আজেকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর
সমকাল:
বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের টানাপোড়েন বাড়ছে
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে প্রায় ২৫ বছরে মিত্রতা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই মিত্রতার সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। দল দুটির নেতারা সম্প্রতি একে অপরকে কটাক্ষ করছেন। রাজনৈতিক বিষয়ে বিপরীতমুখী অবস্থান নিচ্ছেন। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। বিপরীতে জামায়াত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে চাপ না দেওয়ার কথা বলছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের ক্ষমা নিয়েও দল দুটির দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। আর অপ্রকাশ্যে চলছে বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজস্ব লোকের পদায়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব।
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে অবস্থান সুসংহত করা নিয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরোধও অনেকটা প্রকাশ্য। বিএনপির ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে বেশি সমর্থন পাচ্ছে জামায়াত।
অবশ্য দু্’দলের কয়েকজন নেতা মনে করেন, মাঠে আওয়ামী লীগ না থাকায় গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকা জরুরি। নয়তো জাতীয় পার্টি যেভাবে আওয়ামী লীগের ‘গৃহপালিত বিরোধী দলে’ পরিণত হয়েছিল, সেই অবস্থার উদ্ভব হতে পারে।
আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে ১৯৯৯ সালে জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধে বিএনপি। ২০০১ সালে জোটবদ্ধ নির্বাচন করে সরকার গঠন করে। সম্পর্কে উত্থান-পতন হলেও জোট ভাঙেনি। ২০১০ সালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতাদের বিচার শুরু হলে দলটিকে ছাড়ার জন্য বিএনপি ঘরে-বাইরে চাপে পড়ে। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্থানের কারণে জোট ভাঙেনি। আবার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইস্যুতে জামায়াতের পাশেও দাঁড়ায়নি।
২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ আন্দোলন করে বিএনপি ও জামায়াত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিবন্ধন হারানো জামায়াতের নেতারা বিএনপির প্রতীকে প্রার্থী হন। ‘রাতের ভোট’খ্যাত ওই নির্বাচনের পর দু’দলের সম্পর্কে ভাটা পড়ে। ২০২২ সালে দু’দল আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ভেঙে দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে নামে।
তবে ধরপাকড়ে বিএনপি পাশে থাকছে না– অভিযোগে যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে যায় জামায়াত। পরের বছরের অক্টোবরে ফের যুগপৎ আন্দোলনে ফেরে।
কিন্তু আগের ১০ বছরের মতো ২০২৩ সালের এবং গত ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পরের যুগপৎ আন্দোলনে ব্যর্থ হয় বিএনপি ও জামায়াত। গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার গণহত্যা চালায়। বিএনপি ও জামায়াতকে আন্দোলনের জন্য দায়ী করে ঢালাও মামলা এবং গ্রেপ্তার করে। ২৬ জুলাই জামায়াতের নাম উল্লেখ করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয় বিএনপি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতৃত্ব দিলেও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মতো বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরও সর্বাত্মক অংশগ্রহণ ছিল। বিএনপির দেড় শতাধিক এবং জামায়াতের শতাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। ১ আগস্ট জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ।
কী নিয়ে টানাপোড়েন
দু’দলের সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে প্রভাব বিস্তারে প্রতিযোগিতা হয় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, আইন, বিচার, সচিবালয় থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগের লোকজন সরিয়ে নতুন পদায়ন শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমাতেও চলছে রদবদল। কিন্তু এসব জায়গায় জামায়াতঘেঁষা কিংবা তাদের সমর্থকদেরই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্যের দল-সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও বিএনপির সন্দেহ তিনিও জামায়াতঘেঁষা।
অন্যদিকে, বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলছেন জামায়াতপন্থিরা। জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকা, সংবাদমাধ্যমে দলটির আমিরের বক্তব্য নিয়ে পাল্টা সমালোচনা করছেন বিএনপিপন্থিরা। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী সম্প্রতি জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি তুললে বিএনপির সমর্থকরা এর কড়া সমালোচনা করেন। জামায়াতপন্থিরাও পাল্টা জবাব দেন।
