ঢাকা ০৫:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে সরব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা ১৬ বছরের শাসনকালে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত ছিল দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। প্রায়ই গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হতো সংগঠনটি। বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যাসহ নিপীড়ন-নির্যাতনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি গুলিও চালাতে দেখা যায় তাদের। যাতে শতাধিক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর উঠে এসেছে। এ অপরাধে অনেকে গ্রেপ্তারও হচ্ছেন।

গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়ে ৩০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর থেকেই তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এরপরও ৪ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তবে ৫ আগস্ট থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এসব নেতাকর্মী। বিভিন্ন সময় যারা শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করেছে তাদের ছবিসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ব্যানার টানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। যেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে ক্লাস-পরীক্ষায় বসতে চান না সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, গত ১৬ বছর ধরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা যেভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, নির্যাতন চালিয়েছে এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ভূমিকা রেখেছে, তাদের আর রাজনীতি করার অধিকার নেই। সামগ্রিক ছাত্র রাজনীতিকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি তারা সম্পৃক্ত ছিল। সংগঠন হিসেবে নৈতিকভাবে ছাত্রলীগ রাজনীতি করার সব সুযোগ হারিয়ে ফেলেছে। গণহত্যাকারীদের সহযোগী ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি এবং যৌক্তিক সময়। নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মেও তাদের নিষিদ্ধের দাবি তোলা হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রনেতারা।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, ‘গত দেড় দশকে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য তৈরি করা, গণরুম গেস্টরুমের নামে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন, নারী শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলা, বুয়েটের আবরার ফাহাদকে হত্যা করে যারা উল্লাস প্রকাশ করেছে এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফ্যাসিবাদের দোসর, গণহত্যাকারীদের সহযোগী ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি এবং যৌক্তিক সময়। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ মনে করছে যাদের হাতে রক্ত লেগে আছে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে পথ চলতে পারে না, ক্লাস করতে পারে না। সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

একই ধরনের মত দেন ঢাবি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরহাদ। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ গত ১৬ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের ওপর যে পরিমাণ নির্যাতন চালিয়েছে, যেভাবে তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রকাশ্যে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর যারা গুলি চালাতে পারে, তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। শিক্ষার্থী তাদের আর কখনো মেনেও নেবে না। প্রশাসনের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের আইনের মুখোমুখি করা এবং সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। তারা কোনোভাবেই বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না।’

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তিনটি গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। ৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে এক রকম রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়েছে। আবার নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনের পর আরেক ধরনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়েছে গণ-আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে। চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটেছে। আর এই দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে মাঠপর্যায়ে ছাত্রলীগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যারা হামলা চালিয়েছে এবং বিগত সময়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনকে টিকিয়ে রাখতে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নিপীড়ন চালিয়েছে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি ভিন্ন সংগঠনের নামে তারা যাতে পুনর্বাসিত হতে না পারে সে বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে।’

পরিবেশ পরিষদের সভা (ঢাবি পরিচালিত ছাত্রসংগঠনগুলোর প্ল্যাটফর্ম) ডেকে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা। তিনি বলেন, ‘ছাত্র ইউনিয়ন সবসময় ক্যাম্পাসে স্বাধীনতাবিরোধী, সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি করে এসেছে। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর ছাত্রলীগের রাজনীতি কার্যতই বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত সময়ের ভেতরে পরিবেশ পরিষদের সভা আহ্বান করতে বলেছি। ছাত্রলীগকে যদি নিষিদ্ধ করতে হয় তবে পরিবেশ পরিষদ সভায় সব ছাত্র সংগঠনের ঐকমত্য জরুরি। আমরা সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করার আহ্বান জানাই।’

একই ধরনের দাবি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। তিনি বলেন, ‘বিগত দেড় দশকে ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ভয় ও সন্ত্রাসের রাজত্ব এমনভাবে কায়েম করেছিল যে, সামগ্রিক ছাত্র রাজনীতিকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি তারা সম্পৃক্ত ছিল। এখন গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজন মিলে ছাত্রলীগের রাজনীতির ব্যাপারে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। আমরা মনে করি, নৈতিকভাবে ছাত্রলীগ রাজনীতি করার সব সুযোগ হারিয়ে ফেলেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আর কখনই তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেবে না।’

