ঢাকা ০৯:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo তিন শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে শাহ সুলতান কলেজ ছাত্রশিবিরের নবীন বরণ অনুষ্ঠান Logo ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল, প্রবাসীদের ব্যালটে থাকবে না প্রার্থীর নাম Logo অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতিবাদস্বরূপ কক্সবাজার গিয়েছি: হাসনাত Logo ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল: ইসি Logo বগুড়ায় এসএসসি/দাখিল পরিক্ষায় জিপিএ ৫ শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিলো ছাত্রশিবির Logo সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীর বিচারের দাবিতে সুবিপ্রবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ Logo দ্বীপ হাতিয়াকে উন্নয়নের মডেল গড়ার ঘোষণা দিলেন জামায়াত নেত এ্যাড. শাহ মাহফুজ Logo মেহরিন চৌধুরীর নামে অ্যাওয়ার্ড চালু করবে সরকার : প্রেসসচিব Logo শাহজালাল বিমানবন্দরে ১২ কোটি টাকার স্বর্ণ জব্দ Logo শ্রীপুরে স্ত্রীকে হত্যা,মাদক কারবারি স্বামীর বাড়ি পুড়িয়ে দিল গ্রামবাসী

নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহারের চেষ্টায় জামায়াতে ইসলামী

৫ আগস্টে হাসিনার পতনের পর ঢাকাসহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলো সচল করাসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এই মুহূর্তে দলটির সব মনোযোগ দুটি বিষয়ে এর একটি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পাওয়া এবং দল নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াত আইনি প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে ছাত্র জনতার আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে নির্বাহী আদেশে দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণার আদেশটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে দ্রুত প্রত্যাহারের জন্য সংশ্লিষ্ট মহলে তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াত।

জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা ও নিবন্ধন দুটি বিষয়ে আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে ইতিমধ্যে হাইকোর্টের একজন আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করছেন।

গত বছরের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে দেন। ওই দিন আদালতে জামায়াতের করা আপিলের পক্ষে নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য ছয় সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী মো. জিয়াউর রহমান। তিনি শুনানি মুলতবির আবেদন করেন; কিন্তু আদালত ওই আবেদন আমলে না নিয়ে আপিল খারিজ করে দেন। এর মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে। এখন নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াত আবার আপিল বিভাগে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে, ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে শেখ হাসিনার সরকার।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় জামায়াত, ছাত্রশিবিরসহ তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর তিন দিন পর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে সরকারের পতন হয় এবং শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। শেখ হাসিনার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরাও জনরোষের মুখে আত্মগোপনে চলে যান।

এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের দিন ৫ আগস্টেই দৃশ্যপটে আসে জামায়াত। সেদিন দুপুরে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বৈঠকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন বলে গণমাধ্যমকে জানান সেনাপ্রধান। ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিভিন্ন দলের বৈঠকেও জামায়াতের আমির অংশ নেন। এরপর ৮ আগস্ট বঙ্গভবনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয় জামায়াত। ১২ আগস্ট রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াতের আমিরসহ প্রতিনিধিদল।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সেদিনের বৈঠকে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা প্রশ্ন তোলেন, তারা কোন বৈধতায় সম্মানিত উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ওই বৈঠকে তাৎক্ষণিক একজন উপদেষ্টা এ বিষয়ে জামায়াতকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন। এ ক্ষেত্রে আদালত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবে বলে জামায়াত নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়। তবে জামায়াত দাবি করে, শেখ হাসিনার সরকার যেই নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে হঠাৎ করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তারাও যেন নির্বাহী আদেশে তা প্রত্যাহার করেন।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘নিবন্ধনের বিষয়ে আমরা আইনি পথেই এগোব। আশা করি, আদালতে আমরা সুবিচার পাব।’

জানা গেছে, নিবন্ধন ফেরানো এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের মনোভাব ইতিবাচক বলে জামায়াতের নেতারা মনে করছেন।

তাদের দাবি, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার ছাত্র আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিল, যা কাজে লাগেনি। জামায়াত ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং দলটির মাঠপর্যায়ের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী এই আন্দোলনে নিহত ও আহত হয়েছেন। যদিও জামায়াত হতাহতের তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

তিন শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে শাহ সুলতান কলেজ ছাত্রশিবিরের নবীন বরণ অনুষ্ঠান

নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহারের চেষ্টায় জামায়াতে ইসলামী

আপডেট সময় ০১:০৩:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

৫ আগস্টে হাসিনার পতনের পর ঢাকাসহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলো সচল করাসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এই মুহূর্তে দলটির সব মনোযোগ দুটি বিষয়ে এর একটি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পাওয়া এবং দল নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াত আইনি প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে ছাত্র জনতার আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে নির্বাহী আদেশে দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণার আদেশটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে দ্রুত প্রত্যাহারের জন্য সংশ্লিষ্ট মহলে তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াত।

জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা ও নিবন্ধন দুটি বিষয়ে আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে ইতিমধ্যে হাইকোর্টের একজন আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করছেন।

গত বছরের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে দেন। ওই দিন আদালতে জামায়াতের করা আপিলের পক্ষে নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য ছয় সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী মো. জিয়াউর রহমান। তিনি শুনানি মুলতবির আবেদন করেন; কিন্তু আদালত ওই আবেদন আমলে না নিয়ে আপিল খারিজ করে দেন। এর মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে। এখন নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াত আবার আপিল বিভাগে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে, ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে শেখ হাসিনার সরকার।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় জামায়াত, ছাত্রশিবিরসহ তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর তিন দিন পর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে সরকারের পতন হয় এবং শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। শেখ হাসিনার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরাও জনরোষের মুখে আত্মগোপনে চলে যান।

এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের দিন ৫ আগস্টেই দৃশ্যপটে আসে জামায়াত। সেদিন দুপুরে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বৈঠকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন বলে গণমাধ্যমকে জানান সেনাপ্রধান। ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিভিন্ন দলের বৈঠকেও জামায়াতের আমির অংশ নেন। এরপর ৮ আগস্ট বঙ্গভবনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয় জামায়াত। ১২ আগস্ট রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াতের আমিরসহ প্রতিনিধিদল।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সেদিনের বৈঠকে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা প্রশ্ন তোলেন, তারা কোন বৈধতায় সম্মানিত উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ওই বৈঠকে তাৎক্ষণিক একজন উপদেষ্টা এ বিষয়ে জামায়াতকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন। এ ক্ষেত্রে আদালত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবে বলে জামায়াত নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়। তবে জামায়াত দাবি করে, শেখ হাসিনার সরকার যেই নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে হঠাৎ করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তারাও যেন নির্বাহী আদেশে তা প্রত্যাহার করেন।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘নিবন্ধনের বিষয়ে আমরা আইনি পথেই এগোব। আশা করি, আদালতে আমরা সুবিচার পাব।’

জানা গেছে, নিবন্ধন ফেরানো এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের মনোভাব ইতিবাচক বলে জামায়াতের নেতারা মনে করছেন।

তাদের দাবি, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার ছাত্র আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিল, যা কাজে লাগেনি। জামায়াত ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং দলটির মাঠপর্যায়ের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী এই আন্দোলনে নিহত ও আহত হয়েছেন। যদিও জামায়াত হতাহতের তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি।