ঢাকা ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রতন টাটার শেষকৃত্য সম্পন্ন

ভারতের মুম্বাইয়ে দেশটির অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী টাটা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান রতন টাটার শেষকৃত্য বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হয়েছে। বু

ভারতের মুম্বাইয়ে দেশটির অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী টাটা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান রতন টাটার শেষকৃত্য বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার ৮৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান। ১৯৯১ সালে রতন টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন এবং তিনি টাটা গ্রুপকে একটি বৈশ্বিক শক্তিতে রূপান্তরিত করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। এদিন হাজার হাজার মানুষ মুম্বাইয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টসে ভিড় করে, যেখানে সকালে টাটার মরদেহ নেওয়া হয়।

তার কফিনটি ভারতীয় পতাকায় মোড়ানো হয়েছিল এবং সাদা ফুলের মালায় ঢাকা ছিল। হাজারো মানুষ এদিন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করে। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সেলিব্রিটিদেরও এতে অংশ নিতে দেখা যায়। মহারাষ্ট্র সরকার রতন টাটার মৃত্যুতে শোক দিবস ঘোষণা করে এবং তার কফিনকে সামরিক সম্মান জানিয়ে শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

ধনকুবের মুকেশ আম্বানি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বলিউড তারকা আমির খান তাকে শেষ বিদায় জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া রতন টাটার প্রিয় কুকুর গোয়াও সেখানে ছিল। টাটার দুই কর্মচারীর সঙ্গে কুকুরটি ছিল। কুকুরটি গোয়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল।

সেখান থেকেই তার নামটি নেওয়া হয়। বিনয়ী ও লাজুক ব্যক্তিত্বের জন্য পরিচিত রতন টাটা তার দানশীল কাজের জন্যও বিখ্যাত ছিলেন। পশুপালন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তার অবদান বিশেষভাবে লক্ষণীয়। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে তার মৃত্যুর খবর ঘোষণা করা হয়। সপ্তাহের শুরুতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

তার কম্পানির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তিনি যে নীতিগুলি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সমর্থন করেছিলেন, সেগুলো অনুসরণ করতে তিনি আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবেন।

টাটা গ্রুপ ভারতের অন্যতম বৃহৎ কম্পানি, যার বার্ষিক আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং রতন টাটা ভারতের অন্যতম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যাবসায়িক নেতা। টাটা গ্রুপের ১৫৫ বছরের ইতিহাসে রতন টাটার সময়কালে সংস্থাটি জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার, টাটা স্টিল, বিমান চালনা থেকে শুরু করে লবণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো বৈচিত্র্যময় ব্যবসায় সফলতা অর্জন করেছে। তার ২০ বছরের নেতৃত্বে টাটা গ্রুপ একাধিক হাই-প্রফাইল অধিগ্রহণ করে, যার মধ্যে রয়েছে অ্যাংলো-ডাচ ইস্পাত প্রস্তুতকারক কোরাস, যুক্তরাজ্যের জাগুয়ার ও ল্যান্ড রোভার গাড়ি ব্র্যান্ড এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা কম্পানি টেটলি।

১৯৩৭ সালে প্রথাগত পারসি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রতন টাটা। যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য ও কাঠামোগত প্রকৌশলে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৯৬২ সালে তিনি টাটা ইন্ডাস্ট্রিজে সহকারী হিসেবে যোগদান করেন এবং জামশেদপুরের একটি কারখানায় ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কম্পানি (বর্তমানে টাটা স্টিল), টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস) এবং ন্যাশনাল রেডিও অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসে (নেলকো) কাজ করেন।

১৯৯১ সালে দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী জেআরডি টাটা রতন টাটাকে তার উত্তরসূরি হিসেবে নিযুক্ত করেন। পরে এক সাক্ষাৎকারে টাটা বলেন, ‘তিনি (জেআরডি টাটা) আমার সবচেয়ে বড় পরামর্শদাতা ছিলেন…তিনি আমার জন্য বাবা ও ভাইয়ের মতো ছিলেন।’

২০০৮ সালে ভারত সরকার রতন টাটাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মবিভূষণ প্রদান করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে ‘একজন দূরদর্শী ব্যবসায়ী নেতা, সহানুভূতিশীল আত্মা ও অসাধারণ মানব’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রতন টাটার শেষকৃত্য সম্পন্ন