দু’দলের সূত্রই জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরস্পরের বিরোধিতার জন্য দলের দিক থেকে সমর্থন এবং নির্দেশনা রয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের প্রতিক্রিয়ায়ও বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান ছিল দুই মেরুতে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাষণে কোনো রোডম্যাপ নেই। জামায়াত ভাষণকে স্বাগত জানায়। তারা সরকারকে আরও সময় দেওয়ার কথা বলে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপি ও জামায়াত দু’দলই কোণঠাসা ছিল। কিন্তু রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নে বিএনপির তুলনায় জামায়াত নমনীয়। এতে অখুশি বিএনপি।
যুগান্তর:
এখনই নির্বাচনে ‘না’ ছাত্র-জনতার
রাষ্ট্র সংস্কারে এক বছর সময় দিতে চাই -সারজিস আলম * সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে এজন্য সময় লাগবে -বাকের মজুমদার
শহিদের রক্তে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের পুরোপুরি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে সায় নেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার। বরং তাড়াহুড়ো না করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের তাগিদ দেন তারা। রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারকে আপাতত এক বছর সময় বেঁধে দিতে চান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সমন্বয়ক যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেন ছাত্র-জনতা। এর পাশাপাশি বেদনায় ভারাক্রান্ত হয় জাতি। চারদিক থেকে খবর আসতে থাকে তৎকালীন সরকারের নির্দেশে আন্দোলন দমনের নামে পুলিশ ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ চালিয়েছে।
এতে রাজপথ থেকে শুরু করে বাড়ির ছাদ ও বারান্দায় দাঁড়ানো শিশুসহ শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন হাজার হাজার আন্দোলনকারী। হাসপাতালগুলোতে লাশের স্তূপ। স্বজন হারানোর শোকে বিজয়ের আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। আন্দোলনের একপর্যায়ে ছাত্র-জনতা সরকারের পদত্যাগে একদফা দাবি ঘোষণা করেন। শত শত মানুষ হত্যার পরও আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হয়ে সরকার অবশেষে পদত্যাগ করে পালিয়ে যায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৩ দিন পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারে স্থান করে নেন ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক। এছাড়া আন্দোলনের অন্য সমন্বয়করা এখনও রাজপথে ছাত্র-জনতার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তারাই দাবি জানিয়েছেন এখনই নির্বাচন নয়। রাষ্ট্র সংস্কারের পর নির্বাচন করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের জন্য নেতাদের পরামর্শ দেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা মন্তব্য করেন, রাষ্ট্র সংস্কার না করে কোনো নির্বাচন নয়। তারা বলেন, যে উদ্দেশ্যে ছাত্র-জনতার বিজয় হয়েছে আগে সেগুলো বাস্তবায়ন হতে হবে। দেশের আমূল সংস্কার করতে হবে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়ম-দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। এসব নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন নয়। রাষ্ট্র সংস্কারের পর দেশের মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত সরকার পাবে বলেও মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অথরাইজেশন উইংয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্র সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনই শুধু পারে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য যেমন নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রয়োজন তেমনি রাষ্ট্রের জন্য রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সংস্কার প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার সরকার সে কাজটিই করছে।
সারজিস আলম বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। কিছু সংস্কার প্রক্রিয়াধীন। আমরা রাষ্ট্র সংস্কারে ১ বছর সময় দিতে চাই। দেখি এতে কতটুকু সংস্কার হলো। যদি সম্পূর্ণ না হয় তবে তা রাষ্ট্র সংস্কারের স্পিরিটের সঙ্গে কতটা সামঞ্জ্যপূর্ণ তা যাচাই করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।
প্রথম আলো:
তখন ‘সাহস’ পায়নি, এখন তৎপর দুদক
● আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত ১৫০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির একটি প্রাথমিক তালিকা করেছে দুদক। ● তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্নীতিবাজ ও অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে তৎপরতা শুরু করেছে দুদক।
গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার আগে ৩১ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে স্বাধীন দুদক তখন কিছু করার ‘সাহস’পায়নি। এখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই সব প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। ইতিমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুও হয়েছে।প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী (এখন সাবেক) রয়েছেন ১১ জন। সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন ১৯ জন। এর বাইরে প্রয়াত একজন মন্ত্রীর ছেলেও রয়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছিল দুদক। কিন্তু সরকারের দিক থেকে ‘ইশারা’না পাওয়ায় তখন কারও বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান শুরু করা হয়নি। দুদকের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।
ওই তালিকায় সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন শাজাহান খান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, গাজী গোলাম দস্তগীর, আবদুর রহমান ও জিল্লুল হাকিম। সাবেক প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন মাহবুব আলী, মেহের আফরোজ চুমকি, এনামুর রহমান, নসরুল হামিদ ও শরীফ আহমেদ।
তালিকায় সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান, অসীম কুমার উকিল, মানু মজুমদার, সোলায়মান হক জোয়ার্দার, ইকবালুর রহিম, রণজিৎ কুমার রায়, শফিকুল ইসলাম (শিমুল), গোলাম ফারুক, নাঈমুর রহমান (দুর্জয়), এইচ এম ইব্রাহিম, মো. সাইফুজ্জামান (শিখর), রাশেদুল মিল্লাত, হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, শওকত হাচানুর রহমান, আবদুল আজিজ, আনোয়ারুল আশরাফ খান, দিদারুল আলম ও এইচ বি এম ইকবাল। এ তালিকায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেনের নামও রয়েছে। এ ছাড়া প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তমাল মনসুরের নামও রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের ওই তালিকায়।
দুদকের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের একটি নির্দেশনা রয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির আয়ের উৎস, আর্থিক লেনদেন, ভিন্ন নামে করা সম্পদের তথ্য যাচাই, বাসা ও কার্যালয়ে তল্লাশি করতে হয়। এই কাজটি ঠিকভাবে হচ্ছে না। এর কারণ অনুসন্ধানের কাজে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও অনেক ক্ষেত্রেই অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। এই অনুমতি দেওয়ার দায়িত্ব দুদক কমিশনের।
বাংলাদেশ প্রতিদিন:
পাচার ৯০ হাজার কোটির খোঁজে দুদক
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ২৯ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপির দেশের বাইরে পাচার করা প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদের মধ্যে আটজন মন্ত্রী, ছয়জন প্রতিমন্ত্রী এবং ১৫ জন এমপি রয়েছেন। তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান, রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। এ ছাড়া খুলনা-৬ আসনের সাবেক এমপি আকতারুজ্জামান বাবু, হুইপ ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, এমপি অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী অপু উকিল, এমপি জান্নাত আরা হেনরী, শাহ আলম তালুকদার, ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু, ডা. মনসুর রহমান, মো. আবুল কালাম আজাদ, সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (ছেলুন), সাইফুজ্জামান শিখর, তানভীর ইমাম, শফিকুল ইসলাম শিমুল এবং সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী। জানতে চাইলে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন এ প্রতিবেদককে বলেন, সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের অর্থ পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। কোন কোন দেশে কার কী পরিমাণ সম্পদ পাচার হয়েছে সেগুলোর খোঁজে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং হবে। দুদক সূত্র জানায়, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রযুক্তি খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি, এটুআই প্রকল্প, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, হাইটেক পার্ক, আইটি পার্ক তৈরির নামে লোপাট করেছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা। হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কণিকাও। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া আমেরিকায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। নিজের অবৈধ আয়ের অর্থ বৈধ করতে স্ত্রীকে বানিয়েছেন উদ্যোক্তা। তার স্ত্রীর নামে সিংড়ায় রয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ বিঘা জমি। ঢাকায় আছে কমপক্ষে ১৫টি ফ্ল্যাট। নামে-বেনামে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে পলক ও তার স্ত্রীর কণিকার নামে।
নয়াদিগন্ত:
ভারত দখলে কেউ সীমান্ত পার হচ্ছে না, হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সীমান্ত হত্যার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘হত্যাকাণ্ড কোনো সমাধান নয়। কাউকে হত্যা করা কোনো সমাধান নয়, কারণ এটি মোকাবেলার আইনি উপায় রয়েছে।’ বৃহস্পতিবার ভারতের সরকারী বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে এক সাক্ষাৎকারে সীমান্ত হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা একতরফা ব্যাপার। আপনার দেশ দখলের জন্য তো কেউ সীমান্ত অতিক্রম করছে না। এ হত্যাকাণ্ড অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’
এ দিকে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সাথে মতপার্থক্য দূর করতে সরকার কাজ করবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের মতপার্থক্য দূর করতে হবে। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকায় কোনো দেশেরই লাভ হচ্ছে না। দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টনের সমস্যা অবশ্যই আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সমাধান করা উচিত। বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর এ ব্যাপারে অধিকার রয়েছে। আমাদের আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভাটির দেশগুলোর কিছু অধিকার আছে এবং আমরা সেই অধিকার চাই। এ ইস্যুটি (পানি বণ্টন) ঝুলিয়ে রেখে কোনো উদ্দেশ্য সাধন হচ্ছে না। আমি যদি জানি, আমি কতটুকু পানি পাবো, সেটি ভালো হতো। এমনকি পানির পরিমাণ নিয়ে যদি আমি খুশি নাও হই, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। এ বিষয়টি সমাধান হতেই হবে।
দ্রুত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির জন্য ভারতকে অন্তর্বর্তী সরকার চাপ দেবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, চাপ একটি বড় শব্দ। আমি এটি বলছি না। তবে আমাদের একসাথে বসে সমাধান করতে হবে।
তিনি বলেন, এটা নতুন কোনো সমস্যা নয়, অনেক পুরনো সমস্যা। এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার কথা বলেছি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় পাকিস্তান আমলে। আমরা সবাই চেয়েছিলাম এই চুক্তি হোক, এমনকি ভারত সরকারও এর জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এর জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমাদের এটি সমাধান করতে হবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভয়াবহ বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে ঢাকার গণমাধ্যমের খবরের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের সঙ্কটে আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একসাথে কাজ করে এর সমাধান করতে পারি।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা সাক্ষাৎ করেন। বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভারতের হাইকমিশনার যখন আমার সাথে দেখা করতে আসেন, আমি বলেছি যে কিভাবে বন্যা মোকাবেলা করা যায় সে ব্যাপারে আমরা আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের সমন্বয়ের জন্য কোনো চুক্তিরও প্রয়োজন নেই। মানবিক দিক বিবেচনা করেই এ সমস্যা সমাধানে আমরা একসাথে কাজ করতে পারি। কেননা এটি গণমানুষের দুর্দশা লাঘব করবে। এ ধরনের মানবিক পদক্ষেপ সত্যিকার অর্থেই সহায়তা করবে।
মানবজমিন:
পিস্তলের ভয় দেখিয়ে তারেক রহমানকে সাজা দিতে বলা হয়
ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এ বিচার চলছিল বিএনপি নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার সংক্রান্ত কথিত দুর্নীতি মামলার। রায় ঘোষণার আগে নানা নাটকীয় ঘটনা। বিচারক মোতাহার হোসেন স্বাভাবিকভাবে মামলার রায় ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বদলে যায় দৃশ্যপট। চারদিক থেকে আসতে থাকে নানা চাপ, হুমকি। তারেক রহমানকে যেকোনোভাবে হোক সাজা দিতে হবে।
সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলার রায় যা হওয়ার তাই হবে। বিচারক প্রথমে এমন মনোভাব প্রকাশ করলে তার ওপর চাপ আরও বেড়ে যায়। আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা (পরে আইন সচিব হন) আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল সরাসরি যোগাযোগ করেন মোতাহার হোসেনের সঙ্গে। চলে আলোচনা।
বিচারকের মনোভাব দেখে ভয় দেখানোর কৌশল নেন দুলাল। ধানমণ্ডিতে উচ্চ আদালতের এক বিচারপতির বাসায় ডাকা হয় মোতাহার হোসেনকে। সেখানে উপস্থিত হন জহিরুল হক দুলাল। সঙ্গে কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা। কয়েকজন কোমরে পিস্তল গুঁজে সেখানে প্রবেশ করেন। বিচারক মোতাহার হোসেনকে বলা হয়, তারেক রহমানকে যেকোনো মূল্যে সাজা দিতে হবে। বিচারক তখন জানান, মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই সাজা দেয়ার মতো। এ মামলায় সাজা দেয়া আইনসম্মত হবে না। তখন দুলাল বিচারককে প্রাণনাশের ভয় দেখান। গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেন। একপর্যায়ে দুলাল বিচারককে বলেন, আপনাকে রায় লিখতে হবে না। আমিই লিখে দেবো। আপনি শুধু পড়বেন। পরে দুলাল রায় লিখে পাঠিয়েছিলেন বিচারকের বাসায়। বিচারক মোতাহার অবশ্য আদালতে জহিরুল হক দুলালের লিখে দেয়া রায় পড়েননি। তিনি নিজের লেখা রায় পড়ে তারেক রহমানকে অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছিলেন। রায় ঘোষণার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন বিচারক মোতাহার। চাকরি থেকে অবসর নেয়ার এক মাস আগের এই ঘটনা উলটপালট করে দেয় তার সবকিছু। কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর আদালতে ফিরে আসলেও বুঝতে পারেন তাকে শায়েস্তা করার নানা আয়োজন চলছে। পরে নিজের অফিস গুছিয়ে অবসর নেয়ার আগের দিন প্রিয় কর্মস্থল ছাড়েন। এক ছেলেকে নিয়ে চলে যান মালয়েশিয়া। এরপর অনেকটা ভবঘুরের মতো সময় কাটিয়েছেন। গোয়েন্দারা পিছু নেয়ায় একস্থানে বেশি দিন থাকতে পারেননি। থাকতে পারেননি এক দেশেও। কয়েক দেশ ঘুরে ২০২২ সালে থিতু হন ফিনল্যান্ডে। ছেলেকে নিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে ফেরার চিন্তা করছেন বিচারক মোতাহার হোসেন। হোয়াটসঅ্যাপে মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপে তিনি জানিয়েছেন, রায় দেয়ার আগে-পরের দুর্বিষহ পরিস্থিতি। দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই চুয়াডাঙ্গায় দলটির নেতাদের বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় দিয়ে হামলার শিকার হয়েছিলেন। পরে ৪১দিন আত্মগোপনে থাকতে হয় তাকে। চার বছর আগে বাংলাদেশে তার স্ত্রী মারা যান। তাকেও দেখার সুযোগ হয়নি। দুই ছেলেকে নিয়ে মোতাহার হোসেনের স্ত্রী দেশে ছিলেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদেরকেও এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ঘুরতে হয়েছে।
বনিক বার্তা:
রিজার্ভের ৫০ কোটি ডলার ব্যয়, পুরোটাই অপচয়
ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে পটুয়াখালীর পায়রা নদীর রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা বাড়াতে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর বেশির ভাগই নির্বাহ হয়েছে রিজার্ভের অর্থ দিয়ে গঠিত বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ) থেকে নেয়া ৫০০ মিলিয়ন (৫০ কোটি) ডলারের মাধ্যমে। খননের মাধ্যমে গত বছরের মার্চের মধ্যেই গভীরতা সাড়ে ১০ মিটারে উন্নীত করা হয়। কিন্তু এরপর প্রকল্পের খনন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার আগেই পলি পড়ে ভরাট হতে থাকে রাবনাবাদ চ্যানেলের তলদেশ। খনন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে চলতি বছরের ১৪ আগস্ট। আর সর্বশেষ ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৩ মিটারে। মাস শেষ হওয়ার আগেই তা ৭ মিটারের নিচে নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে এ চ্যানেল দিয়ে বড় জাহাজ চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বড় জাহাজ চলাচলের জন্য চ্যানেলটির অন্তত ৮ দশমিক ৭ মিটার গভীরতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় দেশে ডলার সংকটের মধ্যেও চ্যানেলটি খননে বিআইডিএফের মাধ্যমে রিজার্ভ থেকে দেয়া ৫০ কোটি ডলারের পুরোটাই অপচয় হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
