ঢাকা ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ

দানবিক রাষ্ট্রের কারিকর/আওয়ামী লীগের শাসন

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৭:৫৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪
  • 366

আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান সংবাদ

বনিক বার্তা:

দানবিক রাষ্ট্রের কারিকর/আওয়ামী লীগের শাসন ২০০৯-২০২৪
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। ওই সময়ের পর থেকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দলটি ক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর ৭ মাস। এ সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে তিনটি। সবগুলোই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

এ দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতাসীন থাকা দলটির বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, বিরোধী মত দমন, সংবিধানকে সংশোধন, ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক খাতে সুশাসনের অভাব, তিনবারের বিতর্কিত নির্বাচন, ব্যাপক মাত্রায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পদক্ষেপগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলার পথও রুদ্ধ করা হয়েছিল নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখে এসবের সুযোগ তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সরকারের উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকার কথা থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনে দলীয় কর্মীর মতোই ভূমিকা রেখেছেন তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যবস্থা স্বৈরতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। ব্যাপক আকার পেয়েছে দুর্নীতি, বাড়তে বাড়তে গোটা ব্যবস্থাকেই গ্রাস করেছে। আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হয়ে পড়েছে দুর্নীতির সুরক্ষাদাতা। এক পর্যায়ে সরকারসংশ্লিষ্টরাও বুঝে যান, কোনো কারণে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হলে তার মূল্য তাদের জন্য মারাত্মক হবে।

প্রথম আলো:

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত করার চেষ্টা। শিগগিরই জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল গঠন করে বাংলাদেশে পাঠানো হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার বিচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলার বিচার হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত-বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার বিচার হয়। পরে তাঁদের সাজা কার্যকর করা হয়।

এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অনেকের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁদের বিচার করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক গতকাল বিকেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করেন। তাঁদের মধ্যে ফোনালাপের বিষয়টি দুজনই তাঁদের এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশ করেছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ব্যাপারে ফলকার টুর্কের সহায়তা চেয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার তাঁকে জানান, ছাত্র অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের তদন্তে খুব শিগগির জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল গঠন করে বাংলাদেশে পাঠানো হবে।

এদিকে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতিসংঘের একটি সূত্র গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানিয়েছে, ছাত্র আন্দোলনকালে হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হওয়ার কথা তিনি জেনেছেন। এই বিচার হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩–এর অধীনে। এই আইন অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের বিচারে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। যেহেতু জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি অনুমোদন করে না, তাই এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের যুক্ততার সুযোগ নেই।

তবে বাংলাদেশ চাইলে ছাত্র-জনতার গণ–আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্তে জাতিসংঘ আলাদা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহায়তা করতে তৈরি রয়েছে

সমকাল:

সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়।

শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালত এ আদেশ দেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সদরঘাট থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করে। এরপর রাতেই তাদের ডিএমপির ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মাইনুল হাসান মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ঢাকার নিউমার্কেট থানায় করা একটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। একজন ছাত্র এবং একজন হকার। এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব হত্যার ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে এই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর মূলত মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে চলে যান।

মানবজমিন:

ওদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে শঙ্কা
বাইশ বছর বয়সী মুস্তাকিম। রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ইএক্স-২ এ চিকিৎসাধীন। গুলিবিদ্ধ মুস্তাকিমের ডান পায়ের হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। মুস্তাকিম মানবজমিনকে বলেন, ১৯শে জুলাই বিকাল চারটার দিকে মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হই। পরে পপুলার হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে দুইদিন রাখার পর পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার অপারেশন করা হয়। ডান পায়ের হাঁটু পর্যন্ত কাঁটতে হয়েছে।

তিনি বলেন, ভাড়ায় প্রাইভেটকার চালাতাম। ডিউিটি শেষে বাসায় ফেরার পথে পুলিশের গুলিতে আহত হই।

আমার পা-টা এভাবে হারিয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। জীবনের তো এখনো অনেক সময় বাকি। এখন তো তেমন কিছু করতে পারবো না। পুরোপুরি সুস্থ হলে কিছু একটা করতে হবে। চিকিৎসার জন্য ধার-দেনা করে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। ভবিষতে কীভাবে জীবন চলবে বুঝতে পারছি না।
শুধু মুস্তাকিম নয়, ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেকে চিকিৎসা নিয়েছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতালে)। আহতদের মধ্যে কেউ ছাত্র, কেউ সাধারণ মানুষ। স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে শঙ্কায় আছেন অনেকে। ১৫ই জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৬৩৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন এখানে। এদের মধ্যে ৩৮৬ জনই গুলিবিদ্ধ। মারা গেছেন দু’জন। পা কাটা পড়েছে ৮ জনের। জুলাই-আগস্টে আন্দোলন করতে গিয়ে আহত ১৩০ জন এখনো এই হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

