আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান সংবাদ
নয়াদিগন্ত:
আওয়ামী সরকারের আমলে গুদাম থেকে উধাও টনকে টন খাদ্যশস্য
দেশের সরকারি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় চলছে হরিলুট। সরকারি গুদামের টনকে টন ধান-চাল-গম হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। অতিলোভী খাদ্য পরিদর্শক তথা গুদাম কর্মকর্তার সম্পৃক্ততায় এমনটি ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকর্তা সাবেক আওয়ামী সরকারের তৎকালীন মন্ত্রীর ডিও লেটারে ও সুপারিশে পদায়নকৃত বলে জানা গেছে। এসব কর্মকর্তা এখনো ওই সব পদে বহাল থাকলে খাদ্য ব্যবস্থাপনায় আরো সঙ্কট সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া খাদ্যগুদামের প্রায় ২৫০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উধাও হয়ে গেছে। ভোলা সদর খাদ্যগুদামের ৫০ মেট্রিক টন চাল উধাও হয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ খাদ্যগুদামের ১৫০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ না করেও ভুয়া কাগজ তৈরি করে ৪১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর আগে কুমিল্লা জেলার লাকসাম খাদ্যগুদামের এক হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আত্মসাতে বিভাগীয় মামলাও দুদকে চলমান রয়েছে। বরিশালের হিজলা খাদ্যগুদামের ১২ মেট্রিক টন চালের কোনো হদিস নেই।
সম্প্রতি রংপুর সদর খাদ্যগুদামের প্রায় ১৫০ মেট্রিক টন চাল উধাও হয়ে গেছে। যার বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে একটি মহল। ওই সময়ে রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুল ইসলামের সাথে মোবাইলে এ নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার পর তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট খাদ্য পরিদর্শক গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমাকেও অন্যত্র বদলি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কানিজ ফাতেমার মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি।
এ ছাড়া ওই বিভাগেরই দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার ডুগডুগি গুদাম থেকে ৩১৯ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উধাও হয়ে গেছে। যার বাজারমূল্য প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। এই ঘটনায় খাদ্য পরিদর্শক গুদাম কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগমকে বদলি করা হয়েছে ও তার বিরুদ্ধে খাদ্য বিভাগ থেকে মামলা করা হয়েছে। একই বিভাগের পলাশবাড়ি খাদ্যগুদাম থেকে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যমানের ২০০ মেট্রিক টন চাল ও গম উধাও হয়ে গেছে। খাদ্য পরিদর্শক গুদাম কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুনকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে ও মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা খাদ্যগুদামের ৩২৯ মেট্রিক টন চাল উধাও হয়েছে ২০২৩ সালে। এই ঘটনার পর ওই গুদামের ওই সময়ের খাদ্য পরিদর্শক তথা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। গত বছরের ২১ নভেম্বর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা বাদি হয়ে মুক্তাগাছা থানায় এ মামলা করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভাগীয় মামলা হলেও অধিকাংশ কর্মকর্তাকে বদলি বা সাময়িক বরখাস্তের ও লঘু দণ্ডের মধ্যেই শাস্তি সীমাবদ্ধ থাকছে। এভাবে অসংখ্য মামলা রয়েছে, যা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এসব মামলার তথ্য চেয়ে ৩ সেপ্টেম্বর একটি পত্র জারি করা হয়েছে। আওয়ামী সরকারের সময় মন্ত্রীর ডিও লেটারে ও সুপারিশে এসব কর্মকর্তা নিয়োগ হওয়ার কারণে তারা কাউকেই পরোয়া করত না।
দৈনিক সংগ্রাম:
অর্ধ লক্ষ ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধার ভাতার নামে বিপুল অর্থ লুট উদ্ধারের এখনই সময়
সরদার আবদুর রহমান: দেশে অন্তত অর্ধ লক্ষ ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধার ভাতার নামে বিপুল অর্থ লুট করা হয়েছে। এই ‘ভুয়া’ ব্যক্তিরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মাসিক ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চলেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ভাতা বন্ধ করে এবং সেই অর্থ উদ্ধার করে ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টের শহীদদের পরিবারগুলোর জন্য বরাদ্দের সুযোগ রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬৩ জন উপকারভোগীর অনুকূলে সম্মানী ভাতা বাবদ প্রতিমাসে ৩৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৬২ হাজার ৮২২ টাকা আর্থিক মঞ্জুরি প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কতজন আর ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধা কতজন তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। যদিও অনেকদিন আগে থেকেই এই ‘ভুয়া’র বিষয়টি আলোচিত