সূত্র- দেশ রুপান্তর

সীমান্তে হিন্দু-মুসলমান নয়, বাংলাদেশি হিসেবেই গুলি করে হত্যা করা হয়: রিজভী

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে সরব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট সময় ০১:১১:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা ১৬ বছরের শাসনকালে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত ছিল দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। প্রায়ই গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হতো সংগঠনটি। বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যাসহ নিপীড়ন-নির্যাতনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি গুলিও চালাতে দেখা যায় তাদের। যাতে শতাধিক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর উঠে এসেছে। এ অপরাধে অনেকে গ্রেপ্তারও হচ্ছেন।

গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়ে ৩০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর থেকেই তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এরপরও ৪ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তবে ৫ আগস্ট থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এসব নেতাকর্মী। বিভিন্ন সময় যারা শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করেছে তাদের ছবিসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ব্যানার টানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। যেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে ক্লাস-পরীক্ষায় বসতে চান না সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, গত ১৬ বছর ধরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা যেভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, নির্যাতন চালিয়েছে এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ভূমিকা রেখেছে, তাদের আর রাজনীতি করার অধিকার নেই। সামগ্রিক ছাত্র রাজনীতিকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি তারা সম্পৃক্ত ছিল। সংগঠন হিসেবে নৈতিকভাবে ছাত্রলীগ রাজনীতি করার সব সুযোগ হারিয়ে ফেলেছে। গণহত্যাকারীদের সহযোগী ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি এবং যৌক্তিক সময়। নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মেও তাদের নিষিদ্ধের দাবি তোলা হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রনেতারা।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, ‘গত দেড় দশকে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য তৈরি করা, গণরুম গেস্টরুমের নামে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন, নারী শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলা, বুয়েটের আবরার ফাহাদকে হত্যা করে যারা উল্লাস প্রকাশ করেছে এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফ্যাসিবাদের দোসর, গণহত্যাকারীদের সহযোগী ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি এবং যৌক্তিক সময়। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ মনে করছে যাদের হাতে রক্ত লেগে আছে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে পথ চলতে পারে না, ক্লাস করতে পারে না। সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

একই ধরনের মত দেন ঢাবি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরহাদ। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ গত ১৬ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের ওপর যে পরিমাণ নির্যাতন চালিয়েছে, যেভাবে তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রকাশ্যে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর যারা গুলি চালাতে পারে, তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। শিক্ষার্থী তাদের আর কখনো মেনেও নেবে না। প্রশাসনের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের আইনের মুখোমুখি করা এবং সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। তারা কোনোভাবেই বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না।’

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তিনটি গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। ৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে এক রকম রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়েছে। আবার নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনের পর আরেক ধরনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়েছে গণ-আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে। চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটেছে। আর এই দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে মাঠপর্যায়ে ছাত্রলীগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যারা হামলা চালিয়েছে এবং বিগত সময়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনকে টিকিয়ে রাখতে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নিপীড়ন চালিয়েছে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি ভিন্ন সংগঠনের নামে তারা যাতে পুনর্বাসিত হতে না পারে সে বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে।’

পরিবেশ পরিষদের সভা (ঢাবি পরিচালিত ছাত্রসংগঠনগুলোর প্ল্যাটফর্ম) ডেকে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা। তিনি বলেন, ‘ছাত্র ইউনিয়ন সবসময় ক্যাম্পাসে স্বাধীনতাবিরোধী, সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি করে এসেছে। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর ছাত্রলীগের রাজনীতি কার্যতই বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত সময়ের ভেতরে পরিবেশ পরিষদের সভা আহ্বান করতে বলেছি। ছাত্রলীগকে যদি নিষিদ্ধ করতে হয় তবে পরিবেশ পরিষদ সভায় সব ছাত্র সংগঠনের ঐকমত্য জরুরি। আমরা সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করার আহ্বান জানাই।’

একই ধরনের দাবি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। তিনি বলেন, ‘বিগত দেড় দশকে ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ভয় ও সন্ত্রাসের রাজত্ব এমনভাবে কায়েম করেছিল যে, সামগ্রিক ছাত্র রাজনীতিকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি তারা সম্পৃক্ত ছিল। এখন গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজন মিলে ছাত্রলীগের রাজনীতির ব্যাপারে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। আমরা মনে করি, নৈতিকভাবে ছাত্রলীগ রাজনীতি করার সব সুযোগ হারিয়ে ফেলেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আর কখনই তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেবে না।’

সূত্র- দেশ রুপান্তর