ঢাকা ১০:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেকর্ড তাপদাহের মধ্যে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে দেশ

আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর:

নয়াদিগন্ত:

রেকর্ড তাপদাহের মধ্যে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে দেশ
তাপদাহের রেকর্ড ভেঙ্গে রেকর্ড হচ্ছে। গরমে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে মানুষ। তাপদাহ বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। একে তো তীব্র তাপদহ, এরওপর লোডশেডিংয়ের কারণে নির্ঘুম কাটে রাত। শহর বা গ্রাম সবজায়গায়ই প্রায় একই অবস্থা। তবে, শহরের চেয়ে গ্রামে লোড শেডিংয়ের মাত্রা বেশি। বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতার সাথে সঞ্চালন ক্ষমতা না বাড়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এমন দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের। কিন্তু গ্রাহকদের প্রশ্ন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা বলে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে বিদ্যুৎ বিল তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু তারা এর কোনো সুফল পাচ্ছে না। অথচ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা গ্রাহকের পকেট থেকে চলে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গতকাল বিদ্যুতের চাহিদা দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৩০১ মেগাওয়াট। লোডশেডিং দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৭১৮ মেগাওয়াট। কিন্তু প্রকৃত লোডশেডিং আরো বেশি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ও ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) দৈনিক প্রতিবেদনে লোডশেডিংয়ের সঠিক তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে না। প্রকৃত লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি।
একে তো তীব্র তাপদহ চলছে, দেশজুড়ে চলছে সপ্তমবারের মতো হিট অ্যালার্ট। দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনি অবস্থায় ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষ দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। ইট পাথরে ঘেরা শহরে লোডশেডিংয়ের কারণে টেকাই দায় হয়ে পড়েছে। আর গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো ভয়াবহ। আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, মনোহরগহঞ্জ উপজেলায় আরইবি এলাকায় রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত মাত্র এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। বাকি সময় লোডশেডিং করা হয়। এমনিতেই সারাদিন প্রচন্ড গরমে গাছ তলায় থাকা যায়, কিন্তু রাতে গরমে ঘরে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। কুমিল্লা শহরেও দিনে রাতে ৭ থেকে ৮বার বিদ্যুৎ থাকে না।
আমাদের বগুড়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার সর্বত্র দিনে রাতে ৮ থেকে ১০ বার বিদ্যুৎ থাকে না। আর একবার গেলে কমপক্ষে এক ঘন্টা লোডশেডিং করা হয়। এ হিসেবে দিনে রাতে প্রায় অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ বিহিন কাটাতে হচ্ছে। আমাদের সিলেট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সিলেটেও দিনে রাতে ৮ থেকে ১০ বার লোডশেডিং হচ্ছে।

এদিকে গ্রামের মতো শহরেও লোডশেডিং হচ্ছে সমানতালে। গত সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র রামপুরা বনশ্রী বাসীর নির্ঘুম রাত কেটেছে। এমনিতেই প্রচন্ড তাপদহ। এরওপর রাতে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিং হয়েছে। ১০ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ এসে এক ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এভাবে সারারাতই চলে বিদ্যুতের লুকোচুরি। সব বয়সী মানুষই অনেকটা নির্ঘুম রাত কেটেছে।
বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, চাহিদার বিপরীতে সারাদেশে ২,৫০০ থেকে ২,০০০ মেগাওয়াটের বেশি লোড-শেডিং করতে হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরেই। তাপপ্রবাহের আগে গড়ে সাধারণত ৫০০-১,০০০ মেগাওয়াট লোড-শেডিং হতো। সোমবার হয়েছে ৩,২০০ মেগাওয়াট, যা ছিল এ বছরের সর্বোচ্চ লোড-শেডিং। আর গতকাল মঙ্গলবার হয়েছে ১ হাজার ৭১৮ মেগাওয়াট।

দেশ রুপান্তর:

তেল-গ্যাসের দাম আবার বাড়ল
সরকারের নির্বাহী আদেশে ভোক্তাপর্যায়ে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১ টাকা এবং পেট্রোল ও অকটেনের দাম আড়াই টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে এবং ক্যাপটিভে (শিল্প-কারখানায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থা) ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭৫ পয়সা বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার রাতে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এ-সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। নতুন দর আজ বুধবার থেকে কার্যকর হবে।

বিদ্যুতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে ভোক্তাপর্যায়েও বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বৃদ্ধির আভাস পাওয়া গেছে। কারণ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও বাড়বে। আর ক্যাপটিভে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কারখানার পণ্য উৎপাদন খরচও বাড়বে বলে জানিয়েছেন শিল্পমালিকরা। অন্যদিকে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষিতে সেচের ব্যয় বাড়বে। সব মিলে মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় আরও বেড়ে যাবে।

এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভর্তুকি সমন্বয় করতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি ৭৫ পয়সা করে বাড়িয়েছিল সরকার।

প্রথম আলো:

মন্ত্রী–এমপিদের স্বজনেরা এবারও সরলেন না
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
দ্বিতীয় পর্বের ভোটে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের অন্তত ১৪ জনের স্বজন চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। প্রথম ধাপে ৫০ জনের মতো স্বজন প্রার্থী।

● দুজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রীর স্বজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।

● সংসদ সদস্যদের সন্তান, ভাই, শ্যালকেরাও প্রার্থী।

● ১৫৯টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৪৬৬ জন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দফায় দফায় নির্দেশ, হুঁশিয়ারি—কোনো কিছুতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের নিকটাত্মীয় ও স্বজনদের থামানো যাচ্ছে না। প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনেও মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অন্তত ১৪ জনের নিকটাত্মীয় ও স্বজনেরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।

গতকাল মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় পর্বের ভোটের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ভোট হবে ২১ মে। এই পর্বে ১৫৯টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৪৬৬ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী হয়েছে খুলনা বিভাগে। এই বিভাগে ৮৩ জন। এর পরেই রংপুর বিভাগে প্রার্থী ৬৮ জন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৬৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৪ জন, ঢাকা বিভাগে ৬২ জন,বরিশাল বিভাগে ৫১ জন, ময়মনিসংহ বিভাগে ৪০ জন ও সিলেট বিভাগে ৩৪ জন। দ্বিতীয় পর্বেও আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ

এর বাইরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ১৭ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আটজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন।

এদিকে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বারবার নির্দেশ দেওয়ার পরও তা উপেক্ষিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবনে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্বজনদের যাঁরা ভোটের মাঠে নেমেছেন, তাঁদের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রথম ধাপে শুধু নাটোরের একজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ ওঠায় ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন লুৎফুল হাবিব। তিনি তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের শ্যালক।

বাংলাদেশ প্রতিদিন:

ভালো নেই শ্রমজীবীরা
♦ সমস্যা আক্রান্ত নারী শ্রমিক ♦ কৃষি খাতে নেই মজুরি নির্ধারণ ♦ খাদ্য-বাসস্থানের সংকট ♦ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে বেড়েছে কষ্ট

ভালো নেই দেশের শ্রমজীবীরা। নানান সংকটে তাদের জীবন। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান সব ক্ষেত্রেই সংকটে ভুগছে। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি শ্রমজীবীদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। নারী শ্রমজীবীদের সংকট আরও বহুমুখী। তাদের কর্মজীবন নানা সমস্যায় আক্রান্ত এবং বৈষম্যের মধ্য দিয়ে চলেছে। আর দেশে সবচেয়ে বড় শ্রম খাত কৃষি হলেও এখানে নেই কোনো আলাদা নির্ধারিত মজুরি। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ‘শ্রমিক-মালিক গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশে পালিত হবে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার দিন-মহান মে দিবস।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে মোট শ্রমজীবীর সংখ্যা ৭ কোটি ১০ লাখ। পুরুষ ৪ কোটি ৬৪ লাখ, নারী ২ কোটি ৪৬ লাখ। দেশে কর্মরত বিশালসংখ্যক শ্রমজীবীর উল্লেখযোগ্য অংশ নারী হলেও এখনো সরকার নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। কাজ করতে গিয়ে নারী শ্রমিকরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। প্রায়ই তাদের বেতন বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। আছে যৌন হয়রানির আশঙ্কাও। ফলে কলকারখানাসহ বিভিন্ন খাতে নারী শ্রমিকরা তার পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে বেশি খেটেও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। আবার আইনে নারী শ্রমিকদের যেসব সুযোগসুবিধা পাওয়ার কথা তা মালিকের অনাগ্রহ ও পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শ্রম আইনে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির কথা বলা থাকলেও বেশির ভাগ নারী শ্রমিক তা পান না। কারখানাগুলোয় বড়জোর চার মাসের ছুটি কাটানোর সুযোগ মেলে। আবার কিছু কারখানায় নারী শ্রমিকদের চাকরিও স্থায়ী করতে চান না কর্তৃপক্ষ। দেখা যায়, মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটানোর পর সেই নারী শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়। আবার মাঠের বা দিনমজুরের কাজে একজন পুরুষ শ্রমিক যেখানে দিনে ৪০০ টাকা পান সেখানে নারী পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পুরুষ কাজের মাঝে বিশ্রামের সুযোগ পেলেও নারী তেমন সুযোগ সাধারণত পান না। ইটভাটায় যেখানে পুরুষ দিনে মজুরি পান ৫০০ টাকা, সেখানে নারী পান ৩০০ টাকা। পুরুষের সমান মজুরি চাইলে নারী শ্রমিকদের কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়াসহ নানা রকম হয়রানি করা হয়। শ্রমিক নেতারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলছেন, কলকারখানায় কর্মরত নারী ও পুরুষ শ্রমিকের সমমজুরি দেওয়া হয় না। নারীরা আট ঘণ্টার জায়গায় বারো ঘণ্টা শ্রম দিচ্ছেন। তার পরও পুরুষের সমান মজুরি পাচ্ছেন না। অভিযোগ আছে-পোশাক খাত ছাড়া নিয়মিত ভিত্তিতে অন্য খাতগুলোয় শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ হচ্ছে না। ফলে বছরের পর বছর বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ। এর ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে শ্রমিকদের জীবনধারণ হয়ে পড়েছে কষ্টকর। অবশ্য পোশাক খাতের নির্ধারিত মজুরিতেও জীবনধারণ কঠিন। বর্তমানে দেশে তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের মধ্যে ৩ লাখের ওপর রয়েছেন ন্যূনতম মজুরিভুক্ত। যাদের বেতন ১৩ হাজার টাকার নিচে।
কালের কন্ঠ:দেশে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং ও চলমান দাবদাহের কারণে চলতি মৌসুমে ধানের ফলন প্রায় ৫০ লাখ টন কম হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বেশি ক্ষতি হতে পারে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। তাপমাত্রা দীর্ঘ মেয়াদে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ালে অকালে ধান পাকার মতো বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাসখানেক ধরে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে।

