি ফ্ল্যাটে চলে যেতে হবে। আমার পরিবার এই নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত।

এছাড়া তিনি আরও লেখেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে আমি আমার এক শ্যালকের কাছ থেকে ময়মনসিংহে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। খুব সস্তায় পেয়েছিলাম সেটি। একই ভবনে আমার স্ত্রী তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন। এই দুটি ফ্ল্যাট আমাদের জন্য মাসিক আয়ের একটি উৎস। এছাড়া গ্রামে আমার ৪০ শতাংশ আবাদি জমি আছে। বহু বছর ধরে একটা ভ্রান্ত ধারণায় ভুগেছি যে, অবসরে গ্রামে ফিরে যাব। শুধু লিখব আর হাঁটব—এটাই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু এখন মনে হয়, গ্রামে আর কখনো ফিরে যাওয়া হবে না। হয়ত আমি মরে গেলে আমার সন্তানরা আমাকে বাবা-মায়ের পাশেই কবর দেবে।

আমার একটি মাত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে যেখানে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা (১১.৪ মিলিয়ন টাকা) সঞ্চিত আছে। এই আগস্টে আমি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিতে দুই দশকের চাকরি ছেড়েছি। অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থের বেশিরভাগই আমার এএফপির চাকরির পেনশন এবং গ্র্যাচুইটির। কিছু মানুষ আমার কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ধার নিয়েছে। আমার ধারণা, বছরের শেষে আমার সঞ্চয় হয় অপরিবর্তিত থাকবে, নয়তো খরচের কারণে কমে যাবে। আমার একটি গাড়ি আছে। ঢাকা শহরে একটি গাড়ি পরিচালনা এবং ড্রাইভার রাখার মাসিক খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

আমি জানি না, প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে কাজ শেষ করার পর আমার ভাগ্য কোথায় নিয়ে যাবে। তবে নিশ্চিত জানি, এই সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কোনো কাজ না পেলেও আমি মধ্যবিত্তের মতোই সাধারণ জীবনযাপন করতে পারব। ক্ষমতায় থাকলে অনেকেই আপনার উপার্জন নিয়ে মিথ্যা রটায়। এটাই আমার পূর্ণাঙ্গ সম্পত্তির প্রকাশ।