গুলিবিদ্ধ আতিকুলের মা আমেনা বলেন, আমার সন্তানের ডান হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। উত্তরা রাজলক্ষ্মী মার্কেটে চাকরি করতো। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছি। আন্দোলনের শুরু থেকে সে যুক্ত ছিল। ৫ই জুলাই উত্তরাতে গুলিবিদ্ধ হয়। একটা গুলি আমার ছেলের হাতে লেগে আরেক দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনার দিন হৃদরোগ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ৭ তারিখে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ভর্তির একদিন পর হাত কাটে চিকিৎসকরা। আমার ৩ ছেলে ৩ মেয়ে। এই ছেলে সবার ছোট। ওর বাবা আলাল উদ্দিন পুরনো ফার্নিচার বিক্রি করেন। আমার ছেলে ঘর ভাড়ার টাকা দিয়ে ওর বাবাকে সাহায্য করতো। ছেলেটার জীবন তো মাত্র শুরু। ডান হাতটাই কাটা পড়েছে। কী করবে ও, কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। শুধু আমার সন্তানের হাত না এইরকম শত শত সন্তানের হাত-পা গেছে। কারও মায়ের বুক খালি হয়েছে। তাদের যেন সরকার ব্যবস্থা করে দেয় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার। আমার সন্তানের হাত চলে গেছে তবুও আমি খুশি এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই।

দেশরুপান্তর:

বিশেষ আইনে বিপুল নয়ছয়
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের বিশেষ আইন পাস হওয়ার পর বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গত ১৩ বছরে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনেছে সরকার। এর মধ্যে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ (কেন্দ্র ভাড়া) বাবদই গুনতে হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি। যদিও দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হলে বিপুল পরিমাণ অর্থের সাশ্রয় হতে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ এবং এ খাতের কর্মকর্তারা।

প্রতিযোগিতা ছাড়া বিশেষ আইনে বিদ্যুৎ কেনার ফলে কী পরিমাণ অর্থের তছরুপ হয়েছে, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে খাত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে যে ধারণা পাওয়া গেছে, তাতে এর পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার মতে হতে পারে।

তীব্র বিদ্যুৎ-সংকট মোকাবিলায় ২০১০ সালে দুই বছরের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান)’ নামে একটি আইন করেছিল সরকার। এই আইনের আওতায় প্রতিযোগিতা ছাড়াই বিদ্যুৎ, জ্বালানি কেনা ও অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি দায়মুক্তি আইন হিসেবেও পরিচিত পেয়েছে। তিন দফা মেয়াদ বৃদ্ধি ও সংশোধনের পর ২০২৬ সাল পর্যন্ত এর কার্যকারিতা রয়েছে। গত এক দশকে বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশ থেকে উদ্বৃত্তর দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে শতভাগ মানুষ। তারপরও আইনটি চালু রয়েছে এখনো।

গত এক যুগে এ আইনের আওতায় বিনা দরপত্রে প্রতিযোগিতা ছাড়াই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অস্বচ্ছতার পাশাপাশি এসব চুক্তির ক্ষেত্রে অতি গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। প্রতিযোগিতা না থাকায় বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছেমতো দাম আদায় করছে।

২০১০ সালে আইনটি পাসের সময়ই সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে যখনই এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, তখনই আপত্তি উঠেছে। কিন্তু কোনো আপত্তি, বিরোধিতায় এই আইন বাতিল হয়নি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, আইনটি কার্যকর হওয়ার পর গত ১৩ বছরে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৯১টি বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়েছে, যার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। এসব কেন্দ্র থেকে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৩ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনেছে সরকার। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে এ সময় আনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনা হতে পারে। এটি বিবেচনায় নিলে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে মোট প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনেছে সরকার। সে হিসেবে ক্যাপাসিটি চার্জও বাড়বে। পাশাপাশি ভারত থেকেও বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্ষমতাধর বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীর স্বার্থের সুরক্ষা দিচ্ছে এ আইন। এখানে সরকারি ক্রয় বিধিমালা লঙ্ঘন করে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জায়গাটি উপেক্ষিত। ক্রয় প্রক্রিয়ায় অসচ্চতা কিংবা যেকোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হলেও আদালতে যাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার অভাবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের সর্বোচ্চ ভ্যালু ফর মানিপ্রাপ্তির সুযোগ নেই। এতে ব্যয় বাড়ছে। দিন শেষে সেই বোঝা জনগণকেই বহন করতে হচ্ছে। কাজেই আমরা মনে করি, এই আইন এখনই বাতিল করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের আদানির সঙ্গে এত বড় একটা অস্বচ্ছ বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি হয়ে গেল কিন্তু সমালোচনা ছাড়া আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ বিদ্যুৎ, জ্বালানির বিশেষ আইন তা নিষিদ্ধ করে রেখেছে। একই অবস্থা রামপাল ও অন্যান্য আরও বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে। এসব প্রকল্পের বিষয়ে জনগণের জানার বা জনগণের কাছে জবাবদিহির সুযোগ নেই, যে কারণে বাস্তবে এসব প্রকল্পের নানা অস্বচ্ছতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির বিচারহীনতা দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের যে সাফল্যের দাবি, তা এই নীতি-দখলের কারণে ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে।’

পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ১৪ বছরে নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫৭ হাজার ৭০৮ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সময় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কেনা হয়েছে ৪০ হাজার ৬৮১ কোটি ইউনিটেরও বেশি বিদ্যুৎ।