দাবদাহে ক্ষতি হচ্ছে পরিপক্ব হয়ে ওঠা ক্ষেতের ধানের। এই সময়ে ধানের জমিতে দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি পরিমাণ পানি না রাখা গেলে ফলন কমে যেতে পারে। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ক্ষেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচ দেওয়া ব্যাহত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বাংলাদেশে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন কোটি ৭৭ লাখ টন।

এর বিপরীতে চালের উৎপাদন হয়েছে চার কোটি ১৩ লাখ টন। চলতি বছর আউশ, আমন ও বোরো মিলিয়ে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার কোটি ২২ লাখ টন। এর মধ্যে চলতি বোরো মৌসুমে দুই কোটি ২২ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় তিন কোটি ৩০ লাখ টন ধান উৎপাদিত হতে পারে।

যুগান্তর:

সারা দেশে টানা তাপ প্রবাহের রেকর্ড
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৪৩.৮ ও চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.৭ ডিগ্রি * ৩০ দিনের তীব্র গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত * হিট স্ট্রোকে সাত জেলায় ৮ জনের মৃত্যু * দু-একদিনের মধ্যে বৃষ্টির আভাস, কমতে পারে তাপমাত্রা
চলতি বছরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ব্যাপ্তি ও দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়িত্বের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রামের দু-একটি এলাকা ছাড়া সারা দেশের মানুষের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। টানা দাবদাহের এক মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, সারা দেশে তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তি, তীব্রতা ও সময়কাল বিবেচনায় গত ৭৬ বছরের মধ্যে চলতি এপ্রিল মাস নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এর আগে ১৯৯২ সালে ৩০ দিন তাপপ্রবাহ থাকলেও তা শুধু দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এ বছর সারা দেশেই তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপরই চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.৭ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়।

 

চলমান তাপপ্রবাহে বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য ছিল। এ কারণে মানুষের কষ্ট বেশি হয়েছে। প্রচণ্ড গরম সইতে না পেরে হিট স্ট্রোকে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গতকালও দেশের সাত জেলায় আটজন হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন। তাদের বেশিরভাগ রোদে বাইরে কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে মারা যান। এদিন গাজীপুরের কালীগঞ্জে গরমে রেললাইন বাঁকা হয়ে যায়। অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান কালনী এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। এছাড়া প্রচণ্ড গরমের জন্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের আভাস, আজ থেকে গরমের তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে। আগামী দু-একদিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। যত বেশিদিন বৃষ্টি হবে, তাপমাত্রা তত কমতে থাকবে।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক যুগান্তরকে বলেন, এবার টানা ৩০ দিন প্রায় সারা দেশেই তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। যা ৭৬ বছরের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। অতীতে সারা দেশে এভাবে তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে দেখা যায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে ২০১০ সালে ২০ দিন টানা তাপপ্রবাহ ছিল রাজশাহীতে। আর ১৯৯২ সালে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ৩০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। কিন্তু এবার চট্টগ্রাম ও সিলেটের কিছু অংশ ছাড়া সারা দেশে টানা ৩০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। এপ্রিল মাসে স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে ২-৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। তার মতে, চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত না থাকায় তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তি দীর্ঘকাল ছিল। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমে আসবে।

মঙ্গলবার দেশে সর্বোচ্চ ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। এর আগে ১৯৬৪ সালের এপ্রিল মাসে যশোরে ৪৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ওই হিসাবে ১৯৬৪ সালের পর এই প্রথম সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখলেন যশোরবাসী। যদিও ২০০৯ সালে যশোরে ৪৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। গতকাল তাপপ্রবাহের তীব্রতার দিক বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল চুয়াডাঙ্গা। গত ৩৯ বছরের রেকর্ড ভেঙে চুয়াডাঙ্গায় এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় ১৯৮৫ সালে আবহাওয়া অফিস স্থাপনের পর থেকে এটাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও গতকাল কুষ্টিয়ায় ৪২.৫, পাবনা ৪৩.২, রাজশাহী ৪৩, বাগেরহাট ৪২.৩ ও সাতক্ষীরায় ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। অর্থাৎ এসব জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র দাবদাহ বয়ে গেছে। আর টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও খুলনা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল। দেশের অন্য জেলাগুলোতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা কমার আভাস রয়েছে। এ কারণে সারা দেশে না হয়ে অঞ্চলভেদে জারি হবে নতুন হিট অ্যালার্ট।

আবহাওয়াবিদরা জানান, ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড রয়েছে। এবার তাপমাত্রা পারদ ওই পর্যন্ত পৌঁছেনি। তবে চলতি বছরে তাপপ্রবাহের স্থায়িত্বকাল অনেক বেশি। এ কারণে মানুষের কষ্টের তীব্রতাও বেশি। এই সময়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হলে মানুষের এত কষ্ট হতো না। টানা তাপপ্রবাহের কারণে সারা দেশেই মানুষের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। হিট স্ট্রোকে মানুষের মৃত্যু বেড়েছে।

তাপমাত্রা আজ থেকে কমার আভাস : গতকাল সন্ধ্যা ৬টার পূর্বাভাসে আজ বুধবার দিনে কিছু কিছু জায়গায় তাপপ্রবাহ কমতে পারে। সারা দেশে তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। দেশের পূর্বাঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাশাপাশি ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। এতে বিরাজমান তাপপ্রবাহের তীব্রতা কমে আসতে পারে। দেশের পূর্বাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। পরের পাঁচ দিনে সারা দেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

হিট স্ট্রোকে মৃত্যু : মুন্সীগঞ্জে মঙ্গলবার হিট স্ট্রোকে ওমর আলী (৬৫) ও আব্দুল বাতেন মাঝি (৬৮) নামের দুই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মরদেহে হিট স্ট্রোকের উপসর্গ ছিল বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল। জানা গেছে, ওমর আলী মাঠে কাজ করার সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আর আব্দুল বাতেন মাঝি ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যান। একইদিন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার চর তারাবাড়িয়া মাঠে ধান কাটার সময়ে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন জিল্লুর রহমান (৩৫) নামের একজন কৃষক। তিনি চর তারাবাড়িয়া গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে। সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

এছাড়া সাতক্ষীরার নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারুক হোসেন গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। সোমবার তিনি নিজ কর্মস্থলে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথম তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে খুলনা সিটি মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কাজী আরিফ তাকে দেখার পর অতিরিক্ত গরমের কারণে হিট স্ট্রোক হয়েছে বলে ধারণা করেন। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় পাঠানো হয়। নাটোরের নলডাঙ্গায় তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে খায়রুল ইসলাম (৩৯) নামে এক সৌদি প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। দুই কন্যার জনক খায়রুল ইসলাম কিছুদিন আগে সৌদি আরব থেকে ছুটিতে দেশে আসেন। মঙ্গলবার নিজের ভুট্টার জমিতে শ্রমিকরা কাজ করার সময় তিনি নিজেও গিয়ে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে হিট স্ট্রোকে মুনছের আলী (৯০) নামের একজন মারা গেছেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা নারান্দিয়া ইউনিয়নের তালতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার জানান, মুনছের আলী নারান্দিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। তিনি সকালে বাড়ি থেকে বাজার করতে সিঙ্গুরিয়া বাজারে যান। বাজার থেকে হেঁটে বাড়িতে এসে হিট স্ট্রোকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় বাড়িতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এছাড়া মঙ্গলবার দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে হিট স্ট্রোকে রহিমা বেগম (৪৭) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঘোড়াঘাট থানার ওসি আসাদুজ্জামান আসাদ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে মনির উদ্দিন নামের এক যুবক মারা গেছেন।

কালীগঞ্জে বেঁকে গেছে রেললাইন : কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, প্রচণ্ড গরমে কালীগঞ্জের আড়িখোলার দুই কিলোমিটার দূরে কাজিবাড়ীসংলগ্ন এলাকায় ৪০ ফিট রেললাইন বেঁকে যায়। ওয়েম্যানদের সতর্কতার কারণে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান।

কর্তব্যরত ওয়েম্যান রাজু লাল সাহা জানান, প্রতিদিনের মতো আমরা রেললাইনে কাজ করছিলাম। আনুমানিক ১২টার দিকে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে আড়িখোলা স্টেশনে পৌঁছায়। এ সময় কাজীবাড়িসংলগ্ন রেললাইনটি প্রচণ্ড দাবদাহে প্রায় ৪০ ফুট সাপের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করলে দ্রুত ট্রেনটি গ্রিন সিগন্যাল তুলে ইমার্জেন্সি সংকেত দিয়ে থামানো হয়। ফলে প্রাণে বেঁচে যায় যাত্রীরা। ২ ঘণ্টা ট্রেনটি থামানো অবস্থায় রেললাইনে ডোবা থেকে পানি ছিটিয়ে ঠান্ডা করে এবং লাইনের কাজ সম্পন্ন করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে ট্রেন চলাচলে সক্ষম হয়।

সিলেটে স্বস্তির বৃষ্টি : সিলেট ব্যুরো জানায়, মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৫টায় শুরু হওয়া বৃষ্টি কিছুক্ষণ থেমে ফের শুরু হয় সন্ধ্যায়। বৃষ্টি চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। এতে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ মানুষ ফিরে পেয়েছে শান্তি। সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন বলেন, মঙ্গলবার বিকালে ৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেট অঞ্চলে এমন বৃষ্টি আরও হতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানায়, সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টির পাশাপাশি ঝড়ও হতে পারে।

দৈনিক সংগ্রাম:

ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নবেম্বর’ নিয়ে আর অনুসন্ধান চলবে না: হাইকোর্ট
ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নবেম্বর’ নিয়ে আর অনুসন্ধান না চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), সিআইডি চাইলে স্বাধীনভাবে অনুসন্ধান করতে পারবে।

গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল খারিজ করে এ আদেশ দেন।

এর আগে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ লোপাটের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। ওই দিন আদালতে দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ নবেম্বর একটি দৈনিকে ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নবেম্বর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের প্রথমাংশে বলা হয়, ব্যাংকের নথিপত্রে নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেডের অফিসের ঠিকানা বনানীর বি ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ভবন। ঋণ পাওয়া মার্টস বিজনেস লিমিটেডের ঠিকানা বনানীর ডি ব্লকের ১৭ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে মিলল রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের অফিস। তবে মার্টস বিজনেস লাইন নামে তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এভাবেই ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে দুই কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে দুই হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি অসাধু চক্র।

সব মিলিয়ে বিভিন্ন উপায়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি বছরেই এ অর্থ নেয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ তুলে নেয়া হয় চলতি মাসের ১ থেকে ১৭ নবেম্বর সময়ে। যার পরিমাণ ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এজন্য ব্যাংকটির কর্মকর্তারা চলতি মাসকে ‘ভয়ংকর নবেম্বর’ বলে অভিহিত করছেন।

একইভাবে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকেও ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কোম্পানিগুলো। ফলে এ তিন ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদসহ দেনা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এমন সময়ে এসব অর্থ তুলে নেয়া হয়, যখন ব্যাংক খাতে ডলার-সংকটের পর টাকার সংকট বড় আলোচনার বিষয়।

কালবেলা:

