নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মধ্য ও অল্প আয়ের মানুষ। এ কারণে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুরগি ও ডিমের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু, সেই দামে পাওয়া যাচ্ছে না মুরগি ও ডিম। বরং, মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে, নাকি খামারি বা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে দাম বাড়ছে, তা তারা জানেন না। তারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনেছেন আর সামান্য লাভে বিক্রি করছেন।
অপরদিকে, ক্রেতারা বলছেন, বিক্রেতারা যদি সরকার নির্ধারিত দাম না মানে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? তারা কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রায়েবাগ, কাপ্তান বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার ১৫ সেপ্টম্বর উৎপাদক, পাইকারি ও ভোক্তা (খুচরা) পর্যায়ে ডিম, সোনালী মুরগি ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেঁধে দিলেও সে দামে ডিম ও মুরগি মিলছে না। এমনকি, সরকার দাম বেঁধে দেওয়ার পর ডিমের দাম ডজনপ্রতি গতকালের চেয়ে ৫ টাকা বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে একটি ডিমের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সায়। কোথাও কোথাও ১৪ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এক হালি (চারটি) ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। এক ডজন (১২টি) ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮৫ থেকে ১৯৫ টাকায়। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৫ থেকে ১৫ টাকা বেশিতে কিনতে হচ্ছ। সোনালী মুরগি কেজিপ্রতি ২৬৫ থেকে ২৭৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
ডিমের দামের বিষয়ে রায়েরবাগের ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, রোববার এক ডজন ডিম ১৫৫ টাকায় কিনে ১৬০ টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু, ডিমের দাম আরও বেড়েছে। আজ ডজন ১৬১ টাকায় কিনে ১৬৫ টাকায় বিক্রি করছি। এটুকু লাভ না করলে আমরা সংসার চালাবো কীভাবে?
সরকার ডিমের যে দাম নির্ধারণ করেছে, তাতে এক ডজন ডিম ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সায় পাওয়ার কথা। আপনারা বেশি দামে কেন বিক্রি করছেন? জানতে চাইলে কাপ্তান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী রেফায়েত হোসেন বলেন, আমরা ডজনে ৪ থেকে ৫ টাকা লাভ করি। যেভাবে কিনি, সেভাবে বিক্রি করি। যারা বড় ব্যবসায়ী, তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, সরকারকে শুধু দাম নির্ধারণ করে দিলেই হবে না, প্রতিদিন বাজারে মনিটরিং করতে হবে। ডিম-মুরগির দাম খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়ান না। দাম বাড়ায়-কমায় বড় বড় ব্যবসায়ীরা। আমরা সামান্য লাভে ছেড়ে দিই। কম দামে কিনলে কম দামে বিক্রি করি।
কাপ্তান বাজারে ডিম কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, খবরে দেখলাম, ডিমের দাম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ বাজারে এসে দেখি উল্টো চিত্র। সরকারের সাথে চ্যালেঞ্জ করে বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আজ ৫৫ টাকা হালি ডিম কিনেছি। প্রতিটি ডিম ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ প্রতিটি ডিমে ২ টাকা বেশি নিচ্ছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারও পণ্যের দাম নিয়ে মুখরোচক কথা বলত। কিন্তু, বাজার মনিটরিং না করায় জনগণ বাড়তি দামে সবকিছু কিনতে বাধ্য হতো। ছাত্র-জনতার এই সরকারের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। জনগণ চায়, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখবে সরকার।