বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-এর পরিচালক পদ থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন জালাল ইউনুস আর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) থেকে পদত্যাগের জন্য ফোন পেয়েও সেচ্ছায় পদ ছারতে নীরব আছেন আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি।তিনি জানিয়েছেন তার পদে থাকা না থাকার বিষয়টি তিনি ছেড়ে দিয়েছেন এনএসসি’র হাতে।
কোটাতে মনোনীত হয়েছেন এই দু’জন পরিচালক । তাই সেখান থেকে তাদের কল করেই পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন নিজেই তার পদত্যাগের বিষয়টি।
অপর দিকে, ববি বলেন, ‘আমাকে ক্রীড়া পরিষদ থেকে কল করে পদত্যাগপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে তাদের জানিয়েছি বিষয়টি নিয়ে তারাই যেন সিদ্ধান্ত নেন।’ তার মানে স্বেচ্ছায় পদ ছাড়তে রাজি নন তিনি। এটি হলে তাকে সরিয়ে দেয়ার এখতিয়ার এনএসসি’র রয়েছে বলেই জানা গেছে। অন্যদিকে তাদের পরিবর্তে মনোনীত হয়ে আসতে পারে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদিন ফাহিম।
বিসিবিতে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ আরও ২১ জন নির্বাচিত পরিচালক রয়েছেন । যে কারণে তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে জোর করে সরানো সম্ভব নয়। সেটি করতে গেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) নিষিদ্ধ করতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে। তবে জানা গেছে ৯ জন ছাড়া বাকি সব পরিচালকদের ওপর পদত্যাগের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। যদিও বেশির ভাগই আত্মগোপনে থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এদিন হঠাৎ করেই বিসিবি পরিদর্শনে আসেন আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তার আসার আগেই দুই পরিচালকের পদত্যাগের বিষয়টি সামনে আসে।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন পদত্যাগে রাজি হয়েছেন শোনা গেলেও সেটির কোনো সত্যতা মেলেনি। তার মধ্যে এনএসসি দু’জন নতুন পরিচালককে বিসিবিতে মনোনীত করে দিচ্ছেন। যারা কিনা পরবর্তীতে বিসিবি’র গঠনতন্ত্র অনুসারে পরিবর্তন আনতে পারবেন। জানা গেছে- বিশেষ করে জালাল ইউনুস ছাড়াও ইসমাঈল হায়দার মল্লিক, শেখ সোহেল, ওবায়েদ রশিদ নিজাম, মো. নজিব, তানভীর আহমেদ টিটু, নাঈমুর রহমান দুর্জয়দের বিসিবিতে আর দেখা যাবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ তারা প্রত্যেকেই বিদায়ী সরকার ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের ঘনিষ্ঠজন। তবে ববি এই প্রায় সব বোর্ডে থাকলেও তিনি ছিলেন উপেক্ষিত। লম্বা সময় তিনি নাজমুল হাসান পাপনদের সঙ্গে লড়াই করে টিকে ছিলেন। বিসিবি’র সাবেক মিডিয়া বিভাগের প্রধান ববি বর্তমান কমিটিতে দায়িত্ব পেয়েছিলেন টুর্নামেন্ট কমিটির। এবারো যখন বোর্ডে পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে সবার আগে এই নিবেদিত প্রাণ ক্রিকেট সংগঠককেই বাদ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও এনএসসি’র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তাদের মনোনীত কাউন্সিলরদের পরিবর্তনের এখতিয়ার রাখে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চাইলে নতুন করে কাউকে মনোনীত করতে পারবে।’
অন্যদিকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বিসিবি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নতুন করে ২ জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে মনোনীত করা হচ্ছে। এই কারণে পুরোনো ২ জনকে বাদ দিতে হচ্ছে। নতুন ২ জন হলেন সাবেক প্রধান নির্বাচক ও সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ। অন্যজন নাজমুল আবেদিন। এই ২ জনকে এনএসসি থেকে মনোনীত করা হচ্ছে। তারা বোর্ডে পরিচালক হিসেবে যুক্ত হবেন। এরপর পরিচালকদের মধ্য থেকে একজনকে সভাপতি নির্বাচিত করা হবে। সভাপতি হিসেবে ফারুক আহমেদ অনেকখানিই এগিয়ে রয়েছেন। তারা বিসিবিতে যোগ দিলে ৯ জন পরিচালক নিয়ে জরুরি সভা ডেকে বিসিবি পরিচালনার কাজ চলবে। ধীরে ধীরে বাকিরা পদত্যাগ করলে বা তারা তিনটি কার্যনির্বাহী কমিটির কোনো সভাতে উপস্থিত না থাকলে তাদের পরিচালক পদ খারিজ করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
বিসিবি’র গঠনতন্ত্র অনুসারে কোনো পরিচালক মানুষিক বিকারগ্রস্ত কিংবা দেশের আইনে আদালত থেকে শাস্তিপ্রাপ্ত না হলে তাদের পরিচালক পদ খারিজ করা সম্ভব নয়। তবে তারা যদি নিজে থেকে সরে যায় কিংবা বিসিবিতে আর কোনো সভায় অংশ না নেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে সভাপতির ক্ষমতায়। যে কারণে নতুনভাবে এনএসসি থেকে মনোনীত হয়ে আসা একজনকেই দেয়া হতে পারে সভাপতির দায়িত্ব। তবে তার আগে পাপনকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়াও বর্তমান পরিচালকদের বাদ দেয়া ও নতুন করে অ্যাডহক কমিটিতে গঠন করার বিকল্প ভাবনাও আছে এনএসসি’র।