হয়ে আসছে। একবার বলা হচ্ছে এই সংখ্যা ৪ হাজার। আবার বলা হয় ৮ হাজার। এমনকি এই সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে ‘ভুয়া’ সংক্রান্ত অভিযোগ ৫০ হাজার থেকে ৫৫ হাজারে উন্নীত হয়। এর মধ্যে কিছু কিছু অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হলেও প্রকৃত ‘ভুয়া’র সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এই সংখ্যা নির্দিষ্ট না করার উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে, এই লোকগুলো তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও নানান টালবাহানায় এর নিষ্পত্তি করতে অনীহা প্রকাশ করা হয়। দেশে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৮৩ হাজারের সামান্য বেশি বলে উল্লেখ করা হলেও বাকিরা কীভাবে ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি পায় তার কোনো জবাব মেলেনি। মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ প্রতিনিয়ত উত্থাপিত হতে থাকলেও তার সুরাহা হয় না। এমনকি বাংলাদেশে ভুয়া বা অ-মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ঠিক কতো, সে বিষয়ে এখনো পরিষ্কার তথ্য নেই মন্ত্রণালয়ের কাছে। বিভিন্ন সময় বলা হয়, জালিয়াতি, প্রতারণা ও অসত্য তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে যারা সরকারি ভাতা নিয়েছেন, তাদের সেই ভাতা সুদে-আসলে ফেরত নেবে সরকার। একই সঙ্গে আইনি ব্যবস্থাও নেয়া হবে। কিন্তু দলীয় চাপের মুখে সেই ‘ব্যবস্থা’ আর নেয়া হয় না। একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, নিরপেক্ষ তদন্ত করলে বর্তমানে ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা অর্ধ লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি : সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে প্রতারণার মাধ্যমে নেয়া বিপুল অর্থ উদ্ধারে পদক্ষেপ গ্রহণের এখনই সময়। এসব ব্যক্তির কাছ থেকে ‘রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা’ ফেরত নিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে ‘সরকারি পাওনা আদায় আইন, ১৯১৩’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে রাষ্ট্রের তহবিলে কয়েক হাজার কোটি টাকা জমা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সেইসঙ্গে ‘প্রতারণা’র মাধ্যমে সংগ্রহ করা এসব ব্যক্তির ‘মুক্তিযোদ্ধা সনদ’ বাতিল করতে হবে। একইভাবে কার বা কাদের সুপারিশে তারা মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছিলেন, সেটাও অনুসন্ধান করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। সূত্র জানায়, কিছু সংখ্যক ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হলেও প্রতারণা বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সনদ নেয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি তাদের মধ্যে যারা সরকারি ভাতা গ্রহণ করেছে সেই টাকাও ফেরত আনার কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। অভিযোগে প্রকাশ, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুন করে সরকারি গেজেটভুক্ত করা হয় ৩১ হাজার ৫৪৯ জনকে। তাদের শাসনামলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা করার পরিবর্তে ‘দলীয়’ বিবেচনা থেকে এই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলে। যাদের মধ্যে ‘ভুয়া’ অভিধা পায় বেশিরভাগ। বর্তমানে নিয়মিত ভাতার পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উৎসব ভাতা ছাড়াও ‘মহান বিজয় দিবস ভাতা’ এবং মূল ভাতার ২০ ভাগ হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা দেয়া হচ্ছে
কালবেলা:
আলোচনার কেন্দ্রে সরকারের মেয়াদ
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক মাস পূর্ণ করছে আজ। ৫৩ বছরের বাংলাদেশের ইতিহাসে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপট তৈরি হয় গত মাসে। ৮ আগস্ট রাষ্ট্র সংস্কারের অনিবার্য প্রয়োজনে যাত্রা শুরু করে ইউনূস সরকার। ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে সঙ্গে আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। এমনকি, দলীয় নেতৃবৃন্দ ও সরকারঘনিষ্ঠ উচ্চ পর্যায়ের আমলারাও গা-ঢাকা দেন। গণভবন, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনগণ। কর্তৃত্বপরায়ণ হাসিনা সরকারের নৃশংস দমন-পীড়নে প্রাণ হারায় শিশু-কিশোর-শিক্ষার্থী-নারীসহ হাজারো মুক্তিকামী মানুষ। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে জনতার এ বিজয়কে দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন আন্দোলনকারীরা।
স্বৈরশাসন, দুর্নীতি, বৈদেশিক ঋণ, অর্থ পাচার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্ব, রিজার্ভ সংকটসহ হাজারো সমস্যা থেকে উত্তরণে ড. ইউনূসকে সরকার গঠনে আহ্বান জানায় ছাত্র-জনতা। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন বিশ্বনন্দিত নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস। পর্যায়ক্রমে আরও ২০ জন উপদেষ্টা যোগ দেন তার সঙ্গে। এর মধ্যে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই শিক্ষার্থী।
