অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাসের কর্মকাণ্ডের প্রাথমিক মূল্যায়ন করেছে বিএনপি। তাতে আইন, বিচার বিভাগসহ সরকারের নেওয়া অনেক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপে দলটি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার শুরু না হওয়া এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ (রূপরেখা) না আসায় দলটি মনঃক্ষুণ্ন। এ ছাড়া প্রশাসনের উচ্চ পদে রদবদলে কোনো কোনো উপদেষ্টার কার্যক্রম নিয়ে তাদের প্রশ্ন আছে। তারা মনে করছে, বিগত সরকারের সহযোগী ও আশীর্বাদপুষ্টদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হচ্ছে বা নিয়োগ পাচ্ছেন।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এই মূল্যায়ন উঠে আসে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে সভায় ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন। তিনি সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, সরকার গত এক মাসে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের অগ্রাধিকার দেখা যাচ্ছে না। তা ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত সাড়ে ১৫ বছরে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠান যেভাবে ধ্বংস করেছে, তা পুনর্গঠনে যেভাবে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন, তা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। বরং ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংস্কারে কাজ বেশি হচ্ছে।
সভায় উপস্থিত দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের আগামী দিনের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করবে। পাশাপাশি আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তারেক রহমান। সেখানে তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের ভোটাধিকার, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেন। ওই সূত্র জানায়, তারেক রহমানের এই বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির নেতারা একমত পোষণ করেন।
সভায় রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে শিগগিরই কর্মসূচি শুরুর বিষয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকেও মাঠে সক্রিয় করবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক চলছে।
১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ঢাকায় সমাবেশ ও শোভাযাত্রা, ১৪ সেপ্টেম্বর গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এই কর্মসূচি সামনে রেখে মঙ্গলবার গুলশানের কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন তারেক রহমান। এই বৈঠকে দুই দিনের কর্মসূচি সফল করতে স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে প্রধান করে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বড় জমায়েত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দলটি।
সভায় ঢাকার বাইরে সফরের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গত রোববার জেলা প্রশাসকদের কাছে দেওয়া চিঠি নিয়ে আলোচনা হয়। চিঠিটি বৈঠকে পড়ে শোনানো হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ড নিয়েও স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। সভায় কয়েকজন নেতা জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে কথা তোলেন। সামনের দিকে জামায়াত কী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তা পর্যবেক্ষণে রেখে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করার ওপর জোর দিয়েছেন কেউ কেউ।