ঢাকা ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না: ওয়াকার-উজ-জামান

সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না: ওয়াকার-উজ-জামান

‘যাই হোক না কেন’ অন্তবর্তী সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না জানিয়ে তিনি বলেছেন, আগামী দেড় বছরের মধ্যে দেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ হতে হবে।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং তার সৈন্যরা আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ থামাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যার ফলে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারত পালাতে বাধ্য হন।

ওয়াকার-উজ-জামান সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় তার কার্যালয়ে রয়টার্সকে বলেন, নোবেলজয়ী মুহাম্মাদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এসময় সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার ইচ্ছার কথা জানান বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। বিরল এই সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বলেন, ‘যাই হোক না কেন আমি তার ( মুহাম্মদ ইউনূস) পাশে দাঁড়াব, যাতে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।’

বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৭ কোটি মানুষের দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগেই সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান ওয়াকার-উজ-জামান। তার মতে, গণতন্ত্রে একটি উত্তরণ এক বছর থেকে দেড় বছরের মধ্যে করা উচিত। এসময় তিনি ধৈর্য ধারণ করার প্রতিও জোর দেন। সেনাপ্রধান বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলব যে সময়সীমার মাধ্যমে আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।’

বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, উভয়ই আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রতি সপ্তাহেই সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি তাহলে ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান ভেঙে সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালে দেশটি প্রথমবারের সামরিক শাসনের অধীনে আসে। এরপর ১৯৯০ সালে দেশের সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন, যার ফলে গণতন্ত্র ফিরে আসে।

এরপর ২০০৭ সালে সামরিক বাহিনী আবার একটি অভ্যুত্থান ঘটায় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন জানায়। দুই বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত ওই সরকার শাসন করেছিল। দীর্ঘ কর্মজীবনে একজন পদাতিক অফিসার হিসেবে এই অশান্তির সময়গুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন জেনারেল ওয়াকার। তিনি বলেন, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।

বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি এমন কিছু করব না যা আমার সংস্থার (সেনাবাহিনী) জন্য ক্ষতিকর হয়। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষ এরাতে সেনা মোতায়েন

সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না: ওয়াকার-উজ-জামান

আপডেট সময় ০৪:৩০:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘যাই হোক না কেন’ অন্তবর্তী সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না জানিয়ে তিনি বলেছেন, আগামী দেড় বছরের মধ্যে দেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ হতে হবে।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং তার সৈন্যরা আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ থামাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যার ফলে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারত পালাতে বাধ্য হন।

ওয়াকার-উজ-জামান সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় তার কার্যালয়ে রয়টার্সকে বলেন, নোবেলজয়ী মুহাম্মাদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এসময় সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার ইচ্ছার কথা জানান বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। বিরল এই সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বলেন, ‘যাই হোক না কেন আমি তার ( মুহাম্মদ ইউনূস) পাশে দাঁড়াব, যাতে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।’

বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৭ কোটি মানুষের দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগেই সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান ওয়াকার-উজ-জামান। তার মতে, গণতন্ত্রে একটি উত্তরণ এক বছর থেকে দেড় বছরের মধ্যে করা উচিত। এসময় তিনি ধৈর্য ধারণ করার প্রতিও জোর দেন। সেনাপ্রধান বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলব যে সময়সীমার মাধ্যমে আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।’

বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, উভয়ই আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রতি সপ্তাহেই সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি তাহলে ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান ভেঙে সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালে দেশটি প্রথমবারের সামরিক শাসনের অধীনে আসে। এরপর ১৯৯০ সালে দেশের সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন, যার ফলে গণতন্ত্র ফিরে আসে।

এরপর ২০০৭ সালে সামরিক বাহিনী আবার একটি অভ্যুত্থান ঘটায় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন জানায়। দুই বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত ওই সরকার শাসন করেছিল। দীর্ঘ কর্মজীবনে একজন পদাতিক অফিসার হিসেবে এই অশান্তির সময়গুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন জেনারেল ওয়াকার। তিনি বলেন, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।

বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি এমন কিছু করব না যা আমার সংস্থার (সেনাবাহিনী) জন্য ক্ষতিকর হয়। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।