দিনাজপুর জেলায় সদর উপজেলার ৩নং ফাজিলপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সিরাজুল ইসলামকে প্যানেল থেকে সরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিএনপিপন্থী ও আওয়ামী পন্থী মেম্বাররা।
ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৯ আগষ্ট ২৪ ইং স্থানীয় সরকার বিভাগ এক পরিপত্রে উল্লেখ করেন যেসব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত অনুপস্থিত থাকছেন সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যানগণ দায়িত্ব পালন করবেন। এক্ষেত্রে ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে ২নং প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবেন। ২নং প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে ৩নং প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবেন। যদি ৩নং প্যানেল চেয়ারম্যানও দায়িত্ব পালনে অপারগ হোন তাহলে উপজেলা প্রশাসন থেকে একজনকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ইউনিয়নের অর্থনিতীর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং নিয়মিত কার্যক্রমের জন্য স্থানীয় জনগণকে উপজেলায় আসতে হবে। উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব অভিজিৎ বসাক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় গত ৫আগষ্ট থেকে পলাতক এবং উনার নামে ছাত্র হত্যার মামলাও রয়েছে। ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান বদিয়ার রহমানও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি। ফলে প্যানেল চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন। ২নং প্যানেল চেয়ারম্যান সৌমিত্র রাণী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য এবং উনার স্বামী জনাব মনিরাম রায় হউনিয়ন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক। ফলে ইনিও ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এমন অবস্থায় স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৩নং প্যানেলে থাকা জনাব সিরাজুল ইসলাম।
ইনি ফাজিলপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের তিনবারের নির্বাচিত মেম্বার ও ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সহঃ সভাপতি। স্থানীয় সরকার বিভাগের উক্ত ঘোষণা এবং ১নং ও ২নং প্যানেল চেয়ারম্যান পদত্যাগের পর থেকেই সিরাজুল ইসলাম ইউনিয়নের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু পরিষদের কাজকর্মে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে বিএনপি পন্থী ও আওয়ামী পন্থী কয়েকজন মেম্বার। পরিপত্র ঘোষণা দেওয়ার পরই চেয়ারম্যানের রুম তালাবদ্ধ করে রাখে ইউনিয়ন যুবদল নেতা ও ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার জনাব জালাল উদ্দীন। উল্লেখ্য উক্ত ইউনিয়নে সাদেকুল ইসলাম, বজলুর রশিদ বাবু ও জালাল উদ্দীন নামে তিনজন বিএনপি নেতা মেম্বার পদে আছেন। এই তিনজন বিএনপিপন্থী মেম্বার আরো দুজন আওয়ামী লীগ নেতা জনাব বদিয়ার রহমান ও ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা আনসার এর সহযোগিতায় শুরু থেকেই প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরোধিতা করে আসছে। অন্যান্য মেম্বারদেরকেও হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত আসা যাওয়া করতে দিচ্ছে না। প্রায় তিন মাস হয়ে গেলেও চেয়ারম্যানের রুমের তালাও এখন পর্যন্ত খুলে দেয়নি যুবদল নেতা জালাল উদ্দীন। এ ব্যাপারে প্যানেল চেয়ারম্যান জনাব সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে উনি বলেন, জনাব ইউএনও মহোদয়ের সাথে এ ব্যাপারে কয়েকবার বসা হয়েছে। ইউএনও মহোদয় সকল মেম্বারকে ইউনিয়ন পরিষদে আসার জন্য তাগিদ দিয়েছেন এবং জালাল মেম্বারকে রুমের তালা খুলে দিতে বলেছেন। কিন্তু তারা এখনও রুমের তালা খুলেনি। ফলে পরিষদের কাজকর্ম করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রুমে গিয়ে জনগণের সেবামূলক কাজগুলোর কাগজে স্বাক্ষর করতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররা পরিষদে আসে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে উনি বলেন, পরিষদের মেম্বাররা বিভিন্ন সময় চুপিচাপে আমার কাছে এসে জনগণের সেবামূলক কাজের সই-স্বাক্ষর নিয়ে যাচ্ছেন।
আমি আমার সর্বচ্চ চেষ্টা দিয়ে পরিষদের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু, চেয়ারম্যানের রুমে তালা থাকায় উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ, পরিষদের সিনিয়র নাগরিকরা কিংবা প্রসাশনের লোকজন আসলে তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করতে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পরতে হচ্ছে। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি মমিনুল ইসলামের কাছে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়া হলেও তারা কোনো সুরাহা দেননি। স্থানীয় জনগণের অভিযোগ যদি এখান থেকে প্যানেল চেয়ারম্যানকে সরানো হয় তাহলে আমাদের সেবা পাওয়ার জন্য উপজেলা পর্যন্ত যাওয়া কষ্টকর হয়ে দাড়াবে। আবার আমরা যত সহজে পরিষদে এসে সেবা পাই এই সেবা উপজেলায় গিয়ে সহজে পাওয়া সম্ভব না।
আর বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান একজন পরিক্ষিত মানুষ উনার কাজকর্মে আমরা সবাই সন্তুষ্ট।