নাব্য কমে আসায় পায়রা বন্দর এখন ক্রমেই অকার্যকর হয়ে পড়ছে। বর্তমানে কোনো ধরনের কার্গো জাহাজ পায়রায় ভিড়তে পারছে না। সাধারণ জাহাজ চলাচল করতে পারলেও সেগুলো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য দরকার হচ্ছে ছোট লাইটার জাহাজ। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, পুনরায় ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা না হলে চ্যানেলের গভীরতা আরো কমে আসবে। যদিও পুনরায় খনন কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাবনাবাদ চ্যানেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে খনন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে গেলে তা সেটিও এক ধরনের নিষ্ফল অপচয় হবে। অবস্থানগত কারণেই এখানে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় গভীরতা ধরে রাখা অসম্ভব। রাবনাবাদসহ পায়রার চ্যানেলগুলো দিয়ে প্রতি বছর উজান থেকে আসা বিপুল পরিমাণ পলি বঙ্গোপসাগরে পড়ছে। প্রবাহপথে আসা এ পলি জমা হতে থাকায় এ চ্যানেলের গভীরতা ধরে রাখা যায় না। এজন্য নিয়মিত ড্রেজিং ছাড়া বন্দরটি চালু রাখা কঠিন। কিন্তু সেটিও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ অবস্থায় পায়রা বন্দরের অর্থনৈতিক মুনাফাযোগ্যতা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
কালবেলা:
আন্দোলনে গুলি ছোড়া অস্ত্রধারীরা অধরা
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়াও ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায় একদল অস্ত্রধারী। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, জামালপুর, সিলেট, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সেসব সন্ত্রাসীর অস্ত্রসহ ছবি ও ভিডিও তখনই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রকাশিত হয় দেশের গণমাধ্যমগুলোতেও। কিন্তু ঘটনার এক মাসের বেশি পেরোলেও যেন অধরাই রয়ে যাচ্ছে এ অস্ত্রধারীরা।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায়
ছাত্র-জনতার ওপর প্রকাশ্যে গুলি করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের গুলিতে হতাহতের সংখ্যাটাও নেহায়েত কম নয়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর মূলত গা-ঢাকা দেয় তারা।
এদিকে, পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এসব সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করার পাশাপাশি আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। তবে চলমান অভিযানে এখনো অস্ত্রধারীদের কাউকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।
গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। সে সময় পিস্তল হাতে এক যুবককে আন্দোলনকারীদের ওপর সরাসরি গুলি করতে দেখা যায়। ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সামনে ওই ঘটনা ঘটে। অস্ত্রধারীর নাম হাসান মোল্লা। সে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এবং ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। সে একাধারে পানি উন্নয়ন বোর্ড, গৃহায়ন ও গণপূর্তের ঠিকাদার। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ। হাসানের চাচা মোল্লা আবু কাওসার ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি। ক্যাসিনোকাণ্ডে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ঢাবি ক্যাম্পাস ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা যায় নিউমার্কেট, সায়েন্সল্যাব ও জিগাতলা এলাকায়। যদিও ডিএমপি রমনা বিভাগের পুলিশের দাবি, এখন পর্যন্ত কাউকেই শনাক্ত করতে পারেননি তারা। তবে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে। রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. সারোয়ার জাহান বলেন, সম্প্রতি এই ডিভিশনের দায়িত্ব পেয়েছি। এ এলাকায় যারা গুলি চালিয়েছিল, তাদের শনাক্ত করতে কাজ করছি।
গত ২ আগস্ট জুমার নামাজের পর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর উত্তরা। পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের টানা সংঘর্ষ হয়। সেখানেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি অন্তত তিন বহিরাগত সাধারণ পোশাকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়। তাদের মাথায় ছিল হেলমেট। মাইলস্টোন কলেজের সামনে ওই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, অস্ত্রধারীরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ওই তিনজনের ছবিও প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে একজন লাল হেলমেট ও কালো টিশার্ট পরা ছিল। সিলভার কালারের পিস্তল হাতে গুলি করতে দেখা যায় তাকে। ওপর থেকে তোলা ছবিতে তার চেহারা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার নাম হাফিজ উর রহমান। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-মানবাধিকার সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া মুখে দাঁড়ি, কালো টিশার্ট ও জিন্স পরিহিত যুবককে শটগান থেকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। আরেকজন কালো হেলমেট ও সাদা ফুলহাতা শার্ট পরা ছিল।