ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত লেখক ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেফতারের পর নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। তিনি লেখক, সাংবাদিক, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে পরিচিত হলেও, তাকে অনেকেই ‘মুরগী কবির’ বলে সম্বোধন করেন। অনেকেই বলেন, তিনি পাক সেনাদের মুরগি সরবরাহ করতেন।
বিশেষত, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও তার বক্তব্যেও বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শাহরিয়ার কবির পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিকট মুরগি সাপ্লাই করতেন।’ এই কারণেই উক্তিটি করা হয় ‘মুরগী কবির’ নামটি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মুরগি সরবরাহের বিষয়টি কতটুকু সত্য?
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাবেক আহ্বায়ক মুশতারী শফী লিখিত ‘জাহানারা ইমামের স্মৃতির উদ্দেশ্যে লেখা চিঠি’ নামক বইয়ে শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি এবং মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের ক্যাম্পে মুরগি সরবরাহকারী বলে উল্লেখ করা হয়। শাহরিয়ার কবির এই লেখাটি সত্য নয় ও নির্জলা মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেন।
এদিকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী শাহরিয়ার কবিরের জেরা করা হয়।
মুজাহিদের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাকে প্রশ্ন করেন, ‘‘যেহেতু বেগম মোস্তারি শফির ‘শহিদ জননী জাহানারা ইমামের স্মৃতির উদ্দেশ্যে চিঠি’ বইয়ে আপনার সম্পর্কে বলা হয়েছে আপনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি বরং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে মুরগি সরবরাহ করেছেন। এ কথাটি জেনেই আপনি তার বইটি পড়ার কথা অস্বীকার করছেন।’’ জবাবে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘এটা একটি নির্জলা মিথ্যা।’
আইনজীবী মিজানুল ইসলাম শাহরিয়ার কবিরকে প্রশ্ন করেন, ‘মোস্তারি শফিকে আপনি চেনেন কি না?’ উত্তরে সাক্ষী বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি চিনি।’ এরপর শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘মোস্তারি শফি ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমামের স্মৃতির উদ্দেশ্যে চিঠি’ নামক বইটি লিখেছেন কি না তা আমার জানা নেই।’’
মোস্তারি শফিকে স্বাধীনতাবিরোধী বলবেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘অনেক মুক্তিযোদ্ধাই জামায়াতে যোগদান করেছেন।’
আইনজীবী বলেন, ‘যেহেতু মোস্তারি শফির বইয়ে আপনার সম্পর্কে বলা হয়েছে আপনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি বরং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে মুরগি সরবরাহ করেছেন।’ এ কথাটি জেনেশুনেই আপনি তার বইটি পড়ার কথা অস্বীকার করছেন। আইনজীবীর এ প্রশ্নের উত্তরের তিনি বলেন, ‘এটা একটি নির্জলা মিথ্যা।’
এ সময় শাহরিয়ার কবির আরো বলেন, ‘১৯৯৫ সালে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি থেকে মোস্তারি শফিসহ ১১ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারের আগে মোস্তারি শফি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।’
বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া এই লেখক একজন শিশুসাহিত্যিক। তিনি দীর্ঘদিন থেকে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যক্রম নিয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন। ১৯৯৪ সালে শহিদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর তিনি কমিটির সভাপতি হন। ২০২৪ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাকে উপদেষ্টা মণ্ডলীর সভাপতি করা হয়। সূত্র: উইকিপিডিয়া ও অন্তর্জাল।