আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রাম নগরের ঘাটগুলো থেকে টাকা আদায়ের মুখও পরিবর্তন হয়েছে। গত ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের লোকজন টাকা আদায় করতেন, এখন করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। শুধু তাই নয়, বিএনপির লোকজন ঘাটগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাছে বুঝিয়ে দিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, করপোরেশনের আওতায় কর্ণফুলী নদী ও নগরের বড় খালগুলোতে ১৯টি ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি ঘাট থেকে টাকা আদায়ের জন্য গত বছর ইজারা পাওয়া ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থক কিংবা আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যম ইজারা পেয়েছিলেন।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দৃশ্যপট বদলে যায়। এখন ঘাটগুলোর দখল নিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. ওসমান ও তার লোকজন চারটি, বিএনপি–সমর্থিত সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইল ও তার লোকজন দুটি ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। সদরঘাটের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিএনপি সমর্থক মোহাম্মদ নাছির। নগরের পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাটের দায়িত্ব বুঝে পেয়েছেন পুরোনো ইজারাদার। ৭ নম্বর রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি-সংলগ্ন ঘাটের মাঝির কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন লোকজন ঘাটগুলোর দখল নিয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছেন। যারা ইজারা নিয়েছেন, তাদের লোকদের ঘাট থেকে টাকা তুলতে বাধা দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতি নিরসনে ঘাটগুলো ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। যারা সর্বোচ্চ দর দেবেন, তাদের ঘাট ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ইজারাদারেরা জানান, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. ওসমান ও তার লোকজন সল্টগোলা, ৯ নম্বর বিওসি ঘাট, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট ও ১২ নম্বর তিনটিংগা ঘাট দখল নিয়ে খাস আদায় করছেন। এসব ঘাট থেকে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হয়।
মূলত আওয়ামী লীগের লোকজনই ঘাটটি পরিচালনা করতেন। তাদের একজন বলেন, তারা আর ঘাটে যেতে পারছেন না। বিএনপির নেতা মো. ওসমান তার লোকজন দিয়ে ঘাট থেকে টাকা তুলছেন।
নগরের বিমানবন্দর সড়কের পাশে মহেশখালে এ ঘাট। নৌকার মাঝি মো. হোসেন ও স্থানীয় দুই বাসিন্দা জানান, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঘাট থেকে টাকা আদায়ের মানুষও পরিবর্তন হয়েছে। এখন ওসমানের লোকজন এসে টাকা নিয়ে যান। আগে প্রতিদিন ৯ হাজার টাকা দিতে হতো। এখন সাড়ে আট হাজার টাকা দেন। এ ঘাট থেকে প্রতিদিন ২৫–৩০ হাজার টাকা আয় হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. ওসমান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে একসময় তাদের দলের লোকজনই ঘাটগুলো ইজারা নিতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের লোকজনদের উচ্ছেদ করে ঘাটগুলো নিয়ে নেন। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই, বিএনপিও নেই। দুই দলই সমান সমান। তাই আগের ইজারাদার ও বিএনপির লোকজন মিলেমিশে ঘাটগুলো পরিচালনা করছেন। আর তিনি এর সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত নন। দায়িত্বে আছেন বলে তার নাম আসছে।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনের ঘাটগুলো থেকে টাকা আদায় করা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। এখন আইনি জটিলতা নিরসন করে ঘাটগুলো ইজারা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।