আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর
নয়াদিগন্ত:
ভারতের প্রয়োজনে বিদ্যুৎ করিডোর বাংলাদেশের ঋণে
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের অন্য অংশে বিদ্যুৎ নিতে ৭৬৫ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে চায় নয়াদিল্লি। আর এ সঞ্চালন লাইন নির্মাণে কারিগরি এ আর্থিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সঞ্চালন প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিডের কোনো প্রয়োজন না হলেও ভারতের স্বার্থ রক্ষায় একতরফাভাবে পাওয়ার গ্রিডের মাধ্যমে কাজ করার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতের প্রয়োজনে বাংলাদেশ অংশে সঞ্চালন লাইন স্থাপনে বাংলাদেশের ওপর ছয় হাজার থেকে সাত হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা চাপবে। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের শেষ সময়ে ১৮ থেকে ২১ জুলাই ভারতে অনুষ্ঠিত এ-সংক্রান্ত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সভায় এককভাবে সম্মতি দিয়ে এসেছেন খোদ বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ভারতের প্রয়োজনে ভারতের বরনগর হতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পার্বতীপুর হয়ে ভারতের অপর অংশ কাতিহারে ৭৬৫ কেভি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করার উদ্যোগ নেয় নয়াদিল্লি। ২০১৬ সালে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কারিগরি ও আর্থিক বিবেচনায় এ সঞ্চালন লাইন স্থাপনে বাংলাদেশের কোনোই প্রয়োজন নেই। কারণ আদানি থেকে প্রায় এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এ জন্য আলাদা আলাদা সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে আলাদা আরেকটি সঞ্চালন লাইন স্থাপনের তেমন কোনোই প্রয়োজন নেই। আর এ কারণে বাংলাদেশ থেকে এ সঞ্চালন লাইন স্থাপনে কালক্ষেপণ করা হচ্ছিল।
প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল এ সঞ্চালন লাইনের কাজ ভারত নিজেই করবে। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশ ভারত যৌথ কোম্পানি গঠন করে ওই কোম্পানির মাধ্যমে এ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। গত ২০২৩ সালের মে মাসে বাংলাদেশ-ভারতের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত দুই দেশের বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতাসংক্রান্ত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির ২১তম এ সভা অনুষ্ঠিত হয় খুলনায়। ওই সময় সিদ্ধান্ত হয়, দুই দেশের সঞ্চালন কোম্পানির অংশীদারিত্বে একটি যৌথ বিদ্যুৎ সঞ্চালন কোম্পানি গঠিত হবে। তারা ভারতের কাতিহার থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর হয়ে আবার দেশটির বরানগর পর্যন্ত ৭৬৫ কেভির (কিলোভোল্ট) বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চাহিদা না থাকায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছে না দেশটি। বিদ্যুৎ করিডোর পেলে ভারতের এ অংশের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অপর অংশে নেয়া সহজ হবে। তাই দেশটি দীর্ঘ দিন ধরে এ বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিদ্যুৎ মূলত নদীতে বাঁধ দিয়ে উৎপাদন করা হবে, যাতে ভাটির দেশ বাংলাদেশে পানির প্রবাহ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু কর্মকর্তা ভারতের স্বার্থ রক্ষার জন্য বরাবরই মরিয়া ছিলেন। বিদ্যুৎ সিস্টেমকে ধ্বংস করার এজেন্ডা বাস্তবায়নের সব সময়ই সোচ্চার ছিলেন তারা। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী। তাকে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবে জনপ্রশাসন থেকে আদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি বহাল তবিয়তেই বিদ্যুৎ বিভাগে পড়ে রয়েছেন। এর আগেও তাকে এনআইডি প্রকল্পের ডিজি করা হয়েছিল। তিনি নানাজনের কাছে তদবির করে জনপ্রশাসনের এ আদেশ বাতিল করেছিলেন।
প্রথম আলো:
ভারতের সঙ্গে কথা হবে চোখে চোখ রেখে
আগামীর বাংলাদেশ জনগণের মতামতের ভিত্তিতে চলবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বেশি কিছু চায় না। মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের মতপ্রকাশ করতে চায়। তাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে সুখে–শান্তিতে বসবাস করতে চায়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠের মুক্তমঞ্চে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আসিফ মাহমুদ এ কথাগুলো বলেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতকে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কথা বলতে হবে
উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সঙ্গে এ দেশের মানুষের কথা হবে চোখে চোখ রেখে। কথা হবে মাথা উঁচু করে। বাংলাদেশের মানুষকে কথা বলতে হবে সম্মান দিয়ে। ভারত এত দিন একটি দলের সঙ্গে কথা বলেছে; কিন্তু এখন আর তা হবে না। ভারতকে এখন কথা বলতে হবে এদেশের জনগণের সঙ্গে। বাংলাদেশকে পেছনে ফেলার যে প্র্যাকটিস (চর্চা) তারা এত দিন ধরে করে এসেছে, সেখান থেকে সরে আসতে হবে।’
‘দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ সভার আয়োজন করে। একই কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল নারায়ণগঞ্জ, রাঙামাটি, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, মেহেরপুর, পটুয়াখালী, পাবনা ও কুড়িগ্রামে মতবিনিময় করেছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কেরা। এই ৯ জেলায় তাঁরা আন্দোলনে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার, প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও ছাত্র-জনতার সঙ্গে সভা করেন। গত রোববার থেকে জেলায় জেলায় গিয়ে এই কর্মসূচি করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
একই সভায় আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘জনগণের মতামতের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। আমরা আপনাদের মতামত শুনতে এসেছি। আমরা সামনের বাংলাদেশের রূপরেখা সেভাবে দেব, যেভাবে দেশের মানুষ মতামত দেবে।’
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক নিয়ন মনির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক জিয়াউদ্দিন আয়ান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমন্বয়ক মাহি খান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রুবেল হোসাইন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কুমিল্লায় আসা প্রতিনিধি মাহির তাজওয়ার। কুমিল্লার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেন কাজী মহিবুর রহমান ও ইয়াসিন আরাফাত।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সভা শুরুর আগে কুমিল্লা টাউন হল মাঠের পশ্চিম দিকে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মাঠের পশ্চিম দিকের বাইরে থেকে দুর্বৃত্তরা তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করে বলে জানান কান্দিরপাড় ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) দীনেশ চন্দ্র দাশগুপ্ত।
এ ছাড়া সভার শুরুতে শিক্ষার্থীদের দুটি পক্ষের মধ্যে হট্টগোল দেখা দেয়। পরে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার মাইকে বারবার অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন।
মানবজমিন:
হঠাৎ কেন এত লোডশেডিং
হঠাৎ করে বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের অবস্থা ভয়াবহ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে। গ্যাস সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য সক্ষমতা থাকলেও প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎও মিলছে না। তাই লোডশেডিং বেড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জ্বালানি নিশ্চিত না করেই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। চাহিদাকেও বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ফলে প্রতি বছর বড় সময় অলস বসিয়ে রাখতে হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। দিতে হয়েছে অলস কেন্দ্রের ভাড়া। খরচের চাপ সামলাতে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। সরকারের দায় বেড়েছে। অথচ তিন বছর ধরে গরম বাড়লেই লোডশেডিংয়ে ভুগতে হচ্ছে মানুষকে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েও পড়েছে একই সমস্যায়। বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি নেই। ফলে বেড়েছে লোডশেডিং। সোমবার গড়ে ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন:
পাচার অর্থ ফেরতের চ্যালেঞ্জ
♦ প্রক্রিয়া শুরু, গঠিত হচ্ছে বিশেষ টাস্কফোর্স ♦ সঠিক পরিসংখ্যান তৈরি করছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ♦ আর্থিক খাত সংস্কারের ফলে কঠোর শাস্তির আওতায় আসবেন পাচারকারীরা ♦ বিগত সময়ে অন্তত ১৭ লাখ কোটি টাকা পাচার ♦ বেশি পাচার আমদানি রপ্তানির আড়ালে
বিপর্যস্ত হয়ে পড়া দেশের অর্থনীতি সচল করতে বিভিন্ন সময় পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এজন্য একটি টাস্কফোর্সও গঠন করা হচ্ছে। আমেরিকা-ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় চিঠিও দেওয়া হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ কাজের জন্য বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারকে সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছে। ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর দুই কর্মকর্তার সঙ্গে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বৈঠক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন সময় পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার এটাই মোক্ষম সময়। তাঁরা এজন্য সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আর্থিক খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে কঠোর শাস্তির আওতায় আসবেন পাচারকারীরা। পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিায়াল ইন্ট্রিগিটি (জিএফআই)-এর হিসাবে বিগত ১৫ বছরে অন্তত ১৭ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটির তথ্যমতে, ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৯২০ কোটি বা ১৪৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এতে বাংলাদেশি মুদ্রায় পাচার করা টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা ধরে)। এ হিসেবে গড়ে প্রতি বছর পাচার করা হয়েছে অন্তত ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে, তার সুফল পেতে হলে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফেরত আনতে হবে। অন্যথায় এর সুফল পাওয়া যাবে না। তবে এ প্রক্রিয়া বেশ চ্যালেঞ্জেরও। অর্থ পাচারকারীদের সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার দাবি তোলা হয়েছে সব মহলের পক্ষ থেকে। সরকার মনে করে অর্থ পাচারের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে ডলার সংকট। যা তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে। অবশ্য নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দেড় দশক ধরেই ভঙ্গুর অর্থনীতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানাবিধ টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। যার অন্যতম কারণ অর্থ পাচার। বৈশ্বিক বাণিজ্যভিত্তিক কারসাজি, হুন্ডি, চোরাচালানসহ নানা পন্থায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে ১৭ লক্ষাধিক কোটি টাকা।
কালের কন্ঠ:
বেনজীর এখন অস্ট্রেলিয়ায়
আলাদীনের চেরাগ হাতে পাওয়া দুর্নীতির রাজকুমার পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বিভিন্ন দেশ ঘুরে এখন থিতু হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, পর্তুগাল—কোথাও যেন শান্তি নেই! তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখনকার মতো অস্ট্রেলিয়ায়ই আবাস গেড়েছেন। রূপকথাকেও হার মানিয়ে দুর্নীতিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন একসময়ের অত্যন্ত পরাক্রমশালী এই পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর। প্রচার আছে, পোশাকি সৎ মানুষের আড়ালে তিনি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ঘুষের রেট বদলাতেন।
বেনজীরসবার চোখে ধুলা দিয়ে ওই টাকায় ধন-সম্পদের বিপুল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনই তাঁর এই অবৈধ ধন-সম্পদের কাল হয়ে উঠেছিল। সারা দেশে শোরগোল পড়ে যাওয়া ওই প্রতিবেদনের এক ধাক্কায় ভেঙে পড়ে দুর্নীতিবাজ বেনজীরের সম্পদের পাহাড়। গোপালগঞ্জের সাভানা পার্ক, রূপগঞ্জের বাংলো, মাদারীপুরের ফসলি জমিসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য এক ঝটকায় ক্রোক করে সরকার।
এ জন্য করা হয়েছে তদারকি কমিটি। পরে বেনজীর সব ফেলে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বাঁচেন।
সরকারের হাতে যাওয়ার পর কী অবস্থায় আছে বেনজীরের এই বিপুল বাড়ি, ফ্ল্যাট, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা? মানুষের মধ্যে এখনো এই নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। দুর্নীতির খবর চাউর হওয়ার পর বেনজীরকে গোপনে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল।
যুগান্তর:
ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ
শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পোশাকশিল্প। বিরূপ পরিস্থিতির কারণে আশুলিয়া, সাভার ও টঙ্গীতে সোমবার ১১৯টি কারখানা বন্ধ রাখা হয়। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
অন্যদিকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন বিদেশি ক্রেতারা, দিচ্ছেন না নতুন অর্ডার। সামগ্রিকভাবে পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানান শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে দেশি ও বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছে। এর মধ্যে রাজনীতিও ঢুকে পড়েছে। এ সংকট দ্রুত শক্তভাবে প্রতিহত করতে না পারলে দেশের পুরো পোশাকশিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর-আশুলিয়া অঞ্চলে অনন্ত, শারমীন, হা-মীম, স্টারলিং গ্রুপসহ ৬৮টি কারখানা স্ব-বেতনে (লিভ ইউথ পে) বন্ধ রাখে। যেসব কারখানা খোলা ছিল, এর মধ্যে ১৩টি কারখানার শ্রমিকরা কাজ না করে বেরিয়ে যান। এছাড়া ৮টি কারখানা খোলা থাকলেও শ্রমিক ও বহিরাগতরা কাজ বন্ধ করে ভেতরে বিশৃঙ্খলা করেছে। সব মিলিয়ে ১১৯টি কারখানা বন্ধ রাখা হয়।
বিকেএমইএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, তৈরি পোশাকশিল্প কঠিন সময় অতিক্রম করছে। শ্রমিক অসন্তোষের জেরে একদিকে কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারা শীত ও গ্রীষ্মের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন। রপ্তানি আদেশ যাতে অন্য দেশে চলে যায়, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টে হামলা, ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। রাস্তায় বিক্ষোভ করা হচ্ছে। এ বিক্ষোভের সঙ্গে সাধারণ শ্রমিকদের দূরতম সম্পর্কও নেই। তিনি আরও বলেন, রপ্তানিমুখী এ শিল্পকে বাঁচাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মালিকদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা, শ্রমিকনেতা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হবে।
শ্রমিকদের উদ্দেশে হাতেম বলেন, কারও প্ররোচনায় পড়ে কারখানায় ভাঙচুর চালাবেন না। শ্রমিকদের যে কোনো ন্যায্য দাবি সরকার-শ্রমিক-মালিকরা কারখানার অভ্যন্তরে বসে সমাধানে প্রস্তুত আছে। এসব দাবি কারখানাতেই সমাধান সম্ভব। রাজপথে সমাধান নেই।
বিজিএমইএ-এর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, রেমিট্যান্স ও গার্মেন্ট-এ দুটি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে পোশাকশিল্পকে ধ্বংস করতে চক্রান্ত শুরু করেছে। বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দিতে শ্রমিক অসন্তোষের পুরোনো নাটক মঞ্চস্থ করতে চাচ্ছে। এ ধরনের দুর্বৃত্তদের দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। তিনি আরও বলেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পোশাক খাতে অর্ডার কমে গেছে। বিদেশি ক্রেতারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের ভরসা দিতে সরকারের তরফ থেকে বার্তা দেওয়া উচিত।
শ্রমিকনেতারা বলছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগীরা তৈরি পোশাকশিল্পকে অস্থিতিশীল করতে ভাঙচুর চালাচ্ছে। শ্রমিক বিক্ষোভের আড়ালে তারা শিল্পকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ভাঙচুরে নিরীহ শ্রমিকরা জড়িত নন, বহিরাগতরাই এসব করছে। যেসব দাবির কথা বলা হচ্ছে, ৫ আগস্টের আগে সেসব দাবির কথা শোনা যায়নি।
দিনভর বিক্ষোভ-কারখানা ভাঙচুর : আশুলিয়া, সাভার ও টঙ্গী এলাকায় বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ নানা দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে রাস্তা অবরোধ করেন। সাভারের ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড, নাঈম নিট, ফ্যাশন ডটকম, কন্টিনেন্টাল গার্মেন্টস, মাসকট নিটওয়্যার লি. লুসাকা গ্রুপ, অরুনিমা স্পোর্টস লিমিটেড, অ্যালায়েন্স নিট কম্পোজিট লিমিটেড, মেডলার অ্যাপারেলস লিমিটেড, ইয়োগি বাংলাদেশ লিমিটেড ও পাল গার্মেন্টস লিমিটেডের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। কোথাও আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে কারখানা খোলা রাখা হয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আশুলিয়ায় বিভিন্ন কারখানার সামনে রাতেও অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি সড়কে টহল দেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএন সদস্যরা।
কালবেলা:
গণতন্ত্রের নামে গচ্চা ৮ হাজার কোটি
গণতন্ত্রের নামে গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে ৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কখনো ইভিএম ক্রয়, কখনো ব্যালট পেপার ছাপাসহ নির্বাচন পরিচালনার সার্বিক কার্যক্রমে এই অর্থ ব্যয় করা হয়। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার কথা বলা হলেও ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন মূলত শেখ হাসিনার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে একদিকে বিরোধী রাজনীতি নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে, অন্যদিকে শেখ হাসিনার শাসনকে ফ্যাসিবাদে পরিণত করার পথ প্রশস্ত করেছে। এসব নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে পরপর তিনটি নির্বাচন কমিশন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠানোর সুদূরপ্রসারী এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশই হচ্ছে নির্বাচন। যার মাধ্যমে জনগণ বিকল্প বেছে নিতে পারে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ক্ষমতাকে বৈধতা দেয়। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে সেই ক্ষমতার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই নির্বাচন শুধু আইনি বা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয় নয়; এর সঙ্গে ক্ষমতার বৈধতা, গণতন্ত্র, রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সবকিছুই জড়িত। কিন্তু গত তিনটি নির্বাচনের মাধ্যমে শুধু একটি দল বা শক্তিকে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার টিকিট নবায়ন করা হয়। যার নেতিবাচক প্রভাব দেশের অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সবক্ষেত্রেই পড়ে। সর্বোপরি এসব নির্বাচনের কারণেই সম্প্রতি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রায় এক হাজার মানুষের জীবন উৎসর্গ করতে হয়। শুধু তাই নয়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন সরকারপ্রধান। সেজন্য ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থিতি এড়াতে নির্বাচন কমিশনকে ব্যাপকভাবে সংস্কারের পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে আটবার সামরিক শাসনসহ দলীয় সরকার এবং চারবার নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। সর্বশেষ তিনটি জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে করার কারণে ১৫ বছর ধরেই বিতর্ক চলছে। এ তিনটি নির্বাচনের কোনোটিকে ‘একতরফা’, কোনোটিকে ‘রাতের ভোট’ এবং কোনোটিকে ‘ডামি’ নির্বাচন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যার মধ্য দিয়ে একটি দলকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার বৈধতা দেওয়া হয়েছে। আর সুদূরপ্রসারী এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শুধু এই তিনটি নির্বাচনেই অন্তত ৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৬৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত একতরফা নির্বাচনটি ছিল মূলত আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির। ওই নির্বাচনে ভোটের আগেই ১৫৩ প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২০১৮ সালের ভোটে প্রথমে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও পরে তা বাড়িয়ে দ্বিগুণের বেশি করা হয়। নানা প্রতিশ্রুতির পর শেখ হাসিনার অধীনে এ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী দলগুলো অংশ নিলেও সারা দেশে ভোটের আগের রাতেই বাক্সে ব্যালট ভরে রাখা হয়। এ কাজে ব্যবহার করা হয় স্থানীয় প্রশাসন ও দলীয় নেতাকর্মীদের। এ কারণে এটি ‘রাতের ভোটের নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিতি পায়। ওই নির্বাচন আয়োজনে শেষ পর্যন্ত ব্যয় করা হয় প্রায় ১ হাজার ৪৪৫ কোটি।
সমকাল:
বিএনপি হতাশ হলেও চাপে রাখতে থাকবে রাজপথে
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেন উভয় সংকটে পড়েছে বিএনপি। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘সুদিনে ফেরার পথে’ও নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে দলটি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পরিচালনায় প্রথম এক মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে হতাশ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। এ সময়ের মধ্যে সরকারের গৃহীত বেশ কিছু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্তুষ্ট নন দলটির শীর্ষ নেতারা। গত সোমবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন নেতারা। তবে আপাতত হতাশ হলেও চাপে রাখতে রাজপথে থাকার কৌশল নিয়েছে বিএনপি।
অবশ্য তার পরও ছাত্র-জনতার সমর্থনে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে প্রকাশ্যে এখনই কোনো সমালোচনা করতে চায় না দলটি। আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ সম্পাদনে সরকারকে যৌক্তিক সময় দিয়ে সহযোগিতা করার নীতিগত অবস্থানে রয়েছে। এ সরকারের নেতৃত্বে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশা ব্যক্ত করেই সমর্থন দিতে চায় দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিএনপির। দলটি চায়, অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার শুধু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সংস্কারকাজ সম্পন্ন করবে। এর বাইরে সংবিধান সংশোধনসহ রাষ্ট্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারকাজ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার জাতীয় সংসদে ভোটাভুটির মাধ্যমে করার পক্ষে তারা। একই সঙ্গে প্রশাসনিক সচিব পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও রদবদলের ক্ষেত্রে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় দলটি। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনকে সমর্থন ও সহযোগিতাকারী কর্মকর্তারাও স্থান পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন দলটির নেতারা। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ এবং জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতাকেও সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি।