বিএনপিতে বহিষ্কার বাণিজ্য
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপিতে চলছে বহিষ্কারের হিড়িক। গত কয়েক দিনে দল ও অঙ্গসংগঠনের ৮০ জনের মতো নেতাকে তাদের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে প্রাথমিক সদস্যপদ। তবে সরকারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনে হামলা-মামলা-গ্রেপ্তারে বিপর্যস্ত তৃণমূল নেতাকর্মীদের এমন গণবহিষ্কার নিয়ে দলের ভেতরে মতভেদ দেখা দিয়েছে। ভিন্নমত পোষণ করছেন খোদ স্থায়ী কমিটির অনেক নেতা। সাংগঠনিক হিসাবনিকাশ, জাতীয় নির্বাচনের পর নেতাকর্মীদের মানসিক অবস্থা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘিরে এলাকাভিত্তিক নানা ইস্যুসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উপজেলা নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় থাকার পক্ষে মত দিয়েছিলেন তারা। অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকায় দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা বহিষ্কার হওয়ায় তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন দলীয় ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে, তেমনি বিএনপি আরও দুর্বল হবে বলে অনেকের আশঙ্কা। সাংগঠনিক শৃঙ্খলার প্রশ্ন সামনে আনা হলেও তৃণমূল নেতাদের গণহারে বহিষ্কারের এই প্রবণতার পেছনে কারও কারও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও মনে করেন তৃণমূলের অনেক নেতা।

তারা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঠুনকো অভিযোগে দল থেকে এভাবে গণহারে বহিষ্কার করা সমীচীন নয়। জাতীয় নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে বর্জনের সিদ্ধান্ত হলেও বিপর্যস্ত তৃণমূলকে উজ্জীবিত করার স্বার্থে নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণকারী নেতাদের ব্যাপারে এতটা কঠোর হওয়া ঠিক হয়নি। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ায় দলের অনেক নেতা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করতে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের তৎপরতাকে উৎসাহিত করেন। বহিষ্কারের পর পদ ফিরে পেতে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কাছে ধরনা দেন। অনেক ক্ষেত্রে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আর্থিক লেনদেনও হয়ে থাকে। উপজেলা নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক বহিষ্কারের পেছনেও কারও কারও সে ধরনের উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাসহ একটি বড় অংশ মনে করে, আন্দোলন-সংগ্রামে যারা মাঠে ছিলেন, তাদের এভাবে বহিষ্কার করায় দল উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জেল-জুলুম উপেক্ষা করে আন্দোলনে থাকায় তাদের যেখানে পুরস্কৃত করার কথা, সেখানে উল্টো শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এমন সিদ্ধান্ত সংগঠনের জন্য বুমেরাং হতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

‘কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ভূমিকা রাখবে ছাত্রদল’

রেকর্ড তাপদাহের মধ্যে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে দেশ

আপডেট সময় ০৮:৫৬:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর:

নয়াদিগন্ত:

রেকর্ড তাপদাহের মধ্যে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে দেশ
তাপদাহের রেকর্ড ভেঙ্গে রেকর্ড হচ্ছে। গরমে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে মানুষ। তাপদাহ বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। একে তো তীব্র তাপদহ, এরওপর লোডশেডিংয়ের কারণে নির্ঘুম কাটে রাত। শহর বা গ্রাম সবজায়গায়ই প্রায় একই অবস্থা। তবে, শহরের চেয়ে গ্রামে লোড শেডিংয়ের মাত্রা বেশি। বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতার সাথে সঞ্চালন ক্ষমতা না বাড়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এমন দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের। কিন্তু গ্রাহকদের প্রশ্ন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা বলে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে বিদ্যুৎ বিল তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু তারা এর কোনো সুফল পাচ্ছে না। অথচ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা গ্রাহকের পকেট থেকে চলে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গতকাল বিদ্যুতের চাহিদা দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৩০১ মেগাওয়াট। লোডশেডিং দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৭১৮ মেগাওয়াট। কিন্তু প্রকৃত লোডশেডিং আরো বেশি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ও ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) দৈনিক প্রতিবেদনে লোডশেডিংয়ের সঠিক তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে না। প্রকৃত লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি।
একে তো তীব্র তাপদহ চলছে, দেশজুড়ে চলছে সপ্তমবারের মতো হিট অ্যালার্ট। দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনি অবস্থায় ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষ দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। ইট পাথরে ঘেরা শহরে লোডশেডিংয়ের কারণে টেকাই দায় হয়ে পড়েছে। আর গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো ভয়াবহ। আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, মনোহরগহঞ্জ উপজেলায় আরইবি এলাকায় রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত মাত্র এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। বাকি সময় লোডশেডিং করা হয়। এমনিতেই সারাদিন প্রচন্ড গরমে গাছ তলায় থাকা যায়, কিন্তু রাতে গরমে ঘরে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। কুমিল্লা শহরেও দিনে রাতে ৭ থেকে ৮বার বিদ্যুৎ থাকে না।
আমাদের বগুড়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার সর্বত্র দিনে রাতে ৮ থেকে ১০ বার বিদ্যুৎ থাকে না। আর একবার গেলে কমপক্ষে এক ঘন্টা লোডশেডিং করা হয়। এ হিসেবে দিনে রাতে প্রায় অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ বিহিন কাটাতে হচ্ছে। আমাদের সিলেট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সিলেটেও দিনে রাতে ৮ থেকে ১০ বার লোডশেডিং হচ্ছে।

এদিকে গ্রামের মতো শহরেও লোডশেডিং হচ্ছে সমানতালে। গত সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র রামপুরা বনশ্রী বাসীর নির্ঘুম রাত কেটেছে। এমনিতেই প্রচন্ড তাপদহ। এরওপর রাতে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিং হয়েছে। ১০ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ এসে এক ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এভাবে সারারাতই চলে বিদ্যুতের লুকোচুরি। সব বয়সী মানুষই অনেকটা নির্ঘুম রাত কেটেছে।
বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, চাহিদার বিপরীতে সারাদেশে ২,৫০০ থেকে ২,০০০ মেগাওয়াটের বেশি লোড-শেডিং করতে হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরেই। তাপপ্রবাহের আগে গড়ে সাধারণত ৫০০-১,০০০ মেগাওয়াট লোড-শেডিং হতো। সোমবার হয়েছে ৩,২০০ মেগাওয়াট, যা ছিল এ বছরের সর্বোচ্চ লোড-শেডিং। আর গতকাল মঙ্গলবার হয়েছে ১ হাজার ৭১৮ মেগাওয়াট।

দেশ রুপান্তর:

তেল-গ্যাসের দাম আবার বাড়ল
সরকারের নির্বাহী আদেশে ভোক্তাপর্যায়ে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১ টাকা এবং পেট্রোল ও অকটেনের দাম আড়াই টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে এবং ক্যাপটিভে (শিল্প-কারখানায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থা) ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭৫ পয়সা বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার রাতে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এ-সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। নতুন দর আজ বুধবার থেকে কার্যকর হবে।

বিদ্যুতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে ভোক্তাপর্যায়েও বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বৃদ্ধির আভাস পাওয়া গেছে। কারণ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও বাড়বে। আর ক্যাপটিভে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কারখানার পণ্য উৎপাদন খরচও বাড়বে বলে জানিয়েছেন শিল্পমালিকরা। অন্যদিকে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষিতে সেচের ব্যয় বাড়বে। সব মিলে মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় আরও বেড়ে যাবে।

এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভর্তুকি সমন্বয় করতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি ৭৫ পয়সা করে বাড়িয়েছিল সরকার।

প্রথম আলো:

মন্ত্রী–এমপিদের স্বজনেরা এবারও সরলেন না
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
দ্বিতীয় পর্বের ভোটে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের অন্তত ১৪ জনের স্বজন চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। প্রথম ধাপে ৫০ জনের মতো স্বজন প্রার্থী।

● দুজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রীর স্বজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।

● সংসদ সদস্যদের সন্তান, ভাই, শ্যালকেরাও প্রার্থী।

● ১৫৯টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৪৬৬ জন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দফায় দফায় নির্দেশ, হুঁশিয়ারি—কোনো কিছুতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের নিকটাত্মীয় ও স্বজনদের থামানো যাচ্ছে না। প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনেও মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অন্তত ১৪ জনের নিকটাত্মীয় ও স্বজনেরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।

গতকাল মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় পর্বের ভোটের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ভোট হবে ২১ মে। এই পর্বে ১৫৯টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৪৬৬ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী হয়েছে খুলনা বিভাগে। এই বিভাগে ৮৩ জন। এর পরেই রংপুর বিভাগে প্রার্থী ৬৮ জন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৬৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৪ জন, ঢাকা বিভাগে ৬২ জন,বরিশাল বিভাগে ৫১ জন, ময়মনিসংহ বিভাগে ৪০ জন ও সিলেট বিভাগে ৩৪ জন। দ্বিতীয় পর্বেও আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ

এর বাইরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ১৭ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আটজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন।

এদিকে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বারবার নির্দেশ দেওয়ার পরও তা উপেক্ষিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবনে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্বজনদের যাঁরা ভোটের মাঠে নেমেছেন, তাঁদের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রথম ধাপে শুধু নাটোরের একজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ ওঠায় ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন লুৎফুল হাবিব। তিনি তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের শ্যালক।

