ছোট পর্দার অভিনেতা খায়রুল বাসার। যিনি টেলিভিশন নাটক, ওয়েব সিরিজে অভিনয় করে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি বিভিন্ন চরিত্রে বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিনয়ের জন্য সমাদৃত হয়েছেন। খায়রুল বাসার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন। যেখানে সমসাময়িক বিষয় থেকে শুরু করে শিল্পী সংগঠন ও শিল্পীদের নিয়ে কথা বলেছেন। আরও বলেছেন যে অভিনয়শিল্পীরা হবে শান্তির দূত, ধ্বংসের দূত নয়।
পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা পর্দায় অভিনয় করি, অভিনয়টা একটা শিল্প। এটা একটা পেশা। সকলের পেশাই তাদের জন্য সম্মানের। কিন্তু এই পেশা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এখনো আসেনি। ‘কি করেন?’ প্রশ্নের উত্তরে যদি আমরা বলি অভিনয় করি তাহলে পালটা প্রশ্ন আসে ‘আর কি করেন? না, আর কিছু করতে হবে কেনো? এটাও একটা পেশা। অন্যান্য পেশার মতোই একটা পেশা। পেশাদার হওয়া শিখতে হবে আমাদের, আমাদের অরাজনৈতিক হতে শিখতে হবে। একটা শিল্পী সংগঠন কখনো পলিটিক্যাল পাপেট হতে পারেনা। অভিনয়শিল্পীদেরও অনেক ধরনের ক্রাইসিস আছে। তাদের স্বার্থ, মর্যাদা এবং অধিকার নিশ্চিত করা তখনই সম্ভব যখন সকল পর্দার অভিনয়শিল্পীরা একটিমাত্র সংগঠন এর অন্তর্ভুক্ত হবে। আর তখনি পুরো সিস্টেমটা পুনর্গঠন করা সম্ভব।’
অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন বাংলাদেশের একমাত্র কাস্টিং হবে উল্লেখ করে বলেন, ‘রিফর্মেশন একটা পজিটিভ আইডিয়া। একটা মতাদর্শ। পারস্পরিক সম্মান চর্চার মাধ্যমে এর শুরু করতে হয়। অহিংসতা হল একমাত্র ওয়ে এমন ন্যাশনাল ক্রাইসিস এ রিফর্মেশন করার জন্য। এতদিন যারা ছিল তারা কেউ থাকবেনা, একে বাদ দাও, ওর সাথে কাজ করবো না এমন নয়। এটা যার সাথে যার হবে সেটা ব্যক্তিগত। অভিনয়শিল্পীরা অভিনয় করবেন। এটাই তো কাজ। আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি তাতে অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন হবে বাংলাদেশের একমাত্র কাস্টিং হাব। যেখানে দেশের সকল স্ক্রিন অ্যাক্টররা লিস্টেড থাকবেন তাদের স্কিল এবং ক্যাপাবিলিটি অনুযায়ী। অভিনয়শিল্পীরা নিশ্চিন্তে ক্যারেক্টার এর প্রিপারেশন নেবেন, সুন্দর পরিবেশে নিরাপদ ভাবে শুটিং করবেন।’
সংগঠন রিফর্মের বিষয়ে এ অভিনেতার ভাষ্য, ‘লাইফ এবং হেলথ ইন্স্যুরেন্স থাকবে, প্রভিডেন্ট ফান্ড, রিটায়ারমেন্ট ফান্ড থাকবে, আর্থিক নিরাপত্তা থাকবে। কর্মসংস্থান এর নিশ্চয়তা থাকবে, কাস্টিং উইং, পি আর উইং থাকবে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে অ্যাক্টর্স ক্যাম্প হবে। বিভিন্ন রকম স্কিল এবং নলেজ ডেভেলপমেন্ট কোর্স থাকবে, স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা থাকবে। লিগ্যাল সাপোর্ট থাকবে। যুগোপযোগীভাবে সংগঠন এর পুরো সিস্টেমটাকে এভাবে রিফর্ম করলেই, একটি শিল্পী সংগঠন শিল্পীদের আস্থার জায়গা হয়ে উঠতে পারে। কারণ এই সংগঠন দ্বারা তার সকল পেশাদারি স্বার্থ, মর্যাদা এবং অধিকার নিশ্চিত হবে।’
‘রিফর্মেশন মানেই একদল খেয়ে গেল আর একদল এসে খেতে বসবে এমন নয়। ফ্যাসিস্ট সরাতে গিয়ে নিজেই ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার চান্স বেশি থাকে, এই চর্চা বন্ধ হোক। সিস্টেম এর রিফর্মেশন এর পাশাপাশি আমরা নিজেরদেরও রিফর্মেশন চাচ্ছি। সেল্ফ রিফর্মেশন যেটাকে বলে। অভিনয়শিল্পীরা তো হবে শান্তির দূত, ধ্বংসের দূত নয়। কারণ তারা শিল্পী। শিল্পীদের সার্বজনীন হতে হয়।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমরা মন থেকে সৎভাবে চাই অভিনয়শিল্পীরা যেন গর্ব করে মাথা উঁচু করে বলতে পারেন তিনি অভিনয়শিল্পী। এটাই তার পেশা। এবং তাদের পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন সবাই যেন এই পেশাটাকে সম্মান করে। পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে গ্লোবাল করার জন্য পারস্পরিক সম্মান চর্চার মাধ্যমে একটি শক্ত ঐক্য তৈরি করা নিকট ভবিষ্যতের জন্য খুবই প্রয়োজন। সারা দেশে যেভাবে একই রকম সিচুয়েশন এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে তার একটাই কারণ, সেটা হল গত ৫৩ বছর ধরে দেশে শুধু প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা এবং ঘৃণার চর্চা হয়েছে। যদি সত্যিই একটা সুন্দর দেশ গড়তে চাই আমরা তাহলে সবাই মিলে সত্য, সুন্দর আর ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সম্মান এর চর্চা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা এই চর্চাটাই করতে চাই।’
পোস্টের শেষে অভিনেতার ভাষ্য, ‘আমাদের অভিনয়শিল্পীরা অনেক বেশি পরিশ্রমী এবং মেধাবী। শুধু একটা প্রপার স্ট্রাকচার দরকার। আমরা এই দিনটা আনতে চাই , যেদিন থেকে সকল অভিনয়শিল্পীদের দেশ এবং সারা পৃথিবীতে সম্মানের সাথে বিবেচনা করা হবে। আমরা এমন একটা সংগঠন গড়তে চাই যেটা সকল অভিনয়শিল্পীদের জন্য হবে। যেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবেনা। এটা একসময় ছিলও এবং এটাই থাকার কথা। এটা ধীরে ধীরে পলিটিক্যাল ইন্টেনশনে নষ্ট হয়েছে। যেমন নষ্ট হয়েছে বটতলার নিচে বাউল গান, পালা গান বা পুথি পাঠ। এমন ভাবে সংগঠনকে গড়তে হবে যেন দেশের সকল স্থান থেকেই শিল্পীরা তৈরি হওয়ার সুযোগ পায়। আমরা এই স্বপ্ন দেখছি। তাই এই মুহূর্তে সকল অভিনয়শিল্পীদের এক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আর ডিভাইড এবং রুল গেম এর মধ্যে শিল্পীদের পেঁচিয়ে যাওয়া ঠিক হবেনা। প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে অভিনয়কে একটি সম্মানজনক এবং নিরাপদ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো আমরা।’