২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫৩৯ কোটি ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে। আর বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে কেনা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১৩৭ কোটি ইউনিট। অর্থাৎ বেসরকারি থেকে কেনা হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

পরের তিন অর্থবছরে সরকারি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ আরও কমতে থাকে। বিপরীতে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়তে থাকে এবং ওই তিন বছরে তা বেড়ে ১ হাজার ৮১৭ কোটি ইউনিট ছাড়িয়ে যায়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সরকারি ও যৌথ উদ্যোগের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৬৩৭ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হয়। অন্যদিকে বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে কেনা হয় প্রায় ২ হাজার ৯ কোটি ইউনিট। এরপরের সাত বছর সরকারি যৌথ উদ্যোগের কেন্দ্র থেকে প্রতিবছরই বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৯৯২ কোটি ইউনিট। আর ব্যয় হয় ৭ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি ও যৌথ উদ্যোগের কেন্দ্র থেকে ২৩ হাজার ৪৪১ কোটি টাকার বিনিময়ে ২ হাজার ৩৭৮ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি কেন্দ্র থেকে কেনা হয়েছে ৪ হাজার ৫৮২ কোটি ইউনিটেরও বেশি বিদ্যুৎ। এতে ইউনিটপ্রতি গড়ে ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক ৮৫ এবং ১২ দশমিক ৯৫ টাকা।

পিডিবির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ১৪ বছরে দেশে সরকারি ও যৌথ উদ্যোগের বিদ্যুৎকেন্দ্র তুলনামূলক অনেক কম নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে।

কালবেলা:

সাত ব্যাংকে সালমানের ঋণ ৩৬ হাজার কোটি
সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি সাতটি ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এসব ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে মানা হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো আইন। পর্যাপ্ত জামানতও নেই অধিকাংশ ঋণে। আবার বছরের পর বছর ঋণের অর্থ পরিশোধ না করেই বারবার করেছেন পুনঃতপশিল। সবমিলিয়ে ব্যাংক খাতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এই বিনিয়োগ উপদেষ্টা। রাজনৈতিক বিবেচনায় এমন সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব অপরাধ জেনেও চুপ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই এসব ঋণ এখন ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। অধিকাংশ ঋণই খেলাপির ঝুঁকি রয়েছে।

জনতা ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ : সালমান এফ রহমান রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ বের করেছেন। এই ব্যাংকে বেশিরভাগ ঋণই ছিল তার বেনামি। এতদিন তার নামে জনতা ব্যাংকে থাকা ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকা দেখিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে তার ২৯ প্রতিষ্ঠানে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড ২১ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার ঋণের তথ্য বেরিয়ে আসে।

২০২৩ সাল শেষে জনতা ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকটিতে সালমান এফ রহমানের দুই প্রতিষ্ঠানে ২৩ হাজার ৭০ কোটি টাকার ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের ২০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। ফান্ডেড ২০ হাজার ২০৮ কোটি এবং নন-ফান্ডেড ৫৪৪ কোটি টাকা। বেক্সিমকো লিমিটেডে ফান্ডেড ১ হাজার ৯৯৪ কোটি ও নন-ফান্ডেড ৩২৪ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, একক গ্রাহককে মূলধনের ২৫ শতাংশের (ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড) বেশি ঋণ দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে জনতা ব্যাংক একটি গ্রুপকেই ব্যাংকের মূলধনের ৯৪৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ ঋণ সুবিধা দিয়েছে।

আইএফআইসি থেকেও নামে-বেনামে ঋণ

নয়াদিগন্ত:

রাজধানীতে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা
রাজধানীর সায়েদাবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া তিন যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহতরা হলেন- সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন (১৯), সাঈদ আরাফাত শরীফ (২০) ও অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি। গতকাল সকাল ৬টার দিকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কৌশলে একজন মাদরাসাছাত্রসহ ওই তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এরপর মিথ্যা ধোয়া তুলেছে যে, ওই তিনজন কাউকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। তবে কাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে সে ব্যপারে তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি ধর্ষণের অভিযোগ কে ছড়িয়েছে, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নিহত সাইদুল ইসলাম ইয়াসিনের বাবার নাম সাখাওয়াত হোসেন। তারা যাত্রাবাড়ীর ধলপুর বউবাজারে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ইয়াসিন কুতুবখালী এলাকার একটি মাদরাসায় লেখাপড়া করতেন।

নিহত ইয়াসিনের মা শিল্পী আক্তার বলেন, ইয়াসিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাথে থেকে ১৫ দিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে আসছিল। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী থানা পাহারা, বাজারের নিরাপত্তা, ট্রাফিক ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কাজ করছিল। সে মাকে বলেছিল ভালোভাবে কাজ করলে সার্টিফিকেট দেবে। গত মঙ্গলবার রাতেও যাত্রাবাড়ী থানায় ছিল। রাত ১২টার দিকে ফোন দিলে জানায়, এই মাত্র বিরিয়ানি খেয়েছি। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। ভোর হতেই বাসা ফিরে ঘুমাবো। গতকাল বুধবার ভোর ৪টার দিকেও তার সাথে কথা হয়। তখনো সে সুস্থ-স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু কেউ একজন ফোন করে জানায়, ‘আপনার ছেলের অবস্থা ভালো না, দ্রুত যাত্রাবাড়ী থানায় আসেন। দ্রুত সেখানে গিয়ে ছেলেকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পাই। সেখান থেকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার পথে ইয়াসিন মায়ের সাথে কথা বলেছে। বলেছে, একদল লোক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মারধর করেছে। ওরা কোনো অপরাধ করেনি। এরপর মায়ের কোলেই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছালে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

