যশোরের শার্শা ও বেনাপোল সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সদস্যদের নির্যাতনে ৩ বাংলাদেশি নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে গতকাল বুধবার শার্শা উপজেলার পাঁচভূলাট সীমান্ত থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
বেনাপোলের পুটখালী সীমান্ত থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর মৃত্যু হয় একজনের। আরেকজনের লাশ শার্শার অগ্রভূলাট সীমান্ত এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সবার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন– বেনাপোলের কাগজপুকুর গ্রামের মৃত ইউনুচ আলী মোড়লের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৫০), দিঘিরপাড় গ্রামের আরিফ হোসেনের ছেলে সাবুর আলী (২৮) এবং চৌগাছা উপজেলার সাদাতপুর গ্রামের সাকিবুল (২০)। তাদের মধ্যে সাকিবুল দিঘিরপাড় গ্রামে নানাবাড়িতে থাকতেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে সীমান্ত পার হয়ে একদল বাংলাদেশি ভারতে গরু আনতে যায়। সীমান্তে পৌঁছানোর পর বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে কয়েকজন। এর পর তাদের নির্যাতন করেন বিএসএফ সদস্যরা। মারধরের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসার পর তাদের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে গতকাল সকালে শার্শার পাঁচভূলাট সীমান্ত থেকে জাহাঙ্গীর আলমের বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সাবুর আলীকে মারধর করে বিবস্ত্র অবস্থায় বাংলাদেশ সীমান্তে রেখে যায় বিএসএফ। সীমান্তের ইছামতী নদীর ওপাশে নির্যাতনের শিকার হন তিনি। আহত অবস্থায় পরিবারের লোকজন ভোরে উদ্ধার করে বাড়িতে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর তাঁর মৃত্যু হয়। এদিকে বিকেলে শার্শার অগ্রভূলাট সীমান্তে ইছামতী নদী থেকে সাকিবুলের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত সাবুর আলীর স্ত্রী হাসিরন জানান, তাঁর স্বামী মাঝেমধ্যে পণ্য আনতে ভারতে আসা-যাওয়া করতেন। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। ভোরে একজন বাড়িতে এসে খবর দেন, পুটখালী সীমান্তের একটি আমবাগানে সাবুরকে মেরে ফেলে রাখা হয়েছে। পরে সেখানে গিয়ে তারা দেখেন, তিনি মাটিতে পড়ে আছেন। বাড়িতে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর তাঁর মৃত্যু হয়।
শার্শা থানার ওসি আমির আব্বাস বলেন, পাঁচভূলাট এলাকায় সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ৩০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইছামতী নদীর পাড়ে জাহাঙ্গীরের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে শার্শা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। বিকেলে শার্শার অগ্রভূলাট সীমান্তে ইছামতী নদী থেকে সাকিবুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। দু’জনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
খুলনা-২১ বিজিবির লেফটেন্যান্ট কর্নেল খুরশিদ আনোয়ার বলেন, নিহত তিনজনের শরীরে একাধিক ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। কীভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
এক কিশোরকে সীমান্ত থেকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ। গতকাল বিকেলে উপজেলা সদরের অমরখানা ইউনিয়নের সেনপাড়া সীমান্তে ৭৪৬ নম্বর মেইন পিলার এলাকা থেকে ৪৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের গোড়ালবাড়ী ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁকে ধরে নিয়ে যান।
সেনপাড়া টোকাপাড়া ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েব সুবেদার শফিকুল ইসলাম জানান, সেনপাড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে ৪-৫ জন ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় তাদের ধাওয়া করেন গোড়ালবাড়ী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা। সবাই পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে এক কিশোর।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা বলেন, কিশোরকে ফেরত পেতে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।