এরই মধ্যে ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংখ্যালঘু নির্যাতন, স্থানীয় সরকারের পলাতক জনপ্রতিনিধি, বিচার বিভাগসহ নানা প্রতিষ্ঠানে গণপদত্যাগ, বিভিন্ন বঞ্চিত পেশাজীবীদের বিক্ষোভ, রাজনৈতিক দলগুলোর যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের দাবি ও আকস্মিক বন্যার মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে বর্তমান সরকারকে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা কালবেলাকে বলেন, এতবড় ঘটনার পর বড় রকমের বিশৃঙ্খলা হতে দেখিনি। এতে বলা যায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
পুলিশ বাহিনী সম্পূর্ণভাবে এখনো মাঠে নামতে পারেনি। আরও কিছুটা সময় লাগবে।
সাবেক এই আইজিপি মনে করেন, বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ করেই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করতে হবে। তবে, সংস্কার তো আগে দরকার হবে। এটা একটা নির্দিষ্টকালের মধ্যে ঠিক করতে হবে।
রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে লাগাতার বৈঠক করছেন প্রধান উপদেষ্টা। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি বিভিন্ন সময় অভিযোগ করছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছেন শেখ হাসিনা। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দলদাসে পরিণত করা হয়েছিল। সব ক্ষেত্রে সংস্কার জরুরি। সংস্কারের প্রশ্নে তার সঙ্গে দেশবাসী একমত। তবে রাজনৈতিক ও সচেতন মহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়সীমা নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল রয়েছে।
সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না মনে করেন, দেশে অনেক ধরনের সংস্কার করা দরকার। এ জন্য দিনের পর দিন অনির্বাচিত সরকার থাকা ঠিক হবে না। একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায় নেওয়া উচিত। সেটি ছয় মাসের মধ্যে হতে পারলে ভালো হয়।
বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় বক্তারা সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বলছেন। তবে, এই ‘যৌক্তিক সময়’ কতটুকু? তা নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় সম্পাদকদের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই থেকে তিন বছর সময়ের কথা বলেছেন অনেকে। পরে, গণমাধ্যমকে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমার মনে হয়, সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ শেষ করা উচিত।’ দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক আবুল মোমেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দু বছর সময় দেওয়ার কথা বলেন।
প্রধম আলো:
নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য সংস্কারের সময় দিতে হবে
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয় গত ৫ আগস্ট। ৮ আগস্ট গঠিত হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সরকারের এক মাস পূর্তিতে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের কার্যক্রম, সংস্কার, সরকারের মেয়াদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন।
রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গতকাল শনিবার এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর ডেপুটি হেড অব রিপোর্টিং রাজীব আহমেদ।
প্রথম আলো: আপনি নাগরিক সমাজের মানুষ ছিলেন। মানবাধিকার, বাক্স্বাধীনতা, আইনের শাসন, রাজনীতি, বিচারালয় ইত্যাদি বিষয়ে আপনি ছিলেন সরকারের সমালোচক। এখন নিজেই সরকারে। নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে কী বলবেন?
আসিফ নজরুল: আমি বিভিন্ন সরকারের সমালোচনা করেছি ৩০ বছর ধরে। আর সরকারে আছি ৩০ দিন। সরকারের নানা নেতিবাচক কাজের সমালোচনা যতটা সহজে করতে পারতাম, নতুন দায়িত্ব পালন করার কাজটি ততটা সহজ হচ্ছে না। কারণ, আমার অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে একটা কথা বলতে পারি, মানুষের নিয়ত যদি সৎ হয়, দেশপ্রেম থাকে, ইচ্ছাশক্তি থাকে, তাহলে যেকোনো কাজ করা সম্ভব। বিশ্বাস করি, আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যে আমি সরকারের কাজও খুব স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারব। আরেকটি দিক হলো, বিগত ১৫ বছরে সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার মাধ্যমে এবং অবাধ দুর্নীতি, অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া ও দলীয়করণের মাধ্যমে এমন একটি শোচনীয় পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, যেখানে কাজ করা খুবই চ্যালেঞ্জিং।
প্রথম আলো: সরকারের এক মাস হলো। এই সময়ে সরকারের কোন কাজগুলোকে ভালো বলবেন? দেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে, কোন কোন ঘটনাকে আপনার অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মনে হয়?