দেশরুপান্তর:
ঋণে শেয়ারে সালমানের ৫৬০০০ কোটি
দেশের ব্যাংক ও পুঁজিবাজার খাতে বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প খাতের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, সেখানে দুই খাতে ৫৬ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের তথ্য রয়েছে। এ অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের জমা পড়া অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সালমান এফ রহমান ঋণের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩৬ হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন। তার সিন্ডিকেটের কারণে ধ্বংস হয়েছে পুঁজিবাজার। সেখান থেকেও তার পকেটে গেছে ২০ হাজার কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনকালে নানা সময় নানা কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠায় আলোচিত ব্যক্তি ছিলেন ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জ এলাকা থেকে নির্বাচিত সাবেক এ সংসদ সদস্য।
দুদকে জমা পড়া অভিযোগের বাইরে দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে নামে-বেনামে সালমান এফ রহমানের আরও ঋণ থাকতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ধারণা, দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে নামে-বেনামে তার প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সাতটি ব্যাংকে ৩৭ হাজার কোটি টাকার ঋণের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে, ২৫ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই জনতা ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের মধ্যে ১৮ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়েছেন সালমান এফ রহমান।
বনিক বার্তা:
জুলাই আন্দোলনে উন্নয়ন সহযোগীরাও ছিল দ্বিধান্বিত
কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন জুলাইয়ে দ্রুত এগোতে থাকে গণ-অভ্যুত্থানের দিকে। এক পর্যায়ে ১৬ বছর ধরে রাখা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এ আন্দোলন চলাকালে শুরু থেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল শেখ হাসিনা সরকার। দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল দেশের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিবেচিত দেশ ও সংস্থাগুলোর মধ্যেও। এরই প্রভাব পড়েছে জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসা বৈদেশিক অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিতেও। ওই মাসে বিদেশী সহযোগীদের কাছ থেকে নতুন কোনো অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পায়নি বাংলাদেশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গন্তব্য দেশে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল বা অনিশ্চিত হলে বিদেশীরা বিনিয়োগ করে না। জুলাইয়ে আন্দোলন ঘিরে দেশে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। সরকার তা সামাল দিতে পারবে কিনা সে বিষয়ে মনোযোগ নিবদ্ধ রেখেছিল উন্নয়ন সহযোগীরা। আবার দেশের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক কাঠামো নাজুক হয়ে পড়ায় জুলাইয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশও ছিল না। আর আওয়ামী লীগ সরকারও সে সময় আলাপ-আলোচনা বাদ দিয়ে আন্দোলন দমনেই ব্যস্ত ছিল বেশি। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন সে পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে এসেছে। তাই নতুন করে ভাবার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের বৃহত্তম বহুজাতিক উন্নয়ন সহযোগী হয়ে উঠেছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটি থেকে জুলাইয়ে কোনো বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি আসেনি। নতুন কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি বিশ্বব্যাংকও। আবার অবকাঠামো খাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অর্থায়নের নতুন এক বড় উৎস হয়ে উঠছিল বেইজিংভিত্তিক এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। সেখান থেকেও জুলাইয়ে নতুন কোনো বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।