সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সহকর্মীদের উস্কানি দিয়ে পুলিশ বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় পুলিশের দুই সদস্যের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেনের আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
সাইবার নিরাপত্তা আইনে শাহজাহানপুর থানায় দায়ের করা এ মামলার আসামিরা হলেন, যশোর পুলিশ লাইনের কন্সটেবল শোয়াইবুর রহমান (৩২) ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনের কন্সটেবল সজিব সরকার (২৭)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. খায়রুল ইসলাম আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড শুনানিতে আসামিরা অভিযোগ করেন, স্বাধীন পুলিশ কমিশন চেয়ে ফেসবুকে লাইভ করার জন্যই তাদের এ মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আসামিদের যখন আদালতে তোলা হয়, তখন তারা চিৎকার করে বলেন যে, আমাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে আদালতে আনা হয়েছে। আমরা কাউকে খুন করিনি, কাউকে গুলি করিনি। স্বাধীন পুলিশ কমিশন চেয়েছি, এটাই আমাদের অপরাধ।
তাদের কাঠগড়ায় তোলার পর তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। সেখানে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে বিভিন্ন শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা-ঘৃণা সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টসহ জনসাধারণের সেবা বাধাগ্রস্ত ও বিনষ্ট করার জন্য ফেসবুকে উস্কানিমূলক বার্তা পোস্ট করেছেন। তা জনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কাজে বা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সুবিধার্থে ব্যবহার হতে পারে। এ ঘটনার সঙ্গে আর কে বা কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করা দরকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের বিষয় ছড়িয়ে দেওয়ার মাস্টার মাইন্ড কে বা কারা? পুলিশ বাহিনীর মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে অরাজকতা বা বিশৃঙ্খল সৃষ্টির কারণ উদঘাটন ও অর্থদাতাদের খুঁজে বের করা প্রয়োজন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদেরকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার এবং শনাক্ত করার জন্য আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানিকালে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আসামিরা আদালতে বলেন, ডিউটিরত অবস্থায় আমাদের ডেকে এনে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরিবারে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি।
তারা বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বিকেল থেকে সিনিয়র অফিসাররা আমাদের রাজারবাগ পুলিশ লাইনে রেখে পালিয়ে যান। আমরা রাজারবাগ পুলিশ লাইনের হেফাজত করেছি। কোটা আন্দোলনের সময় আমাদের অনেক সহকর্মী মারা গেছেন। কেন মারা গেছেন? আমাদের অফিসাররা সরকারের দালালি করতে গিয়ে আমাদের জনগণের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়ায় তাদের মরতে হয়েছে। তাই, আমরা ৫ আগস্টের পর একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন চেয়ে ফেসবুকে কথা বলেছি। এটাই আমাদের অপরাধ। আমদের মুখ বন্ধ করার জন্য ডেকে এনে এ মামলা দিয়েছে। স্বাধীন পুলিশ কমিশন চাওয়া কি আমাদের অপরাধ?
বিচারক বলেন, আপনারা অভিযোগ করেছেন, পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। এখনই মোবাইল ফোনে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন, মামলা সম্পর্কে জানান।
তখন একজন পুলিশ সদস্যের মোবাইল দিয়ে তারা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর একজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল করে তাদের জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।