আপডেট সময় ১১:২০:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

ভারতের মুম্বাইয়ে দেশটির অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী টাটা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান রতন টাটার শেষকৃত্য বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার ৮৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান। ১৯৯১ সালে রতন টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন এবং তিনি টাটা গ্রুপকে একটি বৈশ্বিক শক্তিতে রূপান্তরিত করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। এদিন হাজার হাজার মানুষ মুম্বাইয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টসে ভিড় করে, যেখানে সকালে টাটার মরদেহ নেওয়া হয়।

তার কফিনটি ভারতীয় পতাকায় মোড়ানো হয়েছিল এবং সাদা ফুলের মালায় ঢাকা ছিল। হাজারো মানুষ এদিন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করে। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সেলিব্রিটিদেরও এতে অংশ নিতে দেখা যায়। মহারাষ্ট্র সরকার রতন টাটার মৃত্যুতে শোক দিবস ঘোষণা করে এবং তার কফিনকে সামরিক সম্মান জানিয়ে শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

ধনকুবের মুকেশ আম্বানি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বলিউড তারকা আমির খান তাকে শেষ বিদায় জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া রতন টাটার প্রিয় কুকুর গোয়াও সেখানে ছিল। টাটার দুই কর্মচারীর সঙ্গে কুকুরটি ছিল। কুকুরটি গোয়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল।

সেখান থেকেই তার নামটি নেওয়া হয়। বিনয়ী ও লাজুক ব্যক্তিত্বের জন্য পরিচিত রতন টাটা তার দানশীল কাজের জন্যও বিখ্যাত ছিলেন। পশুপালন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তার অবদান বিশেষভাবে লক্ষণীয়। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে তার মৃত্যুর খবর ঘোষণা করা হয়। সপ্তাহের শুরুতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

তার কম্পানির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তিনি যে নীতিগুলি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সমর্থন করেছিলেন, সেগুলো অনুসরণ করতে তিনি আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবেন।

টাটা গ্রুপ ভারতের অন্যতম বৃহৎ কম্পানি, যার বার্ষিক আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং রতন টাটা ভারতের অন্যতম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যাবসায়িক নেতা। টাটা গ্রুপের ১৫৫ বছরের ইতিহাসে রতন টাটার সময়কালে সংস্থাটি জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার, টাটা স্টিল, বিমান চালনা থেকে শুরু করে লবণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো বৈচিত্র্যময় ব্যবসায় সফলতা অর্জন করেছে। তার ২০ বছরের নেতৃত্বে টাটা গ্রুপ একাধিক হাই-প্রফাইল অধিগ্রহণ করে, যার মধ্যে রয়েছে অ্যাংলো-ডাচ ইস্পাত প্রস্তুতকারক কোরাস, যুক্তরাজ্যের জাগুয়ার ও ল্যান্ড রোভার গাড়ি ব্র্যান্ড এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা কম্পানি টেটলি।

১৯৩৭ সালে প্রথাগত পারসি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রতন টাটা। যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য ও কাঠামোগত প্রকৌশলে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৯৬২ সালে তিনি টাটা ইন্ডাস্ট্রিজে সহকারী হিসেবে যোগদান করেন এবং জামশেদপুরের একটি কারখানায় ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কম্পানি (বর্তমানে টাটা স্টিল), টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস) এবং ন্যাশনাল রেডিও অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসে (নেলকো) কাজ করেন।

১৯৯১ সালে দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী জেআরডি টাটা রতন টাটাকে তার উত্তরসূরি হিসেবে নিযুক্ত করেন। পরে এক সাক্ষাৎকারে টাটা বলেন, ‘তিনি (জেআরডি টাটা) আমার সবচেয়ে বড় পরামর্শদাতা ছিলেন…তিনি আমার জন্য বাবা ও ভাইয়ের মতো ছিলেন।’

২০০৮ সালে ভারত সরকার রতন টাটাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মবিভূষণ প্রদান করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে ‘একজন দূরদর্শী ব্যবসায়ী নেতা, সহানুভূতিশীল আত্মা ও অসাধারণ মানব’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন।