সপ্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে সেদেশের সাথে বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক স্বক্ষর করেন। বিশেষকরে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের রেল ট্রানজিট সম্পর্কিত যে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়েছে তা দেশের সার্বভৌমত্বকে বিক্রি করে দেওয়ার শামিল বলে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
বিবৃতিটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
“অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের রেল ট্রানজিট সম্পর্কিত যে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়েছে তা দেশের সার্বভৌমত্বকে বিক্রি করে দেওয়ার শামিল। এই অসম ও একপাক্ষিক সমঝোতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, “বর্তমান স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতেই এ ধরনের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এই সমঝোতা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দেওয়ার নামান্তর এবং চরম আত্মঘাতী।”
সমঝোতা স্বারক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় :
১) একটি স্বাধীন দেশের ভেতর দিয়ে অন্যকোনো রাষ্ট্রকে ট্রানজিট দিলে দেশের অভ্যন্তরে অবৈধ অনুপ্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়, যা স্বাভাবিকভাবেই দেশের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও ইতোমধ্যে এর মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন!
২) তিস্তা প্রকল্পে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দেশের কৌশলগত এই প্রকল্পটি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে এবং এর মাধ্যমে চীন-ভারত দ্বন্দ্বে ক্ষমতালোভী হাসিনা সরকার বাংলাদেশকে জড়িয়ে ফেলেছে।
৩) ভারত এই সমঝোতার মাধ্যমে দেশের সড়ক, নৌ, সমুদ্র এবং আকাশে তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। শুধু তাই নয়, ভারত দেশের গুরুত্বপূর্ণ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট রূপপুরেও তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। এমনকি দেশের “সামরিক বাহিনীসমূহের আধুনিকায়ন” প্রকল্পের অধীনে সামরিক অস্ত্র কারখানা প্রতিষ্ঠা, সামরিক মহড়া, প্রশিক্ষণের অংশীদার হতে চায় ভারত।
এর পাশাপাশি বেসামরিক প্রশাসন, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং অন্যান্য বিশেষ সেবার ক্ষেত্রেও ভারত কাজ করতে চায়। এসব সমঝোতা বাস্তবায়িত হলে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌম ও সার্বিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
৪) ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ যৌথ ভিশনের মাধ্যমে দেশের সামরিক, বেসামরিক স্থাপনার তথ্য সহজেই ভারতের হস্তগত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। এই ভিশন বাস্তবায়িত হলে দেশের নাগরিকদের ডিজিটাল তথ্য এবং গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হবে।
৫) “সেপা” সমঝোতা স্বারক, মিরসরাই এবং মংলায় দুটি আলাদা স্পেশাল ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতের বাজারই সম্প্রসারণ ঘটবে।
৬) ভারতে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার সুযোগদানের সমঝোতার ফলে সরকার প্রকারান্তরে এই বিষয়েরই স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, দেশের চিকিৎসাসেবার মান যথেষ্ট নয়। দেশের চিকিৎসাসেবার উন্নয়নের পরিবর্তে দেশকে ভারত নির্ভরশীল করে তোলা হচ্ছে।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকারের সমালোচনা করে নেতৃবৃন্দ বলেন, “অবৈধ, ফ্যাসিবাদী ও রাতের ভোটের আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের অধিকার হরণ করে তাদের অবৈধ দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশকে নানান অনৈতিক সুবিধা দিয়ে আসছে।
এর মধ্যে দেশের সমুদ্রবন্দর প্রায় বিনামূল্যে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান, দেশের বিভিন্ন রুটে রোড ট্রানজিট পারমিশন, ফেনী ও তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীর পানি হিস্যা ছাড়া ব্যবহারের সুযোগ এবং ভ্রমণে আসা লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিককে দেশের শ্রমবাজারে অবাধ প্রবেশের সুযোগ প্রদানসহ ভারতকে নানা ধরনের সুবিধা প্রদান করে আসছে এই সরকার। যার বিনিময়ে বাংলাদেশের জনগণ সীমান্তে গুলিবিদ্ধ লাশ, পানির অভাবে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের মরুকরণ, উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আকস্মিক বন্যা ও রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো নানা ইস্যুতে বৈরী আচরণ ছাড়া আর কিছুই পায়নি।”
নেতৃবৃন্দ বলেন, “এবার শেখ হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে ৭টি নতুন সমঝোতা স্বারক সই হয়েছে, তার সব কটিতেই ভারতের স্বার্থ হাসিল হয়েছে। আমরা অবিলম্বে সার্বভৌমত্বের জন্যে হুমকিস্বরূপ অসম সমঝোতা স্বারক বাতিল, পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের মাধ্যমে দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বিপরীতে জনগণের স্বার্থ নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
অন্যথায় ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে দেশের ভূখণ্ড ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে জাতীয় স্বার্থ আদায় করতে রাজপথে সর্বাত্মক কর্মসূচি পালন করা হবে।”