আসিফ নজরুল: আমি মনে করি, এটা জনগণের সরকার, এই আস্থা তৈরি করতে পারাটাই এই সরকারের প্রথম ভালো কাজ। বিগত সরকারের আচরণ ছিল মানুষের প্রতি প্রভুসুলভ। আমরা জনগণের কাছে অল্প হলেও এই ধারণা দিতে পেরেছি যে এটা আপনার সরকার, আপনাকে সেবা দিতে এসেছে। আপনি এই সরকারের যেকোনো সমালোচনা যখন ইচ্ছা করতে পারেন। এই মুক্তির পরিবেশ তৈরি করা গেছে। বৈষম্য ও বঞ্চনা দূর করতে সরকার বেশ কিছু কাজ করেছে। যেটা বাইরে থেকে ততটা বোঝা যাবে না। যেমন রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পদবঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে, জনমনে সেই আস্থা সরকার তৈরি করতে পেরেছে। ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিগত সরকারের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কিছু মিথ্যা মামলাও প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনতে, ঋণখেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে, পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনতে প্রাথমিক যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সরকার তা করতে পেরেছে। মানুষকে স্বপ্ন দেখার সাহস কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। রাজধানীতে সভা-সমাবেশ হচ্ছে, সেমিনার হচ্ছে। মানুষ কথা বলছে। নানা প্রস্তাব আসছে। এমন একটি দেশই আমরা চেয়েছিলাম।
বাংলাদেশ প্রতিদিন:
আবাসনশিল্পে বিপর্যয়
দেশের কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে আবাসনশিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩ শতাধিক ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ বা সহযোগী শিল্পও ভালো নেই। সব মিলিয়ে আবাসনশিল্পের ৪৫৮ উপখাত ঝুঁকিতে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের আবাসন খাতে চলছে ভয়াবহ অস্থিরতা। আতঙ্কিত ক্রেতারা টাকা হাতছাড়া করতে নারাজ। প্লট ও ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ। নেই টাকার সরবরাহ। এমন পরিস্থিতিতেও আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক কোনো সহযোগিতা করছে না। অসংখ্য ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধের হুমকিতে পড়েছে। সব মিলিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, সরাসরি অর্ধ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে আবাসনশিল্পে। আর এই শিল্পের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রায় ২ কোটি মানুষ নির্ভরশীল।
আবাসনশিল্প মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব জানিয়েছে, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নির্মাণসামগ্রীর মূল্য অনেক বেড়েছে। প্লট আর ফ্ল্যাট বিক্রি এখন শূন্যের কোঠায়। ক্রেতাদের কিস্তি পরিশোধও বন্ধ। নেই টাকার সরবরাহ। ফলে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার হুমকিতে পড়ায় ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। উদ্যোক্তারা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোতে আবাসন খাতে ১ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ক্রেতাদের জন্য সেই ব্যবস্থা নেই। তাই চলমান এই সংকট উত্তরণে আবাসন খাতের ক্রেতাদের জন্য স্বল্প সুদের বিশেষ ঋণ তহবিল গঠন করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া মিলন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা এখন খারাপ। ক্রেতারা কিস্তি দিতে পারছেন না। ক্রেতারা টাকা ধরে রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ইতোমধ্যে আবাসনশিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি ও সমস্যা সমাধানে বর্তমান সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে রিহ্যাব। সরকারও আমাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। এই রিহ্যাব নেতা আরও বলেন, বর্তমানে প্লট ও ফ্ল্যাটের অত্যধিক রেজিস্ট্রেশন খরচ কমানোর বিষয়ে খুব দ্রুত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করবে রিহ্যাব। পাশাপাশি এই সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের সর্বশেষ ক্ষয়ক্ষতি জানতে এবং করণীয় নির্ধারণে শিগগিরই বৈঠক করবে রিহ্যাব।
কালের কন্ঠ:
জাদুঘরে রূপান্তরের লক্ষ্যে তিন উপদেষ্টার গণভবন পরিদর্শন
গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়ার পর গতকাল শনিবার সকালে প্রাথমিক পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। এই তিনজন হলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
প্রায় এক ঘণ্টা পরিদর্শনের পর গণভবনের গেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিন উপদেষ্টা। শুরুতেই যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘২০২৪ সালের গণ অভ্যুত্থানের স্মৃতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে জনগণের ওপর যে অত্যাচার, গুম, খুন, নিপীড়ন চলেছে তার স্মৃতি সংরক্ষণ করে গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে।
জনগণের জন্য এটা উন্মুক্ত থাকবে। আমরা স্থাপত্যশিল্পী, স্থপতি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করে এই কার্যক্রম শুরু করব।’
