ঢাকা ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo দ্য নিউজের সাংবাদিক ইমরানকে প্রাণনাশের হুমকি Logo দেশ জুড়ে এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত: মির্জা ফখরুল Logo চট্রগ্রাম বন্দরে ১২০০ টন কাচামাল নিয়ে জাহাজডুবি Logo রিশাদের রেকর্ড বোলিংয়ে মিরপুরে বাংলাদেশের বড় জয় Logo মৌলভীবাজারে এম নাসের রহমানের নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু Logo একাত্তরের শহিদ আবদুর রবের কবর জিয়ারত করলেন চাকসুর ভিপি-জিএসরা Logo ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ নিয়ে সালাহউদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানালেন জামায়াত আমির Logo ‘শহীদ মুগ্ধের বাবা ও আতিকুলকে চেনেন না, তিনি শুধু চিনেন এস আলমের গাড়ি Logo “অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, পাকিস্তানের সব উপকার ভুলে গেছে আফগানিস্তান” Logo বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে সকল ফ্লাইট বাতিল, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি নেই, একটি মাত্র দল আছে: ড. ইউনূস

ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় আগ্রাসনের ফলে বাংলাদেশ “একদলীয়” রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন নোবেল শান্তি বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়লাভ করেছেন, কিন্তু ওই নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল বয়কট করেছিল। দলটির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনের আগে হয় জেলে নয়তো নির্বাসনে ছিলেন।

ইউনূস গ্রামের দরিদ্রদের জন্য ১০০ ডলারেরও কমের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করেছিলেন। তিনি ২০০৭ সালে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করে হাসিনাকে ক্ষুব্ধ করেছিলেন।

২০০৬ সালের নোবেল বিজয়ী ইউনূস শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দল ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযুক্ত করে বলেন, বাংলাদেশে প্রকৃত রাজনৈতিক বিরোধীদের অভাব রয়েছে

গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় নিজ অফিসে ৮৩ বছর বয়সী ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি অবশিষ্ট নেই। একটি মাত্র দল আছে যারা সক্রিয় এবং সবকিছু দখল করে। তারাই সবকিছু করে, নিজেদের (তৈরি) পথে নির্বাচনে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “তারা নিজেদের মানুষদের বিভিন্ন রূপে নির্বাচিত করে – সঠিক প্রার্থী, ডামি প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে সবাই কিন্তু একই দলের।”

৭৬ বছর বয়সী হাসিনা দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, যিনি ১৯৭৫ সালে একটি সেনা অভ্যুত্থানে তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য সহ নিহত হয়েছিলেন। হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাসিনাকে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়, যদিও সমালোচকরা তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভিন্নমত দমনের জন্য অভিযুক্ত করে থাকেন।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছিল যে, জানুয়ারির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। বৃটিশ সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তরও “ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার” নিন্দা জানিয়েছিল।

প্রধান বিরোধী দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এই (নির্বাচনী) মহড়াকে “ভুয়া” নির্বাচন বলে নিন্দা জানিয়ে এটি বাতিল কর‍তে বলেছে। তারা হাসিনার পদত্যাগ এবং নতুন নির্বাচনের জন্য একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের আহ্বান জানায়।

নির্বাচনের ঠিক আগে, বাংলাদেশের একটি আদালত শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল, যেটি তিনি অস্বীকার করেন। যদিও সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পর তাকে কারাগারে যেতে হয় নি, কিন্তু ইউনূস (নিয়ম) লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগে ১০০ টিরও বেশি মামলার মুখোমুখি, যেগুলোকে তিনি “খুবই ঠুনকো, বানানো গল্প” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

ইউনূসের সমর্থকরা বলছেন, হাসিনার সরকার তাকে অসম্মান করতে চায় কারণ তিনি একসময় “নাগরিক শক্তি” নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা ভেবেছিলেন। হাসিনা এই বিতর্ককে অস্বীকার করে ইউনূসকে ২০১১ সালে “গরিবদের রক্তচোষা” বলে অভিহিত করেন।

কোনো নাগরিক রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করলে সেটা কি অপরাধ? এমন প্রশ্ন রেখে ইউনূস বলেন, তিনি রাজনীতির জন্য উপযুক্ত নন বুঝতে পেরে মাত্র ১০ সপ্তাহ পরে এমন একটি দল গঠনের ধারণা ত্যাগ করেছিলেন।

ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ পুনরুজ্জীবিত করাটা কঠিন হবে। “পুনরায় শুরু করা খুব বেদনাদায়ক হবে কারণ আমরা এটিকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছি যেখানে এটি সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে গেছে।”

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

দ্য নিউজের সাংবাদিক ইমরানকে প্রাণনাশের হুমকি

বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি নেই, একটি মাত্র দল আছে: ড. ইউনূস

আপডেট সময় ১২:৩৫:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০২৪

ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় আগ্রাসনের ফলে বাংলাদেশ “একদলীয়” রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন নোবেল শান্তি বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়লাভ করেছেন, কিন্তু ওই নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল বয়কট করেছিল। দলটির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনের আগে হয় জেলে নয়তো নির্বাসনে ছিলেন।

ইউনূস গ্রামের দরিদ্রদের জন্য ১০০ ডলারেরও কমের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করেছিলেন। তিনি ২০০৭ সালে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করে হাসিনাকে ক্ষুব্ধ করেছিলেন।

২০০৬ সালের নোবেল বিজয়ী ইউনূস শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দল ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযুক্ত করে বলেন, বাংলাদেশে প্রকৃত রাজনৈতিক বিরোধীদের অভাব রয়েছে

গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় নিজ অফিসে ৮৩ বছর বয়সী ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি অবশিষ্ট নেই। একটি মাত্র দল আছে যারা সক্রিয় এবং সবকিছু দখল করে। তারাই সবকিছু করে, নিজেদের (তৈরি) পথে নির্বাচনে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “তারা নিজেদের মানুষদের বিভিন্ন রূপে নির্বাচিত করে – সঠিক প্রার্থী, ডামি প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে সবাই কিন্তু একই দলের।”

৭৬ বছর বয়সী হাসিনা দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, যিনি ১৯৭৫ সালে একটি সেনা অভ্যুত্থানে তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য সহ নিহত হয়েছিলেন। হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাসিনাকে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়, যদিও সমালোচকরা তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভিন্নমত দমনের জন্য অভিযুক্ত করে থাকেন।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছিল যে, জানুয়ারির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। বৃটিশ সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তরও “ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার” নিন্দা জানিয়েছিল।

প্রধান বিরোধী দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এই (নির্বাচনী) মহড়াকে “ভুয়া” নির্বাচন বলে নিন্দা জানিয়ে এটি বাতিল কর‍তে বলেছে। তারা হাসিনার পদত্যাগ এবং নতুন নির্বাচনের জন্য একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের আহ্বান জানায়।

নির্বাচনের ঠিক আগে, বাংলাদেশের একটি আদালত শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল, যেটি তিনি অস্বীকার করেন। যদিও সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পর তাকে কারাগারে যেতে হয় নি, কিন্তু ইউনূস (নিয়ম) লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগে ১০০ টিরও বেশি মামলার মুখোমুখি, যেগুলোকে তিনি “খুবই ঠুনকো, বানানো গল্প” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

ইউনূসের সমর্থকরা বলছেন, হাসিনার সরকার তাকে অসম্মান করতে চায় কারণ তিনি একসময় “নাগরিক শক্তি” নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা ভেবেছিলেন। হাসিনা এই বিতর্ককে অস্বীকার করে ইউনূসকে ২০১১ সালে “গরিবদের রক্তচোষা” বলে অভিহিত করেন।

কোনো নাগরিক রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করলে সেটা কি অপরাধ? এমন প্রশ্ন রেখে ইউনূস বলেন, তিনি রাজনীতির জন্য উপযুক্ত নন বুঝতে পেরে মাত্র ১০ সপ্তাহ পরে এমন একটি দল গঠনের ধারণা ত্যাগ করেছিলেন।

ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ পুনরুজ্জীবিত করাটা কঠিন হবে। “পুনরায় শুরু করা খুব বেদনাদায়ক হবে কারণ আমরা এটিকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছি যেখানে এটি সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে গেছে।”