অন্য দিকে সাঈদ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কদমীরচর গ্রামের কবির হোসেনের সন্তান। যাত্রাবাড়ীর টনি টাওয়ার এলাকায় থাকতেন তিনি। সাঈদকে হাসপাতলে নিয়ে আসা স্কাউট সদস্য সম্রাট শেখ বলেন, সায়েদাবাদে গণধর্ষণের অভিযোগে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা এই তিনজনকে গণপিটুনি দেয় বলে জানতে পারি। পরে সায়েদাবাদ থেকে কে বা কারা তাদের যাত্রাবাড়ী থানায় রেখে যান। এদের মধ্য থেকে আমি সাঈদ আরাফাত শরীফকে ঢাকা মেডিক্যালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে ধর্ষণের অভিযোগ কে দিয়েছে বা কাকে ধর্ষণ করা হয়েছে; সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারেন না বলেও জানান সম্রাট।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বলেন, সায়েদাবাদ থেকে ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনির শিকার হন তিনজন। তাদের ঢাকা মেডিক্যালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন

যুগান্তর:

ব্যাংক লুটের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি
গত ১৬ বছরে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী সরকারের আনুকূল্যে ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও শেয়ারবাজার লোপাট করেছেন। দেশের অর্থনীতিকে বিপৎসংকুল করে তুললেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেননি। তারা ব্যবসায়ী সমিতি-চেম্বারগুলোকে রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিণত করেছেন। এখন সময় এসেছে ওইসব ব্যবসায়ীর দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সংস্কারের। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের স্বার্থে এ কাজটি করবে বলে আশা প্রকাশ করছেন দেশের সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

বুধবার রাজধানীর এক হোটেলে ব্যবসায়ী সমাজের ব্যানারে আয়োজিত সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। এতে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এ কে আজাদ, মীর নাসির হোসেন, জসিম উদ্দিন প্রমুখ।

এফবিসিসিআই-এর সাবেক পরিচালক আব্দুল হক বলেন, সরকারের মদদে একটি গোষ্ঠী রাতের আঁধারে ব্যাংক দখল করেছে, ব্যাংক লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছে। ওই কোম্পানি একটি ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। এ লুটপাট হলিউড-বলিউডের সিনেমাকেও হার মানিয়েছে। টাকার মান কমেছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এসব লুটপাতের কারণে। এ ধরনের ব্যাংক লুটেরাদের শ্বেতপত্র জাতির সামনে প্রকাশের দাবি জানাই।

দৈনিক সংগ্রাম:

যারা লুটতরাজ চাঁদাবাজি করতে আসবে তাদেরকে কোনো ছাড় দিবেন না -ড. শফিকুর রহমান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এখন যদি কেউ আবারো এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে তা শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী হবে। আর যেন তা না করতে পারে সেজন্য আপনারা সতর্ক সজাগ থাকবেন।

গতকাল বুধবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী দোয়েল চত্বর এলাকায় গুলীবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা গৃহবধূ সুমাইয়ার মায়ের বাড়িতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা এখানে এসেছিলাম শহীদ বোন সুমাইয়ার অবুঝ শিশুকে দেখতে। যার মুখে এখনো ভাষা ফুটেনি। এই শিশুর যখন মুখে ভাষা ফুটবে তখন তাঁর মা ডাকার মতো কেউ রইলো না। এই শিশুর মতো যারা মা হারিয়েছে, যারা বাবা হারিয়েছে, যারা নিজেদের সন্তানদের হারিয়েছে আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের ধৈর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা দেন।

সুমাইয়ার মেয়ে সুয়াইবার দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এই অবুঝ বাচ্চার এখন থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত যাবতীয় দায়িত্ব আমরা নিলাম।

তিনি আরও বলেন, যারা জালিমের হাতে মৃত্যুবরণ করলেন আল্লাহ তাদের শহীদের মর্যাদা দান করুন। এলাকাবাসীর নিকট অনুরোধ রইলো, যারা লুটতরাজ, চাঁদাবাজি করতে আসবে তাদেরকে কোনো ছাড় দিবেন না। ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। এবার জনগণ প্রমাণ করে দিয়েছে তারা অন্যায়ের সঙ্গে কোনো আপস করে না। তারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রমাণ করলো তারা দেশে শান্তি চায়। আমরা যেন দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারি আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন।

সরকার পতনের পর যারা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা এসব অপকর্মে জড়িত হচ্ছেন তাদের বিনয়ের সঙ্গে বলবো আপনারা শিক্ষা নেন, এখনো মানুষের বুকের চাপা কষ্ট দূর হয়নি। বাড়াবাড়ি যারাই করবেন জনগণ তাদের উচিত শিক্ষা দেবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