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশে নয়, আমরা পৃথিবীর বুকেই এই জাদুঘরকে একটি নিদর্শন করে রাখতে চাই, স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট, খুনি রাষ্ট্রনায়কদের কী পরিণতি হয় তা তুলে ধরার জন্য। হয়তো আগামীকালের (আজ) মধ্যেই কমিটি গঠন হয়ে যাবে।
কমিটি হলে হয়তো আগামী সপ্তাহ থেকেই আমরা কাজ শুরু করব। দ্রুত এর কাজ সম্পন্ন করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? জানতে চাইলে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা প্রথম দিন থেকে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। আমরা বারবার বলেছি, আমাদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছিল ফ্যাসিবাদী শাসনের পক্ষ থেকে, সেই ধরনের আচরণ যেন কারো প্রতি না হয়, সেটাই নিশ্চিত করছি।
গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের কমিটিতে কারা থাকবেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য উপদেষ্টা জানান, ‘যাঁরা জাদুঘর বিশেষজ্ঞ, স্থাপত্যের সঙ্গে যুক্ত আছেন, তারাই কমিটিতে থাকবেন। সেই সঙ্গে বিদেশ থেকেও জাদুঘর বিশেষজ্ঞ বা এমন অভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাঁদেরও পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।’
জাদুঘরে কী ধরনের স্মৃতি ধরে রাখা হবে? জানতে চাইলে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এখানে প্রথমত ৩৬ দিনের অভ্যুত্থানের স্মৃতি, দিনলিপি থাকবে। যাঁরা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, তাঁদের স্মৃতি থাকবে, তালিকা থাকবে। এ ছাড়া গত ১৬ বছরে যে নিপীড়ন হয়েছে, যাঁরা গুম হয়েছেন, যাঁদের বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের তালিকা থাকবে।
বনিক বার্তা:
নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অর্ধেকেরও নিচে ভারত
বিহার, পাঞ্জাবসহ শিল্পায়নে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলোয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূলধনি যন্ত্রপাতি স্থাপনে ভর্তুকি ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। জমি কেনার ক্ষেত্রেও দেয়া হচ্ছে বিশেষ সরকারি সুবিধা। রাজ্যগুলোয় স্থাপিত শিল্প-কারখানায় নারী শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধেও ভারত সরকার অংশ নেবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পোশাক রফতানির বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারণের উদ্দেশ্য থেকে এসব নীতি সহায়তামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক রফতানিতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এমন অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। রাজ্যভিত্তিক শিল্পায়ন ও বিনিয়োগে বিশেষ সুবিধা ঘোষণা ছাড়াও দেশটি গত ১০-১৫ বছরে পোশাকের বৈশ্বিক বাজারে অবস্থান টেকসই করতে নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশকে পেছনে ফেলারও লক্ষ্য রয়েছে তাদের। এসব উদ্যোগ সত্ত্বেও বিশ্ববাজারে পোশাক রফতানিতে নিজের অবস্থানকে শক্ত করতে পারেনি ভারত। এখনো বাংলাদেশের চেয়ে অর্ধেকেরও কম অর্থমূল্যের পোশাক রফতানি করছে দেশটি।
দুই দেশের সরকারি রফতানি পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভারত বিশ্ববাজারে পোশাক রফতানি করেছে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের। ১০ বছরের মাথায় সেখান থেকে কিছুটা কমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশটির পোশাক রফতানি নেমে এসেছে ১ হাজার ৪৫০ কোটি ডলারে। বাংলাদেশ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পোশাক রফতানি করেছিল ২ হাজার ৪৪৯ কোটি ১৮ লাখ ডলারের। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬১৬ কোটি ডলার। এ অনুযায়ী গত অর্থবছরেও ভারত বিশ্ববাজারে পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশের ৫০ শতাংশেরও অনেক কম।
ভারতের বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৫ সালের এক কর্মপরিকল্পনার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে পোশাক শিল্পের রফতানিকে ৩০০ বিলিয়ন ডলার ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের ২০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছিল দেশটি। এজন্য পোশাক খাতের পুরো প্রক্রিয়ায় বৈশ্বিক মান নিশ্চিত করা, বিনিয়োগ আকর্ষণ, শ্রমিকদের দক্ষতা, গুণগত মান ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে রফতানি কাঠামোয় পরিবর্তন আনা, গবেষণা ও উদ্ভাবনে গুরুত্বারোপ, তাঁত ও হস্তশিল্প খাতসংশ্লিষ্টদের জীবনমান, রুচি ও উৎপাদনে উন্নয়ন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে অংশীদারত্ব বৃদ্ধি, বিদ্যমান স্কিম ও নীতিগুলোর পুনর্নির্মাণের মতো কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। যদিও এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি দেশটির। উল্টো ভারতের পোশাক রফতানি কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত অনেক দিন ধরেই পোশাক রফতানিতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু দেশটির উদ্যোক্তারা অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পূরণেই