ক্যাম্পাসে নবীনদের স্বাগত জানিয়ে বার্তা দিলেন ঢাবি শিবির সভাপতি আবু সাদিক কায়েম।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সাদিক কায়েম তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি পোস্ট দেন। ঢাকাভয়েস পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো:
প্রাণের ক্যাম্পাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩ তম ব্যাচের প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, জ্ঞানের এই বৃহত্তর আঙিনায় তোমাদের জানাই আহলান-সাহলান।
আল্লাহর অশেষ রহমতে কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও যোগ্যতার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছো তোমরা। তোমাদের জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন। তোমাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের এই প্রাণের ক্যাম্পাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের (পূর্ব বাংলার) মেজরিটি মেহনতি ও মজলুম মানুষের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। সেই স্বপ্নের অংশ এখন তোমরাও। আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি বাঁক বদলের স্বাক্ষী এ ক্যাম্পাসের কার্জন, বটতলা, শ্যাডো, ডাকসু, টিএসসি থেকে সেন্ট্রাল লাইব্রেরি কিংবা পলাশী থেকে সেন্ট্রাল মসজিদের অভিজ্ঞতায় সিক্ত হতে চলা তোমাদের জীবনের এই অধ্যায়টি মসৃণ ও সৃজনশীল হবে বলে দোয়া করছি।
স্নেহাশিস নবীন শিক্ষার্থীরা,
তোমাদের উপর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা দায়বদ্ধতা রয়েছে। প্রতিটি সুন্দর ও স্বপ্নীল আকাঙ্ক্ষা পূরণে তোমরা অগ্রগামী হবে, এই প্রত্যাশা রাখছি। খেয়াল রাখবে, কিছুতেই যেন ভেস্তে না যায় নিজেকে প্রমাণ করার এই শ্রেষ্ঠ সুযোগ।
তোমরা প্রত্যেকেই ইতোমধ্যে পরিক্ষিত। তোমাদের মাঝেই রয়েছে সুপ্ত প্রতিভা আর অজস্র সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নিজের সুপ্ত প্রতিভার যথার্থ বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তোমাকে দিবে অবারিত সুযোগ। বিতর্ক, সাহিত্য, গবেষণা, প্রযুক্তি ও খেলাধুলাসহ বহুমুখী সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেকে অধিকতর যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য রয়েছে দারুণ সব আয়োজন। তবে মনে রাখবে— ফার্স্ট প্রায়োরিটি হবে পড়াশোনা৷ এক্ষেত্রে যেন কোনোপ্রকার ব্যাঘাত না ঘটে।
লক্ষ রেখো, আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয় চলছে উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্ত সবার ট্যাক্সের অর্থায়নে। আমাদেরকে নিয়ে দেশবাসী অনেক স্বপ্ন বুনে। আমরা যেন সেই স্বপ্নের খেয়ানত না করি৷ জুলাই বিপ্লবের অংশ হিসাবে জাতির সামনে যে স্বপ্নের বাংলাদেশ হাজির করতে তোমরা সক্ষম হয়েছো, তা সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক নাগরিক হয়ে তোমাদেরই বাস্তবায়ন করতে হবে। তোমাদের কাঁধেই আমাদের দেশ— সেই কাঁধ যেন বিশ্বস্ত হয়ে প্রস্তুত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে রাজধানীর সুপ্রসিদ্ধ কোনো প্রতিষ্ঠানের একজন উচ্চবিত্ত শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সীমান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন কৃষক কিংবা দিনমজুরের সন্তান, সকলকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় ধারণ করে । এমন বৈচিত্র্য আমাদের নতুনের সাথে পরিচয় করায়, জানার পথকে করে উন্মুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় দেখা হবে বিভিন্ন চিন্তার মানুষের সাথে, বৈচিত্র্যময় সব মতের অভিজ্ঞতা তোমাকে করবে আরো সমৃদ্ধ। ব্যক্তিগত চিন্তার বাইরে অন্যের মতামত বা দর্শনকে শুনতে পারার যোগ্যতা, তোমার চিন্তার দিগন্তে এনে দিতে পারে নতুন আলো।
বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত জ্ঞানচর্চার জায়গা- এই দর্শনটা ধারণ করবে। সুপিরিওরিটি বা ইনফেরিওরটি কমপ্লেক্স যেন গ্রাস করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ইতিবাচক সবার সাথে নিজেকে শামিল করতে হবে দ্বিধাহীনভাবে।
আমাদের আগামী দিন হোক ফুলের মতো সুবাসিত, নদীর মতো বাধাহীন, সূর্যের মতো তেজোদ্দীপ্ত। আল্লাহ আমাদের তাঁর অভিভাবকত্বের চাদরে আবৃত করুন। আমিন।