নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) প্রথমবারের মতো মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের অধীনে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটি একটি নতুন মাইলফলক বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২ জন পিএইচডি শিক্ষার্থী চেয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটি, ডেনমার্ক; স্টারলিং ইউনিভার্সিটি, ইউকে; এভাডিন ইউনিভার্সিটি, ইউকে; আইসিডিডিআরবি এবং নোবিপ্রবিসহ মোট ৬টি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করে পিএইচডি প্রোগ্রাম ৫ বছরের জন্য চলমান থাকবে। এতে আরও বলা হয়, দুইটি থিমেটিক এরিয়ার জন্য ২ জন নির্বাচিত প্রার্থীকে পিএইচডি প্রোগ্রামের আওতায় মাসিক বৃত্তির পাশাপাশি ইউকে এবং ডেনমার্কে ৬ মাসের পড়ালেখার পাশাপাশি গবেষণামূলক কাজের জন্য ২টি যাতায়াতের খরচ বহন করা হবে।
বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু আছে। এবার সে তালিকায় নাম লেখালো নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ৮ম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করতে যাচ্ছে নোবিপ্রবি।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সভ্যতার পরিপূর্ণ বিকাশ এবং উন্নয়ন সাধনে নতুন জ্ঞান-অম্বেষণ করা খুবই অপরিহার্য। আর নতুন জ্ঞান খুঁজতে হলে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রি প্রদান করা হয়। যার মধ্যে পিএইচডি অথবা ডক্টর অব ফিলোসফি অন্যতম যা অ্যাকাডেমিক সর্বোচ্চ ডিগ্রি হিসেবেও পরিচিত।
পিএইচডি বা ডক্টরেট ডিগ্রির মাধ্যমে একজন গবেষক নিজেকে দক্ষ গবেষক হিসেবে গড়ে তোলা বা নিজের হাতে গবেষণা পরিচালনা করার সক্ষমতা অর্জন করে। এ ডিগ্রি অর্জনের মূল উদ্দেশ্য হলো একজন গবেষকের গবেষণার ক্ষেত্র নির্ধারণ করে স্বাধীনভাবে নতুন কিছু উদ্ভাবন করা; যা এর আগে কখনো করা হয়নি। যা পরবর্তীতে দেশ বা বিশ্বের আর্থ সামাজিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের কো-সুপারভাইজর ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার বিষয়টি আমাদের জন্য একটা নতুন মাইলফলক। এখানে শিক্ষার্থীরা নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে গবেষণা করবে যা পরবর্তীতে দেশের আর্থ-সামাজিকসহ বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পিএইচডি প্রোগ্রাম নিয়ে তিনি বলেন, চালু হতে যাওয়া পিএইচডির বিষয়টি হচ্ছে একুয়াটিক সিস্টেম। এটি প্রতীয়মান যে, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে এবং সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে— যা জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তবে এমন প্রতিকূল অবস্থায় মাছ চাষ বন্ধ না করে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য আমরা এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, এখানে একটি ক্রস সেকশনাল গবেষণা হবে যাতে আমরা একুয়াটিক ফুডে কোন কোন উপাদান কি পরিমাণে আছে তা দেখতে পাব। যারা খাচ্ছে তাদের হেলথ ডায়েট কেমন? পরবর্তীতে ফলাফল কেমন? এবং তা হ্রাস করার জন্য কোন কোন উপাদানগুলো তার খাবারে যোগ করতে হবে তা বলে দিতে সক্ষম হব। আমরা যদি প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে এটির সমাধান করতে পারি তাহলে আমাদের সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ঔষধ নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৮ বছরে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করতে পেরেছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক সহযোগিতার ধন্যবাদ জানাতে চাই। সবাই মিলে কাজ করলে নোবিপ্রবি বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটা প্রতিষ্ঠান হবে বলে আশা করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেলের পরিচালক ও কোষাধ্যক্ষ নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম শুরু হতে যাচ্ছে, এটা অবশ্যই আমাদের জন্য একটা সুখবর। আমরা একটা নীতিমালা করেছি এবং একটি ভর্তি নীতিমালা করেছি। এখন যারা যারা ভর্তি নিতে চায় নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তি নিতে পারবে। তবে এখানে একটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে পিএইচডি যেন শুধুমাত্র সার্টিফিকেটের জন্য না হয়। পিএইচডির কোয়ালিটি অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। যেহেতু এটা আমাদের প্রথম আমরা এটা ধীর গতিতে নিখুঁতভাবে শুরু করতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম বলেন, পিএইচডি না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন হয় না। পিএইচডির মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচক বেড়ে যায়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের ফার্মাসি, অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, ইএসডিমের পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার মতো সক্ষমতা আছে।
তিনি বলেন, এসব বিভাগের শিক্ষকদের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের সাথে কোলাবোরেশানের মাধ্যমে অনেক গবেষণা হয়। এদের মধ্যে যে বিভাগ পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করতে চায় তাদের নিয়মকানুন মেনে শুরু করতে হবে, তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাপত্র থাকতে হবে।
অধ্যাপক দিদার-উল-আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকার ক্ষেত্রে অনেকগুলো সূচক বিবেচনা করা হয়। যেমন- কয়টা মাস্টার্স, পিএইচডি আছে, আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে প্রকাশিত গবেষণাপত্র ইত্যাদি। যদি আমরা পিএইচডি শুরু করতে পারি, তাহলে র্যাংকিংয়েও আমরা এগিয়ে থাকতে পারব। বাকি বিভাগগুলোকে ও আমরা নীতিমালা মেনে পিএইচডি প্রোগ্রাম শুরু করার জন্য বলেছি।