মনোযোগী ছিলেন বেশি। আবার নিজস্ব কাঁচামাল ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকায় ক্রেতাদের চাহিদামতো কাঁচামাল থেকে সুতা-কাপড় উৎপাদনের কারণে দেশটির পোশাক রফতানি সম্প্রসারিত হয়নি। যদিও একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যবসায়িক নমনীয়তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রফতানি বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ জব্বার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকারের নীতসহায়তা যেমন ইডিএফ, নগদ প্রণোদনা ইত্যাদি সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ পোশাকের নতুন বাজার ও নিজস্ব ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শক্তিশালী করেছে। নব্বইয়ের দশক ও তার পরে সরকারের দেয়া সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ যখন ইউরোপীয় মেশিন ব্যবহার করছিল, তখন ভারত বাইরে থেকে মেশিন আমদানি করতে পারত না। বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়ন অনুসরণ করে ভারত অনেক ধরনের উদ্যোগই গ্রহণ করেছিল কিন্তু সেগুলো খুব কার্যকারিতা দেখাতে পারেনি। কারণ দেশটির উদ্যোক্তারা পোশাকের বাইরে অন্যান্য শিল্পপণ্যে বিনিয়োগে মনোযোগী ছিল বেশি এবং সফলতাও দেখিয়েছে। আবার দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদাও শক্তিশালী।’
যুগান্তর:
লোকদেখানো কাজে দুদক
রাজনৈতিক সরকারের আমলে নখদন্তহীন বাঘ বনে যাওয়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হঠাৎ গর্জন শুরু করেছে। প্রায় প্রতি কার্যদিবসেই দু-চারজন সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের খোঁজে নামছেন তারা। পাচার করা হাজার হাজার কোটি টাকার সন্ধানের কথাও বলা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৯ মন্ত্রী-এমপির অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে ২৯ জনের সম্পদের সুনির্দিষ্ট তথ্য ২ বছর আগে থেকেই সংস্থাটির গোয়েন্দা শাখায় পড়ে ছিল। তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার পতনের পর এসব ফাইল সামনে এনে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দিচ্ছে কমিশন। আবার নতুন করে অনুসন্ধান জালে আটকানো অনেকের অভিযোগ আগে একাধিকবার পরিসমাপ্তি করে ‘ক্লিনচিট’ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ কমিশন ঢেলে সাজানোর দাবি উঠলে ‘গদি রক্ষায়’ গণহারে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চালু অনেক মন্ত্রী-এমপির অনুসন্ধান ফাইল বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে। সংশ্লিষ্টদের অনেকে মনে করছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কার্যত লোক দেখানো কাজ করছে দুদক।
এতে অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে কোনো গুণগত পরিবর্তন নেই। ফলে পাচার টাকা ফেরানো কিংবা দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করার বিষয়টি সুদূর পরাহত। আবার ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে এসব প্রভাবশালী ছাড়া পেয়ে যাবেন।
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘লোক দেখানো কাজ দেখে দুদক ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার সুযোগ নেই। শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন আনলেই হবে না। দুদকের আইন ও বিধানের কিছু কিছু ধারাও সংশোধন করতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুদক পরিচালনায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যাদের হাতে তারা বেশ কয়েক বছর ধরেই আছেন। তাহলে আগে কেন এদের দুর্নীতির অনুসন্ধানে সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না। এ থেকেই বোঝা যায় দুদক সরকারের আজ্ঞাবহ হয়েই কাজ করেছে। ক্ষমতার বলয়ে থাকা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা সব সময় নমনীয়। কখনো কখনো সরকারের বিরাগভাজন কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে অতিউৎসাহী হয়ে লম্ফঝম্ফ করেছে সংস্থাটি। পরিবর্তিত পরিস্থিতে এখন সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে তারা অনুসন্ধান শুরু করছেন।’
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির অনুসন্ধানে সোচ্চার দুদক। এখন পর্যন্ত ৬৯ জন মন্ত্রী-এমপি, আমলা, ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি অনুসন্ধানের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এদের মধ্যে অন্তত ৩১ ব্যক্তির অবৈধ সম্পদের সুস্পষ্ট তথ্য দুদকের কাছে আগে থেকেই ছিল। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছিল দুদক। তখন তাদের বিরুদ্ধে আগ বাড়িয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার ও প্রভাবশালীদের বিরাগভাজন হতে চায়নি ‘স্বাধীন’ সংস্থাটি।
দুদক কর্মকর্তারা বলেছেন, ইকবাল মাহমুদ চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ‘দুদক সিন্ডিকেট’ আওয়ামী লীগকে খুশি করা ও বিএনপিকে চাপে রাখার মিশনে নেমেছিল। সরকার পতনের পর এখন আবার ঠিক উলটো কাজ শুরু হয়েছে। দুদক এভাবে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসালে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ বৃথা যাওয়ার শঙ্কা আছে। এতে প্রতিরোধ করা যাবে না দুর্নীতি। ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকবে দুর্নীতিবাজরা।