আজ শহীদ নূর হোসেন দিবস

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ

দানবিক রাষ্ট্রের কারিকর/আওয়ামী লীগের শাসন

আপডেট সময় ০৭:৫৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪

আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান সংবাদ

বনিক বার্তা:

দানবিক রাষ্ট্রের কারিকর/আওয়ামী লীগের শাসন ২০০৯-২০২৪
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। ওই সময়ের পর থেকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দলটি ক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর ৭ মাস। এ সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে তিনটি। সবগুলোই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

এ দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতাসীন থাকা দলটির বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, বিরোধী মত দমন, সংবিধানকে সংশোধন, ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক খাতে সুশাসনের অভাব, তিনবারের বিতর্কিত নির্বাচন, ব্যাপক মাত্রায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পদক্ষেপগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলার পথও রুদ্ধ করা হয়েছিল নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখে এসবের সুযোগ তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সরকারের উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকার কথা থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনে দলীয় কর্মীর মতোই ভূমিকা রেখেছেন তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যবস্থা স্বৈরতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। ব্যাপক আকার পেয়েছে দুর্নীতি, বাড়তে বাড়তে গোটা ব্যবস্থাকেই গ্রাস করেছে। আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হয়ে পড়েছে দুর্নীতির সুরক্ষাদাতা। এক পর্যায়ে সরকারসংশ্লিষ্টরাও বুঝে যান, কোনো কারণে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হলে তার মূল্য তাদের জন্য মারাত্মক হবে।

প্রথম আলো:

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত করার চেষ্টা। শিগগিরই জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল গঠন করে বাংলাদেশে পাঠানো হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার বিচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলার বিচার হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত-বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার বিচার হয়। পরে তাঁদের সাজা কার্যকর করা হয়।

এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অনেকের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁদের বিচার করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক গতকাল বিকেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করেন। তাঁদের মধ্যে ফোনালাপের বিষয়টি দুজনই তাঁদের এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশ করেছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ব্যাপারে ফলকার টুর্কের সহায়তা চেয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার তাঁকে জানান, ছাত্র অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের তদন্তে খুব শিগগির জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল গঠন করে বাংলাদেশে পাঠানো হবে।

এদিকে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতিসংঘের একটি সূত্র গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানিয়েছে, ছাত্র আন্দোলনকালে হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হওয়ার কথা তিনি জেনেছেন। এই বিচার হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩–এর অধীনে। এই আইন অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের বিচারে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। যেহেতু জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি অনুমোদন করে না, তাই এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের যুক্ততার সুযোগ নেই।

তবে বাংলাদেশ চাইলে ছাত্র-জনতার গণ–আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্তে জাতিসংঘ আলাদা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহায়তা করতে তৈরি রয়েছে

সমকাল:

সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়।

শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালত এ আদেশ দেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সদরঘাট থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করে। এরপর রাতেই তাদের ডিএমপির ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মাইনুল হাসান মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ঢাকার নিউমার্কেট থানায় করা একটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। একজন ছাত্র এবং একজন হকার। এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব হত্যার ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে এই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর মূলত মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে চলে যান।

মানবজমিন:

ওদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে শঙ্কা
বাইশ বছর বয়সী মুস্তাকিম। রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ইএক্স-২ এ চিকিৎসাধীন। গুলিবিদ্ধ মুস্তাকিমের ডান পায়ের হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। মুস্তাকিম মানবজমিনকে বলেন, ১৯শে জুলাই বিকাল চারটার দিকে মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হই। পরে পপুলার হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে দুইদিন রাখার পর পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার অপারেশন করা হয়। ডান পায়ের হাঁটু পর্যন্ত কাঁটতে হয়েছে।

তিনি বলেন, ভাড়ায় প্রাইভেটকার চালাতাম। ডিউিটি শেষে বাসায় ফেরার পথে পুলিশের গুলিতে আহত হই।

আমার পা-টা এভাবে হারিয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। জীবনের তো এখনো অনেক সময় বাকি। এখন তো তেমন কিছু করতে পারবো না। পুরোপুরি সুস্থ হলে কিছু একটা করতে হবে। চিকিৎসার জন্য ধার-দেনা করে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। ভবিষতে কীভাবে জীবন চলবে বুঝতে পারছি না।
শুধু মুস্তাকিম নয়, ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেকে চিকিৎসা নিয়েছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতালে)। আহতদের মধ্যে কেউ ছাত্র, কেউ সাধারণ মানুষ। স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে শঙ্কায় আছেন অনেকে। ১৫ই জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৬৩৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন এখানে। এদের মধ্যে ৩৮৬ জনই গুলিবিদ্ধ। মারা গেছেন দু’জন। পা কাটা পড়েছে ৮ জনের। জুলাই-আগস্টে আন্দোলন করতে গিয়ে আহত ১৩০ জন এখনো এই হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

গুলিবিদ্ধ আতিকুলের মা আমেনা বলেন, আমার সন্তানের ডান হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। উত্তরা রাজলক্ষ্মী মার্কেটে চাকরি করতো। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছি। আন্দোলনের শুরু থেকে সে যুক্ত ছিল। ৫ই জুলাই উত্তরাতে গুলিবিদ্ধ হয়। একটা গুলি আমার ছেলের হাতে লেগে আরেক দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনার দিন হৃদরোগ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ৭ তারিখে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ভর্তির একদিন পর হাত কাটে চিকিৎসকরা। আমার ৩ ছেলে ৩ মেয়ে। এই ছেলে সবার ছোট। ওর বাবা আলাল উদ্দিন পুরনো ফার্নিচার বিক্রি করেন। আমার ছেলে ঘর ভাড়ার টাকা দিয়ে ওর বাবাকে সাহায্য করতো। ছেলেটার জীবন তো মাত্র শুরু। ডান হাতটাই কাটা পড়েছে। কী করবে ও, কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। শুধু আমার সন্তানের হাত না এইরকম শত শত সন্তানের হাত-পা গেছে। কারও মায়ের বুক খালি হয়েছে। তাদের যেন সরকার ব্যবস্থা করে দেয় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার। আমার সন্তানের হাত চলে গেছে তবুও আমি খুশি এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই।

দেশরুপান্তর:

বিশেষ আইনে বিপুল নয়ছয়
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের বিশেষ আইন পাস হওয়ার পর বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গত ১৩ বছরে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনেছে সরকার। এর মধ্যে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ (কেন্দ্র ভাড়া) বাবদই গুনতে হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি। যদিও দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হলে বিপুল পরিমাণ অর্থের সাশ্রয় হতে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ এবং এ খাতের কর্মকর্তারা।

প্রতিযোগিতা ছাড়া বিশেষ আইনে বিদ্যুৎ কেনার ফলে কী পরিমাণ অর্থের তছরুপ হয়েছে, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে খাত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে যে ধারণা পাওয়া গেছে, তাতে এর পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার মতে হতে পারে।

তীব্র বিদ্যুৎ-সংকট মোকাবিলায় ২০১০ সালে দুই বছরের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান)’ নামে একটি আইন করেছিল সরকার। এই আইনের আওতায় প্রতিযোগিতা ছাড়াই বিদ্যুৎ, জ্বালানি কেনা ও অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি দায়মুক্তি আইন হিসেবেও পরিচিত পেয়েছে। তিন দফা মেয়াদ বৃদ্ধি ও সংশোধনের পর ২০২৬ সাল পর্যন্ত এর কার্যকারিতা রয়েছে। গত এক দশকে বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশ থেকে উদ্বৃত্তর দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে শতভাগ মানুষ। তারপরও আইনটি চালু রয়েছে এখনো।

গত এক যুগে এ আইনের আওতায় বিনা দরপত্রে প্রতিযোগিতা ছাড়াই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অস্বচ্ছতার পাশাপাশি এসব চুক্তির ক্ষেত্রে অতি গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। প্রতিযোগিতা না থাকায় বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছেমতো দাম আদায় করছে।

২০১০ সালে আইনটি পাসের সময়ই সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে যখনই এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, তখনই আপত্তি উঠেছে। কিন্তু কোনো আপত্তি, বিরোধিতায় এই আইন বাতিল হয়নি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, আইনটি কার্যকর হওয়ার পর গত ১৩ বছরে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৯১টি বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়েছে, যার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। এসব কেন্দ্র থেকে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৩ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনেছে সরকার। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে এ সময় আনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনা হতে পারে। এটি বিবেচনায় নিলে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে মোট প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনেছে সরকার। সে হিসেবে ক্যাপাসিটি চার্জও বাড়বে। পাশাপাশি ভারত থেকেও বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্ষমতাধর বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীর স্বার্থের সুরক্ষা দিচ্ছে এ আইন। এখানে সরকারি ক্রয় বিধিমালা লঙ্ঘন করে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জায়গাটি উপেক্ষিত। ক্রয় প্রক্রিয়ায় অসচ্চতা কিংবা যেকোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হলেও আদালতে যাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার অভাবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের সর্বোচ্চ ভ্যালু ফর মানিপ্রাপ্তির সুযোগ নেই। এতে ব্যয় বাড়ছে। দিন শেষে সেই বোঝা জনগণকেই বহন করতে হচ্ছে। কাজেই আমরা মনে করি, এই আইন এখনই বাতিল করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের আদানির সঙ্গে এত বড় একটা অস্বচ্ছ বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি হয়ে গেল কিন্তু সমালোচনা ছাড়া আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ বিদ্যুৎ, জ্বালানির বিশেষ আইন তা নিষিদ্ধ করে রেখেছে। একই অবস্থা রামপাল ও অন্যান্য আরও বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে। এসব প্রকল্পের বিষয়ে জনগণের জানার বা জনগণের কাছে জবাবদিহির সুযোগ নেই, যে কারণে বাস্তবে এসব প্রকল্পের নানা অস্বচ্ছতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির বিচারহীনতা দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের যে সাফল্যের দাবি, তা এই নীতি-দখলের কারণে ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে।’

পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ১৪ বছরে নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫৭ হাজার ৭০৮ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সময় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কেনা হয়েছে ৪০ হাজার ৬৮১ কোটি ইউনিটেরও বেশি বিদ্যুৎ।

২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫৩৯ কোটি ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে। আর বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে কেনা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১৩৭ কোটি ইউনিট। অর্থাৎ বেসরকারি থেকে কেনা হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

পরের তিন অর্থবছরে সরকারি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ আরও কমতে থাকে। বিপরীতে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়তে থাকে এবং ওই তিন বছরে তা বেড়ে ১ হাজার ৮১৭ কোটি ইউনিট ছাড়িয়ে যায়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সরকারি ও যৌথ উদ্যোগের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৬৩৭ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হয়। অন্যদিকে বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে কেনা হয় প্রায় ২ হাজার ৯ কোটি ইউনিট। এরপরের সাত বছর সরকারি যৌথ উদ্যোগের কেন্দ্র থেকে প্রতিবছরই বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৯৯২ কোটি ইউনিট। আর ব্যয় হয় ৭ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি ও যৌথ উদ্যোগের কেন্দ্র থেকে ২৩ হাজার ৪৪১ কোটি টাকার বিনিময়ে ২ হাজার ৩৭৮ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি কেন্দ্র থেকে কেনা হয়েছে ৪ হাজার ৫৮২ কোটি ইউনিটেরও বেশি বিদ্যুৎ। এতে ইউনিটপ্রতি গড়ে ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক ৮৫ এবং ১২ দশমিক ৯৫ টাকা।

পিডিবির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ১৪ বছরে দেশে সরকারি ও যৌথ উদ্যোগের বিদ্যুৎকেন্দ্র তুলনামূলক অনেক কম নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে।

কালবেলা:

সাত ব্যাংকে সালমানের ঋণ ৩৬ হাজার কোটি
সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি সাতটি ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এসব ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে মানা হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো আইন। পর্যাপ্ত জামানতও নেই অধিকাংশ ঋণে। আবার বছরের পর বছর ঋণের অর্থ পরিশোধ না করেই বারবার করেছেন পুনঃতপশিল। সবমিলিয়ে ব্যাংক খাতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এই বিনিয়োগ উপদেষ্টা। রাজনৈতিক বিবেচনায় এমন সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব অপরাধ জেনেও চুপ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই এসব ঋণ এখন ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। অধিকাংশ ঋণই খেলাপির ঝুঁকি রয়েছে।

জনতা ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ : সালমান এফ রহমান রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ বের করেছেন। এই ব্যাংকে বেশিরভাগ ঋণই ছিল তার বেনামি। এতদিন তার নামে জনতা ব্যাংকে থাকা ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকা দেখিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে তার ২৯ প্রতিষ্ঠানে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড ২১ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার ঋণের তথ্য বেরিয়ে আসে।

২০২৩ সাল শেষে জনতা ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকটিতে সালমান এফ রহমানের দুই প্রতিষ্ঠানে ২৩ হাজার ৭০ কোটি টাকার ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের ২০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। ফান্ডেড ২০ হাজার ২০৮ কোটি এবং নন-ফান্ডেড ৫৪৪ কোটি টাকা। বেক্সিমকো লিমিটেডে ফান্ডেড ১ হাজার ৯৯৪ কোটি ও নন-ফান্ডেড ৩২৪ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, একক গ্রাহককে মূলধনের ২৫ শতাংশের (ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড) বেশি ঋণ দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে জনতা ব্যাংক একটি গ্রুপকেই ব্যাংকের মূলধনের ৯৪৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ ঋণ সুবিধা দিয়েছে।

আইএফআইসি থেকেও নামে-বেনামে ঋণ

নয়াদিগন্ত:

রাজধানীতে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা
রাজধানীর সায়েদাবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া তিন যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহতরা হলেন- সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন (১৯), সাঈদ আরাফাত শরীফ (২০) ও অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি। গতকাল সকাল ৬টার দিকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কৌশলে একজন মাদরাসাছাত্রসহ ওই তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এরপর মিথ্যা ধোয়া তুলেছে যে, ওই তিনজন কাউকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। তবে কাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে সে ব্যপারে তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি ধর্ষণের অভিযোগ কে ছড়িয়েছে, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নিহত সাইদুল ইসলাম ইয়াসিনের বাবার নাম সাখাওয়াত হোসেন। তারা যাত্রাবাড়ীর ধলপুর বউবাজারে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ইয়াসিন কুতুবখালী এলাকার একটি মাদরাসায় লেখাপড়া করতেন।

নিহত ইয়াসিনের মা শিল্পী আক্তার বলেন, ইয়াসিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাথে থেকে ১৫ দিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে আসছিল। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী থানা পাহারা, বাজারের নিরাপত্তা, ট্রাফিক ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কাজ করছিল। সে মাকে বলেছিল ভালোভাবে কাজ করলে সার্টিফিকেট দেবে। গত মঙ্গলবার রাতেও যাত্রাবাড়ী থানায় ছিল। রাত ১২টার দিকে ফোন দিলে জানায়, এই মাত্র বিরিয়ানি খেয়েছি। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। ভোর হতেই বাসা ফিরে ঘুমাবো। গতকাল বুধবার ভোর ৪টার দিকেও তার সাথে কথা হয়। তখনো সে সুস্থ-স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু কেউ একজন ফোন করে জানায়, ‘আপনার ছেলের অবস্থা ভালো না, দ্রুত যাত্রাবাড়ী থানায় আসেন। দ্রুত সেখানে গিয়ে ছেলেকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পাই। সেখান থেকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার পথে ইয়াসিন মায়ের সাথে কথা বলেছে। বলেছে, একদল লোক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মারধর করেছে। ওরা কোনো অপরাধ করেনি। এরপর মায়ের কোলেই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছালে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

অন্য দিকে সাঈদ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কদমীরচর গ্রামের কবির হোসেনের সন্তান। যাত্রাবাড়ীর টনি টাওয়ার এলাকায় থাকতেন তিনি। সাঈদকে হাসপাতলে নিয়ে আসা স্কাউট সদস্য সম্রাট শেখ বলেন, সায়েদাবাদে গণধর্ষণের অভিযোগে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা এই তিনজনকে গণপিটুনি দেয় বলে জানতে পারি। পরে সায়েদাবাদ থেকে কে বা কারা তাদের যাত্রাবাড়ী থানায় রেখে যান। এদের মধ্য থেকে আমি সাঈদ আরাফাত শরীফকে ঢাকা মেডিক্যালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে ধর্ষণের অভিযোগ কে দিয়েছে বা কাকে ধর্ষণ করা হয়েছে; সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারেন না বলেও জানান সম্রাট।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বলেন, সায়েদাবাদ থেকে ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনির শিকার হন তিনজন। তাদের ঢাকা মেডিক্যালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন

যুগান্তর:

ব্যাংক লুটের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি
গত ১৬ বছরে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী সরকারের আনুকূল্যে ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও শেয়ারবাজার লোপাট করেছেন। দেশের অর্থনীতিকে বিপৎসংকুল করে তুললেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেননি। তারা ব্যবসায়ী সমিতি-চেম্বারগুলোকে রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিণত করেছেন। এখন সময় এসেছে ওইসব ব্যবসায়ীর দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সংস্কারের। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের স্বার্থে এ কাজটি করবে বলে আশা প্রকাশ করছেন দেশের সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

বুধবার রাজধানীর এক হোটেলে ব্যবসায়ী সমাজের ব্যানারে আয়োজিত সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। এতে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এ কে আজাদ, মীর নাসির হোসেন, জসিম উদ্দিন প্রমুখ।

এফবিসিসিআই-এর সাবেক পরিচালক আব্দুল হক বলেন, সরকারের মদদে একটি গোষ্ঠী রাতের আঁধারে ব্যাংক দখল করেছে, ব্যাংক লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছে। ওই কোম্পানি একটি ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। এ লুটপাট হলিউড-বলিউডের সিনেমাকেও হার মানিয়েছে। টাকার মান কমেছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এসব লুটপাতের কারণে। এ ধরনের ব্যাংক লুটেরাদের শ্বেতপত্র জাতির সামনে প্রকাশের দাবি জানাই।

দৈনিক সংগ্রাম:

যারা লুটতরাজ চাঁদাবাজি করতে আসবে তাদেরকে কোনো ছাড় দিবেন না -ড. শফিকুর রহমান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এখন যদি কেউ আবারো এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে তা শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী হবে। আর যেন তা না করতে পারে সেজন্য আপনারা সতর্ক সজাগ থাকবেন।

গতকাল বুধবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী দোয়েল চত্বর এলাকায় গুলীবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা গৃহবধূ সুমাইয়ার মায়ের বাড়িতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা এখানে এসেছিলাম শহীদ বোন সুমাইয়ার অবুঝ শিশুকে দেখতে। যার মুখে এখনো ভাষা ফুটেনি। এই শিশুর যখন মুখে ভাষা ফুটবে তখন তাঁর মা ডাকার মতো কেউ রইলো না। এই শিশুর মতো যারা মা হারিয়েছে, যারা বাবা হারিয়েছে, যারা নিজেদের সন্তানদের হারিয়েছে আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের ধৈর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা দেন।

সুমাইয়ার মেয়ে সুয়াইবার দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এই অবুঝ বাচ্চার এখন থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত যাবতীয় দায়িত্ব আমরা নিলাম।

তিনি আরও বলেন, যারা জালিমের হাতে মৃত্যুবরণ করলেন আল্লাহ তাদের শহীদের মর্যাদা দান করুন। এলাকাবাসীর নিকট অনুরোধ রইলো, যারা লুটতরাজ, চাঁদাবাজি করতে আসবে তাদেরকে কোনো ছাড় দিবেন না। ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। এবার জনগণ প্রমাণ করে দিয়েছে তারা অন্যায়ের সঙ্গে কোনো আপস করে না। তারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রমাণ করলো তারা দেশে শান্তি চায়। আমরা যেন দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারি আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন।

সরকার পতনের পর যারা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা এসব অপকর্মে জড়িত হচ্ছেন তাদের বিনয়ের সঙ্গে বলবো আপনারা শিক্ষা নেন, এখনো মানুষের বুকের চাপা কষ্ট দূর হয়নি। বাড়াবাড়ি যারাই করবেন জনগণ তাদের উচিত শিক্ষা দেবে।