ঢাকা ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলামি সংস্কৃতি নিয়ে কিছু করলে আগে জামায়াত–শিবির ট্যাগ দেওয়া হতো: ফারুকী

ইসলামি সংস্কৃতি নিয়ে কোনো কিছু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় মৌলবাদী, জামায়াত শিবির আখ্যা দেওয়া হতো বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। সংস্কৃতি উপদেষ্টা এ থেকে বের হয়ে সবাইকে নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, অতীতে দেশটা পরিকল্পিতভাবে দুইভাবে ভাগ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ সবার। ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে আলাদা করা হবে না। গান, বাজনা ও নাচকে সংস্কৃতি মনে করা হতো। এর বাইরে ধর্মীয় সংস্কৃতি আছে সেটাকে আমলে নেওয়া হতো না।

তিনি বলেন, আগে ইসলামি সংস্কৃতি নিয়ে কোনো কিছু করলে মৌলবাদী, জামায়াত শিবির বলা হতো। ১৯৯৩ সালে ‘বিষাদসিন্ধু’ নাটক করার কারণে সৈয়দ জামিল আহমেদকে জামায়াত শিবির ট্যাগ দেওয়া হয়েছিল। এর থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে নিয়ে কাজ করবো।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, অপরাধীরা তাঁদের চিহ্ন মুছে ফেলতে চায়। যে গণহত্যা হয়েছে এই অপরাধের জন্য অপরাধীরা ক্ষমা চায়নি। গণহত্যায় শহীদদের পরিবারের, আহতদের বক্তব্য নিয়ে আর্কাইভ করা হবে। এজন্য সবাইকে বক্তব্য দেয়ার আহ্বান জানাবো। যখন সবাই ভিডিও বক্তব্য দেবে, পাঠাবে তখন অপরাধীদের ৫০ বছরেও এর দায় পালানোর সুযোগ থাকবে না।

তিনি বলনে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ২৪ এর বিপ্লবে রিনিউড হয়েছে। ২৪ এর চেতনায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা আরো বেগবান হবে। তবে ফ্যাসিস্টদের বিচারে বিঘ্ন ঘটানোর পক্ষের মত তো অধিকার না।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরও বলেন, হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে পুলিশ ছিল না। কিন্তু বড় কোনো আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি। তাই সময দিতে হবে। ভুল হলে ধরিয়ে দিতে হবে।

কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, গত ১৬ বছরে দুজনকে দেবতা বানিয়েছিল আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার। একজন হলেন শেখ মুজিবর রহমান, আরেকজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংস্কৃতির দেবতা। তাঁদেরকে মানুষের কাতারকে নিয়ে আসতে হবে। তবে তাঁদের অবদানকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। রবীন্দ্রনাথকে একদল লোক সাম্প্রদায়িক বানিয়েছিল। আর নজরুল সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির প্রতীক।

তিনি বলেন, এই দেবতাদের থেকে বের হয়ে কাজী নজরুল ইসলামকে সব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করা হবে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামের সব কাজ আর্কাইভ করা হবে। তার নামে ধানমণ্ডির রবীন্দ্রনাথ সরোবরে রেবেল স্কয়ার করা হবে।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম বলেন, বই নেওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রী ও সচিবদের ২০% কোটা ছিল। তাঁদের বই তালিকাভুক্ত করতে হতো জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের। প্রকৃত লেখকদের বই স্থান পেতো না। এক্ষেত্রে নীতিমালা সংশোধন করা হবে।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, রাজনীতিকরণ ও সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে এতোদিন অনেক কাজই করতে পারেনি বাংলা একাডেমি। অনুবাদ, ডিজিটাইজেশনের কাজ নতুনভাবে শুরু করবো।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, সব মত–পথের প্লাটফর্ম করতে চাই শিল্প কলা একাডেমিকে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি দূর করতে চাই। তর্কের ভেতর দিয়ে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই। গণঅভ্যুত্থানের স্মরণে দ্রোহের গান নিয়মিত করা। নাটক ও কাওয়ালি অনুষ্ঠান করা হবে।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্টপোষকতা করা হয়েছে। তার জন্মশতবার্ষিকী ঘটা করে পালন করেছে। রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদকে অস্বীকার করেছিল। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের নাটক পড়ানো হয় বেশি। নজরুলকে করা হয়নি।

সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, শেখ মুজিবকে কখনও বঙ্গবন্ধু বলিনি। শেখ মুজিব বলেছি। কারণ আমি পা চাটিনি। মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ৭ মার্চের ভাষণ শুনিয়ে শুনিয়ে কান ঝালপালা করা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বগুড়ায় কনসার্ট দেখতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত

ইসলামি সংস্কৃতি নিয়ে কিছু করলে আগে জামায়াত–শিবির ট্যাগ দেওয়া হতো: ফারুকী

আপডেট সময় ০৩:৪৭:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

ইসলামি সংস্কৃতি নিয়ে কোনো কিছু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় মৌলবাদী, জামায়াত শিবির আখ্যা দেওয়া হতো বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। সংস্কৃতি উপদেষ্টা এ থেকে বের হয়ে সবাইকে নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, অতীতে দেশটা পরিকল্পিতভাবে দুইভাবে ভাগ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ সবার। ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে আলাদা করা হবে না। গান, বাজনা ও নাচকে সংস্কৃতি মনে করা হতো। এর বাইরে ধর্মীয় সংস্কৃতি আছে সেটাকে আমলে নেওয়া হতো না।

তিনি বলেন, আগে ইসলামি সংস্কৃতি নিয়ে কোনো কিছু করলে মৌলবাদী, জামায়াত শিবির বলা হতো। ১৯৯৩ সালে ‘বিষাদসিন্ধু’ নাটক করার কারণে সৈয়দ জামিল আহমেদকে জামায়াত শিবির ট্যাগ দেওয়া হয়েছিল। এর থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে নিয়ে কাজ করবো।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, অপরাধীরা তাঁদের চিহ্ন মুছে ফেলতে চায়। যে গণহত্যা হয়েছে এই অপরাধের জন্য অপরাধীরা ক্ষমা চায়নি। গণহত্যায় শহীদদের পরিবারের, আহতদের বক্তব্য নিয়ে আর্কাইভ করা হবে। এজন্য সবাইকে বক্তব্য দেয়ার আহ্বান জানাবো। যখন সবাই ভিডিও বক্তব্য দেবে, পাঠাবে তখন অপরাধীদের ৫০ বছরেও এর দায় পালানোর সুযোগ থাকবে না।

তিনি বলনে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ২৪ এর বিপ্লবে রিনিউড হয়েছে। ২৪ এর চেতনায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা আরো বেগবান হবে। তবে ফ্যাসিস্টদের বিচারে বিঘ্ন ঘটানোর পক্ষের মত তো অধিকার না।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরও বলেন, হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে পুলিশ ছিল না। কিন্তু বড় কোনো আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি। তাই সময দিতে হবে। ভুল হলে ধরিয়ে দিতে হবে।

কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, গত ১৬ বছরে দুজনকে দেবতা বানিয়েছিল আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার। একজন হলেন শেখ মুজিবর রহমান, আরেকজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংস্কৃতির দেবতা। তাঁদেরকে মানুষের কাতারকে নিয়ে আসতে হবে। তবে তাঁদের অবদানকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। রবীন্দ্রনাথকে একদল লোক সাম্প্রদায়িক বানিয়েছিল। আর নজরুল সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির প্রতীক।

তিনি বলেন, এই দেবতাদের থেকে বের হয়ে কাজী নজরুল ইসলামকে সব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করা হবে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামের সব কাজ আর্কাইভ করা হবে। তার নামে ধানমণ্ডির রবীন্দ্রনাথ সরোবরে রেবেল স্কয়ার করা হবে।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম বলেন, বই নেওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রী ও সচিবদের ২০% কোটা ছিল। তাঁদের বই তালিকাভুক্ত করতে হতো জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের। প্রকৃত লেখকদের বই স্থান পেতো না। এক্ষেত্রে নীতিমালা সংশোধন করা হবে।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, রাজনীতিকরণ ও সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে এতোদিন অনেক কাজই করতে পারেনি বাংলা একাডেমি। অনুবাদ, ডিজিটাইজেশনের কাজ নতুনভাবে শুরু করবো।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, সব মত–পথের প্লাটফর্ম করতে চাই শিল্প কলা একাডেমিকে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি দূর করতে চাই। তর্কের ভেতর দিয়ে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই। গণঅভ্যুত্থানের স্মরণে দ্রোহের গান নিয়মিত করা। নাটক ও কাওয়ালি অনুষ্ঠান করা হবে।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্টপোষকতা করা হয়েছে। তার জন্মশতবার্ষিকী ঘটা করে পালন করেছে। রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদকে অস্বীকার করেছিল। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের নাটক পড়ানো হয় বেশি। নজরুলকে করা হয়নি।

সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, শেখ মুজিবকে কখনও বঙ্গবন্ধু বলিনি। শেখ মুজিব বলেছি। কারণ আমি পা চাটিনি। মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ৭ মার্চের ভাষণ শুনিয়ে শুনিয়ে কান ঝালপালা করা হয়েছে।