জানা গেছে, জমে থাকা অভিযোগ টেনে তুলে সাবেক যেসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তারা হলেন-শাজাহান খান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, গাজী গোলাম দস্তগীর, আবদুর রহমান ও জিল্লুল হাকিম। সাবেক প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন-মাহবুব আলী, মেহের আফরোজ চুমকি, এনামুর রহমান, নসরুল হামিদ ও শরীফ আহমেদ।
সাবেক এমপিদের মধ্যে আছেন-মোস্তাফিজুর রহমান, অসীম কুমার উকিল, মানু মজুমদার, সোলায়মান হক জোয়ার্দার, ইকবালুর রহিম, রণজিৎ কুমার রায়, শফিকুল ইসলাম (শিমুল), গোলাম ফারুক, নাঈমুর রহমান (দুর্জয়), এইচএম ইব্রাহিম, মো. সাইফুজ্জামান (শিখর), রাশেদুল মিল্লাত, হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, শওকত হাচানুর রহমান, আবদুল আজিজ, আনোয়ারুল আশরাফ খান, দিদারুল আলম ও এইচবিএম ইকবাল। এ তালিকায় বিএনপির সাবেক সংসদ-সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেনের নামও রয়েছে। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তমাল মনসুরও অনুসন্ধান জালে আটকা পড়েছেন।
মানবজমিন:
চ্যালেঞ্জ-ষড়যন্ত্র সামলে সংস্কারের সূচনা
নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থান। ছাত্র-জনতার রক্তমাখা বিপ্লব। ১৫ বছরের বেশি সময়ে কর্তৃত্ববাদী শাসন উড়ে যায় ৩৬ দিনের গণ-আন্দোলনে। ৫ই আগস্ট নতুন এক বাংলাদেশের দেখা পায় বিশ্ব। হাজারো ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদী শাসনমুক্ত হয় দেশ। তার তিন দিনের মাথায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নানামুখী চ্যালেঞ্জ, শঙ্কা-ষড়যন্ত্রের চাপ সামলে এক মাস
পার করেছে নতুন সরকার। সরকার পতনের পর সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিয়ে স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে নতুন সরকার। ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।
প্রবাসীরা পাঠানো রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছে সরকারের প্রথম মাসে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশৃঙ্খলা কাটতে শুরু করেছে। সচল হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। বৈদেশিক সম্পর্কে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বিশ্ব নেতাদের স্বীকৃতি, আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতার আশ্বাসে আস্থা ফিরছে জনমনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এক মাস কোনো মূল্যায়নের সময় নয়। তবে এ পর্যন্ত নেয়া সরকারের উদ্যোগ সন্তোষজনক। সামনে আরও কাজ করতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে। সামনের এক থেকে দুই মাসের মধ্যে মানুষের আস্থা ফেরানোর মতো আরও উদ্যোগ দৃশ্যমান করতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ সরকারের এক মাস মেয়াদের বিষয়ে বলেন, একমাস আসলে মূল্যায়নের সময় না। সরকার একটি অস্বাভাবিক অবস্থায় এসেছে। প্রশাসন, পুলিশ সব জায়গায় একটা শূন্যতা ছিল। সরকার এখন ঘর গোছানোর কাজ করছে। এর মধ্যে আর্থিক খাতে কিছু ভালো নিয়োগ হয়েছে। যা আমাদের আশা জাগাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রশাসন এখনও পুরো কার্যকর হয়নি। এখানে বড় পরিবর্তন দরকার, যা হয়ে ওঠেনি। এগুলো সামনে করতে হবে। স্থানীয় সরকার নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। প্রশাসক দিয়ে বেশিদিন কাজ চালানো যাবে না। যেসব জনপ্রতিনিধি কাজ করতে চায় তাদের করতে দিন। যারা থাকবে না তাদের জায়গায় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, বৈদেশিক দিক দিয়ে সরকারের সাফল্য অনেক। প্রায় সারা বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ভারত এখন বাংলাদেশকে সমীহ করে কথা বলছে। এটা সামনে আরও বাড়বে। এটা সরকারের বিরাট সাফল্য।
অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় ক্ষোভ আছে, ১৫ বছরে নানা বৈষম্যের কারণে তা তৈরি হয়েছে। এটি একটা বিষয়। তবে আশার বিষয় হলো- সরকার সবার কথা শুনছে। তারা চেষ্টা করছে সমাধানের।
সরকারকে অতীতের অনিয়ম ও হত্যাকাণ্ডের বিচারে উদ্যোগী হতে হবে। এজন্য সব প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করতে হবে। এছাড়া তরুণদের কর্মসংস্থান বড় বিষয়। সরকার চাইলে আগামী ছয় মাসে অন্তত ২ লাখ মানুষের কর্মস্থান করতে পারে সরকারি খাতে। এর বড় খাত হতে পারে শিক্ষা। এছাড়া পুলিশ প্রসাশন ও সরকারি দপ্তরে শূন্য পদ দ্রুত পূরণ করা যেতে পারে।
সমকাল:
জাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটছে বিকেলে
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্য অর্জনে আত্মপ্রকাশ হচ্ছে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে এ কমিটি। রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ কমিটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হবে। শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে দেশের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ এবং সহস্রাধিক শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক দফার দ্বিতীয় ধাপ তথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যে নতুন রাজনৈতিক ভাষা ও জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনা হাজির করেছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশকে নতুন করে গঠন করতে হবে। গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের ব্যাপারে সমাজে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক উদ্যোগের সঙ্গে মত আদান-প্রদানের মাধ্যমে নতুন ঐতিহাসিক বোঝাপড়ায় উপনীত হওয়া এবং সেই মোতাবেক বাংলাদেশের জনগণকে সংগঠিত করা আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্যে রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জাতীয় নাগরিক কমিটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। এ অনুষ্ঠানে সবাইকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জেলা, মহানগর ও থানা পর্যায়েও কমিটি হবে: কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর দেশের ৬৪ জেলা ও ১২ মহানগর ও থানা পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা বহন করে এর ধারাবাহিকতায় জাতীয় নাগরিক কমিটি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর দেশের ৬৪ জেলা ও ১২ মহানগর এবং এরপর থানা পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে এ কমিটি।
দেশরুপান্ত:
‘ইয়েস স্যারে’ ডুবেছেন ডুবিয়েছেন
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তার দু-একটি বাদে প্রায় সবগুলোই ছিল বিতর্কিত। ফলে বারবার প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে। অথচ সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা থাকার পরও বেশিরভাগ কমিশনই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি বা করেনি। পারেনি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করতে গিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকেই ফেলে দিয়েছে বিতর্কের মধ্যে। নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংসের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। এসব ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে বহুল আলোচিত বিষয় হলো ক্ষমতা প্রয়োগের চেয়ে আনুগত্য দেখাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য ছিল ইসি।
সদ্য বিদায়ী কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও একই কাজ করায় নতুন কমিশন গঠনের আগে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করার ক্ষেত্রে শুধু নির্দলীয় সরকারই নয়, একটা নিরপেক্ষ কমিশন আরও বেশি দরকার। সার্চ কমিটি থেকে শুরু করে কমিটি গঠন সব ক্ষেত্রেই বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
দেশের কোনো নির্বাচনই যে বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না, তা স্বীকার করেছেন সদ্য বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। পদত্যাগের দিন তার বিদায়ী বক্তব্যে ফুটে উঠেছে বিভিন্ন সময় গঠিত হওয়া নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা। তিনি বলেন, দেশের প্রথম সাংবিধানিক সাধারণ নির্বাচন ১৯৭৩ সালে হয়েছিল। সেই নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক ছিল।
সদ্য স্বাধীন দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই নির্বাচন।
হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচন সামরিক শাসনামলে হয়েছে। ফলাফল নিয়ে বিতর্ক ছিল।ওই দুটি নির্বাচন হয়েছিল যথাক্রমে জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে। এ ছাড়া এরশাদের সময় হওয়া ৮৮ সালের নির্বাচনও ছিল বহুল বিতর্কিত।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনও বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না বলে সদ্য বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার দাবি করেন। হাবিবুল আউয়াল বলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচন সম্মত রাজনৈতিক রূপরেখার ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছিল। ১৯৯৬ (১২ জুন) ও ২০০১ সালের নির্বাচন সাংবিধানিক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সূক্ষ্ম বা স্থূল কারচুপির সীমিত সমালোচনা সত্ত্বেও সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল।
২০০৮ সালের নির্বাচন সেনাসমর্থিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই নির্বাচনে বিএনপি সংসদে মাত্র ২৭টি এবং আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়েছিল। নির্বাচন বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। সে সময় নিরাপদ প্রস্থানের (সেফ এক্সিট) বিষয়ে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেনাসমর্থিত অসামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দর-কষাকষির বিষয়টি প্রকাশ্যে ছিল। সেই প্রশ্নে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের অবস্থানও গোপন ছিল না। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন সংবিধানমতো দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে।