আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান সংবাদ
প্রথম আলো:
জামায়াত ও ছাত্রশিবির নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল হলো
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে জামায়াত ও তাদের ছাত্রসংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল।
নিষিদ্ধ ঘোষণার ২৮ দিনের মাথায় গতকাল বুধবার সেই আদেশ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাস-সহিংসতার সঙ্গে সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। সরকার বিশ্বাস করে, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গসংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয়। তাই সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ১৮ (১) ধারার ক্ষমতাবলে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণাসংক্রান্ত ১ আগস্টের প্রজ্ঞাপন বাতিল করল।
তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের চার দিন আগে ১ আগস্ট দলটিকে নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল বলে
যুগান্তর:
বন্যার পানি কমলেও দুর্ভোগ পাহাড়সম
দেশের বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুরসহ বেশির ভাগ জেলায় বাড়িঘর ও সড়ক থেকে পানি নামছে। তবে বানভাসিরা এখন পাহাড়সম দুর্ভোগের শিকার। বন্যায় অনেকের কাঁচা ঘর ভেঙে গেছে। পাকা ঘরেও আসবাবপত্রসহ যাবতীয় সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বাড়িঘর বসবাস উপযোগী করার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে তারা। বন্যায় গবাদি পশু, হাস-মুরগি ও মাছের খামার ভেসে যাওয়ায় অনেকের অর্থনৈতিক অবলম্বনও শেষ হয়ে গেছে। কারও কারও দোকানে পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবর্ণনীয় ক্ষতি কীভাবে পোষাবেন, কীভাবে বছরের পর বছর গড়া বাসস্থানের নানা উপকরণ আবার জোগাড় করবেন, সেই দুশ্চিন্তায় পাগলপ্রায় অনেকে। পাশাপাশি অনেকের পেটে দানাপানি নেই। আশ্রয়কেন্দ্র বা প্রধান সড়কের আশপাশের বাসিন্দারা ত্রাণ পেলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মানুষই এখনো প্রয়োজনীয় খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না। ফলে খেয়ে-না-খেয়ে সীমাহীন কষ্টে দিন কাটছে তাদের। এছাড়া অনেক এলাকায় এখনো সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন। এদিকে নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার কোথাও কোথাও পানি কিছুটা কমলেও বৃষ্টির কারণে আবারও বেড়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী রেজা বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত ৩১ জন মারা গেছেন। প্রায় ৫৮ লাখ ২২ হাজার ৭৩৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, দেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৪টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যায় মৃতদের মধ্যে কুমিল্লায় ১২, ফেনীতে ২, চট্টগ্রামে ৫, খাগড়াছড়িতে ১, নোয়াখালীতে ৬, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১ এবং কক্সবাজারে ৩ জন। মৌলভীবাজারে দুই ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয়দানের জন্য ৪ হাজার ৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৫১০ জন লোক এবং ৩৯ হাজার ৫৩১টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুমিল্লা, ব্রাহ্মণপাড়া ও নাঙ্গলকোট : গোমতীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগ। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটেও মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। বুড়িচংয়ের কৃষক মনু মিয়া যুগান্তরকে বলেন, কৃষিকাজের পাশাপাশি তিনটি গরু পালন করেছি। হঠাৎ গ্রামে পানি ঢুকে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। শেষ সম্বল ৩টি গরু। তিনি বলেন, জানি না কোথায় নিয়ে যাব। আপাতত উঁচু কোনো স্থানে নিয়ে রাখব। পরে গাড়ি দিয়ে নিরাপদ কোনো স্থানে নিয়ে যাব। বাকশিমূল গ্রামের আবু সায়েম রনি বলেন, গ্রামে বুকসমান পানি। সবকিছু চোখের সামনে তলিয়ে গেছে। শুধু দুটি গরু নিয়ে বের হয়েছি। এখন এগুলো ট্রাকে করে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যাব। নিজস্ব অর্থায়ন ও জনবল দিয়ে বুড়িচংয়ে ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষকে খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন সমাজসেবক ও রাজনীতিক এটিএম মিজানুর রহমান।
কালবেলা:
২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা পকেটে পুরেছেন ব্যাংক পরিচালকরা
ব্যাংক খাতে পরিচালকদের লুটপাট চলছে দীর্ঘদিন থেকেই। এই লুট থামাতে নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে পরিচালকদের ওপর কঠোর আইন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পেরে অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে একে অন্যের ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ হাতিয়ে নিচ্ছেন। আবার যেসব পরিচালকের মাধ্যমে সুবিধা নিচ্ছেন, তাদের নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ ছাড়েও সহায়তা করছেন ব্যাংক পরিচালক। এক কথায় মিলেমিশে লুটপাটে নেমেছিলেন ব্যাংক পরিচালকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ২০ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংক খাতে পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এই ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আট বছরে ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৬০ শতাংশ। দেশে বর্তমানে নতুন-পুরোনো মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি ৫২টি এবং ৯টি বিদেশি ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংকের মোট পরিচালকের সংখ্যা ৭৬০ জন হলেও এ ধরনের সমঝোতাভিত্তিক বড় অঙ্কের ঋণ বিনিময় করেন শতাধিক পরিচালক। যাদের কয়েকজন বেশি বিতর্কিত। মূলত তাদের কাছেই পুরো ব্যাংকিং সেক্টর জিম্মি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগে নিজ ব্যাংক থেকেই পরিচালকরা বেশি ঋণ নিতেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে তাদের মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ নিতে পারছেন না। তবে তাদের অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে কোনো বাধা নেই। ফলে পরিচালকরা এখন পরস্পর যোগসাজশে একে অন্যের ব্যাংক থেকে যেমন ঋণ নিচ্ছেন, তেমনি প্রভাব খাটিয়ে নানা সুবিধাও নিচ্ছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিচালকরা তাদের ঋণের তথ্য গোপনে গড়ে তুলছেন বেনামি প্রতিষ্ঠান। ওইসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রাখা হচ্ছে ব্যাংক পরিচালকের আত্মীয় বা পরিচিতজনদের। এক্ষেত্রে কোনো কোনো পরিচালক তার ড্রাইভার ও সহকারীদের নাম ব্যবহার করছেন।তথ্য বলছে, ব্যাংক খাতে নিজ ব্যাংক থেকে পরিচালকরা ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন। তবে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকার মতো। অর্থাৎ ব্যাংক খাতে পরিচালকদের ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। এইসব ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণও প্রায় হাজার কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছে, পরিচালকদের নামে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার ঋণ থাকলেও তাদের ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। বিশেষ করে, গত ১৫ বছরে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা বেনামে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণ হিসাব করলে পরিচালকদের ঋণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কালের কন্ঠ:
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে না
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে না বলে মনে করছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে, তখন আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে।’ কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার পক্ষে মত দেন তিনি, যদি না দলটি কোনো জঙ্গিবাদী বা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, সত্যিকার অর্থে যদি কোনো রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদী বা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকে, তাহলে প্রচণ্ড সততার সঙ্গে তদন্ত করে এমন কিছু (নিষিদ্ধ) করা যেতে পারে।
সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে গতকাল সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো নীতিগত অবস্থান থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেনি। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক অপকৌশলের অংশ হিসেবে, ছাত্র-জনতার বিপ্লব নির্মমভাবে দমন করার জন্য ইস্যুটিকে এভাবে ব্যবহার করেছিল।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছে, তারা (আওয়ামী লীগ) জামায়াত-বিএনপিকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল এবং ওই ন্যারেটিভের অংশ হিসেবে হঠাৎ করে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যে ন্যারেটিভ দিয়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তা সত্যি নয়।
সেটি ছাত্র-জনতার বিপ্লব ছিল। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে একটি দলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে নিষিদ্ধ করা—আমরা এই মিথ্যা ন্যারেটিভের অংশ হতে পারি না। আমরা ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পরাজিত ও প্রত্যাখ্যাত একটি দলের অন্যায় ন্যারেটিভের অংশ হতে পারি না।’
নয়াদিগন্ত:
ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীদের টাকা আত্মসাতের হিসাব হচ্ছে
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পদত্যাগী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নামে-বেনামে কত টাকা ঋণ আত্মসাৎ করেছেন, তার হিসাব করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং তা বিদেশে পাচার করেছেন, যার সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ের কাজ চলমান। আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ লাখ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ না করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ধরনের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইতোমধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (জিআইবি), ইউনিয়ন ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় সংস্কার কার্যক্রম শুরু হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ব্যাংকগুলোর নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আত্মসাৎ হওয়া অর্থের প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং তাদের মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থের প্রকৃত পরিমাণ নির্ণয়ের লক্ষ্যে নিরীক্ষা (অডিট) কার্যক্রম শুরু করা হবে।
অর্থ আত্মসাৎকারী ব্যক্তিদের বিচারের প্রতি সরকারের কঠোর মনোভাবের ইঙ্গিত করে প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহায়তা নিয়ে আত্মসাৎকারীদের স্থানীয় সম্পদ অধিগ্রহণ এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু হয়েছে। অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা চেয়ে ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছে সরকার।
শিগগিরই ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে আরো জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যাংকে তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করবে কমিশন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠনের জন্য ছয় মাসের মধ্যে একটি বাস্তবায়নযোগ্য রোডম্যাপ প্রণয়ন করবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের লক্ষ্য হলো সব আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পরিপালনে সক্ষম একটি শক্তিশালী ব্যাংকিং খাত গড়ে তোলা। তবে এ উদ্দেশ্য সফল করতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময়, আন্তর্জাতিক কারিগরি সহায়তা ও অর্থের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার অর্থ আত্মসাৎকারীদের দেশী-বিদেশী সম্পদ অধিগ্রহণ এবং বিদেশ থেকে ফেরত এনে ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর এই পুনর্গঠন ও আর্থিক খাতের কাঠামোগত সংস্কার সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে সরকার বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
কানাডাকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন ইউনূস
বাসস জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে পুনর্গঠনে সহায়তা করতে কানাডাকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।
প্রফেসর ইউনূস সেদেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও উন্নয়ন সংস্থাসহ কানাডার সাথে তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে তার সরকারের কানাডার সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তার গল্প কানাডার স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় বিনিয়োগ দরকার,’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে একটি অর্থনীতি পেয়েছে, যেটি বিপুল পরিমাণ ঋণের ভারে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হলো অর্থনীতি ঠিক করা।’ তিনি বলেন, ‘সরকার পূর্ববর্তী শাসনামলে ভেঙে পড়া গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকেও পুনরুদ্ধার করছে এবং শাসনে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা আনছ
দৈনিক সংগ্রাম:
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধে আওয়ামী প্রজ্ঞাপন বাতিল
ছাত্রজনতার বিপ্লবকে অন্যায়ভাবে পরাজিত করার কৌশল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল : আসিফ নজরুল
স্টাফ রিপোর্টার : জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও এর সব অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে দেয়া বিগত আওয়ামী সরকারের সময় দেয়া প্রজ্ঞাপন বাতিল করেছে সরকার। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এই প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন।
গতকাল দেয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘যেহেতু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাস ও সহিংসতায় সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় নাই; এবং যেহেতু সরকার বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে জড়িত নহে’ তাই দলটির নিষিদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হলো।
এর আগে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী এডভোকেট শিশির মনির বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তা প্রত্যাহার করেছে সরকার। আজই গেজেট প্রকাশ হবে। তিনি জানান, এখন নিবন্ধন ফিরে পেতে আইনি লড়াই শুরু করা হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ভিন্ন দিকে নিতে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
এ দিকে বিশেষ সময়ে বিশেষ উদ্দেশ্যে জামায়াতেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও এর সব অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারির পর গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে জামায়াতেকে নিষিদ্ধ করে নাই কেন। যখন ছাত্র-জনতার বিপ্লব চলছিল তখন তা নির্মমভাবে সন্ত্রাসী চিহ্নিত করে এই আন্দোলনকে দমাতে চেয়েছিল। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে অন্যায়ভাবে পরাজিত করার কৌশল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আসলে জামায়াতকে চাপে রেখে তাদের পক্ষে কাজ করাতে চেয়েছে’Ñ এমন মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, সেটা গত ১৫ বছরে পারেনি। তাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় যেটা করল সেটা তাদের অপকৌশল।
মানবজমিন:
৬ বছরে ৫১,৬৮০ অস্ত্রের লাইসেন্স
নজরদারিতে মালিকরা
নিজস্ব সুরক্ষায়, প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষায় বিত্তশালী ব্যক্তিরা বেসামরিকভাবে লাইসেন্সের মাধ্যমে বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। গত
ছয় বছরে সারা দেশে এই তিন ক্যাটাগরিসহ বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ৫১ হাজার ৬৮০টি। এর মধ্যে ব্যক্তির নামে ৪৫ হাজার ২২৬টি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৫ হাজার ৮৪টিরও বেশি। ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী। বিভিন্ন পেশাজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে রয়েছে ২১ হাজার ৬৮০টি বৈধ অস্ত্র। এসব মালিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন। বৈধ অস্ত্র সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেয়া বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সের সংখ্যা ৫১ হাজার ৬৮০। কিন্তু এর প্রকৃত সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বৈধ অস্ত্রের হিসাব সম্পর্কে এখন পর্যন্ত সম্মিলিত তথ্য আসেনি।
দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারীর সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও রাজস্ব সেভাবে আদায় করা হয়নি।
যাদের অনেকেরই আয়কর ফাইলে দেখানো আয় ও সম্পদের হিসাবে কৌশলে বড় অঙ্কের কর ফাঁকি দিয়ে অস্ত্র ব্যবহার করেছেন বলে জানিয়েছে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সূত্র জানায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বেসামরিক জনগণকে প্রদানকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইতিমধ্যে স্থগিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা ও জমা দেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। এতে আগামী ৩রা সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলা-বারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
অস্ত্র আইন, ১৮৭৮ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬ অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় ব্যবহার গ্রহণ করে থাকেন। স্পেশাল ব্রাঞ্চ কর্তৃক তৈরি করা বেসামরিক আগ্নেয়াস্ত্র্ত্রের তথ্য সংরক্ষণ সফটওয়্যার এ আগ্নেয়াস্ত্রের হাল নাগাদ তালিকা সম্পর্কে জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৫১,৬৮০টি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ধরন অনুযায়ী পিস্তল ৪,৮৪০টি, রিভলবার ২,৬৯২টি, একনলা বন্দুক ২১,৩৯৫৪টি, দোনলা বন্দুক ১১,০২২টি, শটগান ৫,৯৩৮টি, রাইফেল ১,৮৬৪টি। এ ছাড়া এর আগের বছরগুলোর আগ্নেয়াস্ত্রের বিষয়ে হালনাগাদ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একইসঙ্গে এ সকল আগ্নেয়াস্ত্রে সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সধারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন জেলার অন্তর্গত থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর, আগ্নেয়াস্ত্র লুটপাটসহ গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় পুলিশের স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় গত ১৫ বছরের ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের বিষয়ে পুলিশ এখনো স্বাভাবিক কাজ শুরু করতে পারেনি। অনেক থানায় লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্রে জমা নেয়ার ক্ষেত্রে জটিলতাসহ অস্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্রশস্ত্র্ত্র এখনো সম্পূর্ণ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
বনিক বার্তা:
ফারাক্কা উদ্বোধনের দিন আমন্ত্রণ সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে কোনো প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়নি
১৯৭৫ সালের এপ্রিলে ফারাক্কা ব্যারাজ উদ্বোধন করে ভারত। এ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কথা ছিল বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রীরও। তখন পানিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। তবে সরকারের সিদ্ধান্তেই ওই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত অংশগ্রহণ করেননি। এর মূল কারণ ছিল ফারাক্কা ব্যারাজ নিয়ে বাংলাদেশের অসন্তোষ। বাংলাদেশের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির আগেই ব্যারাজটি চালু করে দেয় ভারত, যা ওই সময় দেশে বড় ধরনের অসন্তোষ তৈরি করে। এর প্রতিক্রিয়ায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। এরপর পার হয়েছে প্রায় ৪৯ বছর। এখনো বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে চাপে ফেলার বড় এক ক্ষেত্র হয়ে আছে ফারাক্কা ব্যারাজ তথা গঙ্গার পানি বণ্টন।
ফারাক্কা ব্যারাজ নিয়ে এ ভূখণ্ডে অসন্তোষের ইতিহাস প্রায় ৭৫ বছরের। ১৯৫১ সালে ভারত যখন গঙ্গা নদীতে ব্যারাজটি নির্মাণের পরিকল্পনা করে, তখনই এ নিয়ে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে অসন্তোষ তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে সে সময় পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তিও তোলা হয়। বিষয়টি নিয়ে দু্ই সরকারের মধ্যে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এরপর থেকে গত পাঁচ দশক বাংলাদেশ ও ভারত—দুই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি আলোচিত বিষয় হয়ে আছে ফারাক্কা ব্যারাজ।
বিশেষত বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়ে ফারাক্কা থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য পানির হিস্যা আদায় করে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তবে কার্যত ব্যারাজটি নিয়ে অসন্তোষ এখনো রয়েই গেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, স্বাধীনতার পর দেশে ভারতবিরোধী মনোভাব প্রকট হয়ে ওঠার অন্যতম বড় কারণ ছিল ফারাক্কা ব্যারাজ। এমনকি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে যেসব ক্ষোভ কারণ হিসেবে কাজ করেছে, তার অন্যতম হলো গঙ্গার পানি আদায়ে বঙ্গবন্ধুর ব্যর্থতা।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৬ সালে। এরপর এর নবায়ন নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
সমকাল:
চারদিকে বানের ক্ষত, ঘুরে দাঁড়ানোই হবে চ্যালেঞ্জ
ধীরগতিতে নামছে বানের পানি। অনেকেই ছাড়ছেন আশ্রয়কেন্দ্র। এতদিন যে জনপদ ডুবন্ত ছিল, পানি সরতেই ভেসে উঠছে ধ্বংসযজ্ঞ। বিধ্বস্ত ঘর, এবড়োখেবড়ো রাস্তাঘাট, ভাঙা ব্রিজ, ভেঙে পড়া বিদ্যুতের খুঁটি, ধসে পড়া অবকাঠামো ধরা পড়ছে চোখে। পথে পথে যেন বন্যার ক্ষত।
বিধ্বস্ত ঘরে আতঙ্ক নিয়েই উঠছেন কেউ কেউ, আবার অনেক ঘর থেকে পানি না সরায় ছাড়েননি আশ্রয়কেন্দ্র। ফেনী শহর থেকে পানি সরলেও ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও পরশুরামের ঘরবাড়ি ডুবে আছে এখনও। নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ নতুন করে দুর্ভোগে পড়েছেন।
এদিকে, ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার জন্য প্রশাসনকেই দুষছেন অনেকে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রচুর ত্রাণ এলেও সমন্বয় নেই। প্রশাসনের ব্যক্তিদের অনেকটা গা-ছাড়া ভাব। এখন পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা কিংবা গ্রামে গ্রামে কমিটি গঠনের কাজটিও শেষ হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যানরা না থাকায় এ তালিকা করতে সমস্যা হচ্ছে। সড়কের পাশের বাড়িঘর ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মানুষজন একাধিকবার ত্রাণ পাচ্ছেন। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ যাচ্ছে না। এমন বিশৃঙ্খলা চলতে থাকলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। ১১ জেলার মধ্যে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা– এ চার জেলার বানভাসি মানুষ আছে বেশি কষ্টে।
এদিকে, কবে ঠিক হবে রাস্তাঘাট, মাথা গোঁজার ঠাঁই হারানো মানুষ কোথায় আশ্রয় নেবে– এসব প্রশ্নের উত্তর জানা নেই কারও। বিধ্বস্ত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্থানীয় প্রশাসনেরও নেই তেমন উদ্যোগ। মানুষের ভোগান্তি দূর করতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার জানিয়েছে, দেশের ১১ জেলায় চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩১ জন। মঙ্গলবার এ সংখ্যা ছিল ২৭। ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারের ৭৩ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত। ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৪টি পরিবার এখনও পানিবন্দি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৮ লাখ ২২ হাজার ৭৩৪। বিধ্বস্ত এক জনপদ প্রবাসী অধ্যুষিত ফেনী জেলা অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ এক জনপদ, ব্যবসা-বাণিজ্যেও এগিয়ে। তবে পুরো জেলায় এখন চলছে হাহাকার। চার দিকেই ভঙ্গুর দশা। গতকাল ফেনীর মহিপাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়া পর্যন্ত সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তাঘাট ভেঙে একাকার। পানির স্রোতে মহাসড়কে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সড়ক বিভাজকে থাকা গাছগুলো ভেঙে পড়ে আছে। ফলে যান চলছে স্বাভাবিকের চেয়ে কম গতিতে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনারবাহী লরি যেমন বিপদে পড়ছে, তেমনি বিপাকে পড়ছে ত্রাণের গাড়ি।
ফেনীর লালপোল ও লেমুয়া ব্রিজ বানের তোড়ে ভেঙে গেছে। পরশুরামের কাউতলী ইউনিয়নের চম্পকনগর-কাশীনগরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে যোগাযোগের সড়ক মুহুরী নদীর বাঁধের ওপর করা। বাঁধটি বিভিন্ন স্থানে এমনভাবে ভেঙেছে, এখন হেঁটে চলাচল করা কষ্টকর। এক রকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এ এলাকায় ত্রাণও পৌঁছাচ্ছে না সহজে। অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্যোগের পর প্রথম সোমবার চিড়া-মুড়ির মতো শুকনো খাবার এসে পৌঁছায় কাশীনগরে।
দেশরুপান্তর:
সাফ শিরোপা জুলাইয়ে শহীদদের উৎসর্গ
মাত্র দুই সপ্তাহের প্রস্তুতিতেই শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ দল। সেটাও নেপালের মাটিতে স্বাগতিকদের রীতিমতো বিধ্বস্ত করে। এমন বিজয় গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আত্মত্যাগকারীদের উৎসর্গ করেছেন লাল-সবুজের সৈনিকেরা। আজ বীরের বেশে দেশে ফিরবেন মারুফুল হকের শিষ্যরা। তবে তাদের মনের কোণে থাকবে যাদের জীবনের বিনিময়ে স্বৈরাচার পতন ঘটেছে, সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।
ফাইনালের স্কোরলাইনটা একপেশে করে বাংলাদেশের জয় ৪-১ ব্যবধানে। এমন সাফল্যের রূপকার অবশ্যই খেলোয়াড়রা। তবে অভিজ্ঞ কোচ মারুফুলকে কৃতিত্ব না দিয়ে পারা যাবে না। এক অস্থির সময়ে যুবাদের দায়িত্ব নিয়ে তাদের হৃদয়ে এই কোচ গেঁথে দিয়েছেন বিজয়ের মন্ত্র। বুধবার আনফা অ্যাকাডেমিতে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাই এই কোচকে নিয়ে শিষ্যদের উদযাপনটা হলো দেখার মতো। আর ম্যাচ শেষে মারুফ স্মরণ করলেন আন্দোলনে প্রাণ হারানো ছাত্র-জনতাকে, ‘আমি প্রথমে বলতে চাই আমাদের এই সাফল্য, এই শিরোপা, গত মাস ও এই মাসে যে ছাত্র-জনতারা আন্দোলনে আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের উদ্দেশে উৎসর্গ করছি।’ এর পরই তিনি প্রশংসায় ভাসিয়েছেন শিষ্যদের। যারা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এনে দিয়েছেন কাক্সিক্ষত শিরোপা। তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন ফুটবলাররা তার পরিকল্পনা মেনে খেলায়, ‘এই ম্যাচের আগে এক দিন মাত্র রিকভারির সময় পেয়েছি এবং খেলোয়াড়দের আমার নিজের সব মেধা দিয়ে রিকভারি করার চেষ্টা করেছি। ম্যাচ শুরুর আগে ওদের বলেছি, ধীরেসুস্থে খেলার জন্য। যেহেতু এটা ওদের (নেপালের) হোম গ্রাউন্ড, ওরা আমাদের ভেতরে আসবেই, অ্যাটাক করবে। তাই ছেলেদের বলেছিলাম কাউন্টার অ্যাটাক করার জন্য। তবে ১০-১২ মিনিট পর যখন দেখলাম তারাই উল্টো চাপটা নিয়ে ফেলেছে হোম গ্রাউন্ডের। তখন কৌশল বদলে আমরা আক্রমণে চলে গিয়েছিলাম। যে খেলাটা পাসিং ফুটবল, যেটা একেবারে শুরু থেকে খেলাতে চেয়েছিলাম। কারণ এখানে অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা টেকনিক্যালি অনেক সাউন্ড, যাদের দিয়ে পাসিং ফুটবল খেলানো সম্ভব। ফাইনাল ম্যাচে তারা সেটা করতে পেরেছে মাথা ঠান্ডা রেখে। এ জন্য খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’
জোড়া গোল করে ফাইনালের নায়ক মিরাজুল ইসলাম সব কৃতিত্বই দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তাকে, ‘আল্লাহপাক সঙ্গে ছিলেন বলেই আমরা শিরোপা জিততে পেরেছি। ভারতের বিপক্ষে আমরা অত ভালো না খেলেও জিতেছি। আমরা নিজেরা কেউ কিছু করিনি, সব আল্লাহ করেছেন। সত্যি বলতে, মাঠে নামার পর চিন্তায়ও ছিল না আসরের সেরা গোলদাতা হব। আমার চিন্তা ছিল দলকে এগিয়ে নেওয়ার। সেট-পিস থেকে একটা গোল করেছি। এটা আমি চিন্তাও করিনি, আল্লাহর অশেষ কৃপায় হয়েছে।’
নিয়মিত অধিনায়ক ও গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবণের চোটের কারণে ফাইনালে তেকাঠী সামলানো মোহাম্মদ আসিফ হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপার। সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে টাইব্রেকারে দুটি সেভ করার মতোই ফাইনালেও বেশ কবার ত্রাতার ভূমিকা নেওয়া আসিফ বলেন, ‘বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, দেশবাসীর দোয়া ও সতীর্থদের সমর্থনে আজ আমি দুই ম্যাচ খেলেই টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপার হতে পেরেছি। সেই অনূর্ধ্ব-১৭ থেকে খেলছি। ১৯-২০-এও খেলেছি; তবে চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি কখনো। শেষবার অনূর্ধ্ব-২০ আসরে রানার্সআপ হয়ে সবাই খুব কান্নাকাটি করেছিলাম। এবার চেয়েছিলাম যাতে কান্নাকাটি করা না লাগে। একটা শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরতে পারি। এই অর্জনের আনন্দ অন্য রকম।’