বাংলাদেশ প্রতিদিন:

ভালো নেই শ্রমজীবীরা
♦ সমস্যা আক্রান্ত নারী শ্রমিক ♦ কৃষি খাতে নেই মজুরি নির্ধারণ ♦ খাদ্য-বাসস্থানের সংকট ♦ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে বেড়েছে কষ্ট

ভালো নেই দেশের শ্রমজীবীরা। নানান সংকটে তাদের জীবন। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান সব ক্ষেত্রেই সংকটে ভুগছে। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি শ্রমজীবীদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। নারী শ্রমজীবীদের সংকট আরও বহুমুখী। তাদের কর্মজীবন নানা সমস্যায় আক্রান্ত এবং বৈষম্যের মধ্য দিয়ে চলেছে। আর দেশে সবচেয়ে বড় শ্রম খাত কৃষি হলেও এখানে নেই কোনো আলাদা নির্ধারিত মজুরি। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ‘শ্রমিক-মালিক গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশে পালিত হবে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার দিন-মহান মে দিবস।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে মোট শ্রমজীবীর সংখ্যা ৭ কোটি ১০ লাখ। পুরুষ ৪ কোটি ৬৪ লাখ, নারী ২ কোটি ৪৬ লাখ। দেশে কর্মরত বিশালসংখ্যক শ্রমজীবীর উল্লেখযোগ্য অংশ নারী হলেও এখনো সরকার নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। কাজ করতে গিয়ে নারী শ্রমিকরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। প্রায়ই তাদের বেতন বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। আছে যৌন হয়রানির আশঙ্কাও। ফলে কলকারখানাসহ বিভিন্ন খাতে নারী শ্রমিকরা তার পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে বেশি খেটেও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। আবার আইনে নারী শ্রমিকদের যেসব সুযোগসুবিধা পাওয়ার কথা তা মালিকের অনাগ্রহ ও পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শ্রম আইনে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির কথা বলা থাকলেও বেশির ভাগ নারী শ্রমিক তা পান না। কারখানাগুলোয় বড়জোর চার মাসের ছুটি কাটানোর সুযোগ মেলে। আবার কিছু কারখানায় নারী শ্রমিকদের চাকরিও স্থায়ী করতে চান না কর্তৃপক্ষ। দেখা যায়, মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটানোর পর সেই নারী শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়। আবার মাঠের বা দিনমজুরের কাজে একজন পুরুষ শ্রমিক যেখানে দিনে ৪০০ টাকা পান সেখানে নারী পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পুরুষ কাজের মাঝে বিশ্রামের সুযোগ পেলেও নারী তেমন সুযোগ সাধারণত পান না। ইটভাটায় যেখানে পুরুষ দিনে মজুরি পান ৫০০ টাকা, সেখানে নারী পান ৩০০ টাকা। পুরুষের সমান মজুরি চাইলে নারী শ্রমিকদের কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়াসহ নানা রকম হয়রানি করা হয়। শ্রমিক নেতারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলছেন, কলকারখানায় কর্মরত নারী ও পুরুষ শ্রমিকের সমমজুরি দেওয়া হয় না। নারীরা আট ঘণ্টার জায়গায় বারো ঘণ্টা শ্রম দিচ্ছেন। তার পরও পুরুষের সমান মজুরি পাচ্ছেন না। অভিযোগ আছে-পোশাক খাত ছাড়া নিয়মিত ভিত্তিতে অন্য খাতগুলোয় শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ হচ্ছে না। ফলে বছরের পর বছর বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ। এর ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে শ্রমিকদের জীবনধারণ হয়ে পড়েছে কষ্টকর। অবশ্য পোশাক খাতের নির্ধারিত মজুরিতেও জীবনধারণ কঠিন। বর্তমানে দেশে তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের মধ্যে ৩ লাখের ওপর রয়েছেন ন্যূনতম মজুরিভুক্ত। যাদের বেতন ১৩ হাজার টাকার নিচে।
কালের কন্ঠ:দেশে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং ও চলমান দাবদাহের কারণে চলতি মৌসুমে ধানের ফলন প্রায় ৫০ লাখ টন কম হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বেশি ক্ষতি হতে পারে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। তাপমাত্রা দীর্ঘ মেয়াদে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ালে অকালে ধান পাকার মতো বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাসখানেক ধরে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে।

দাবদাহে ক্ষতি হচ্ছে পরিপক্ব হয়ে ওঠা ক্ষেতের ধানের। এই সময়ে ধানের জমিতে দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি পরিমাণ পানি না রাখা গেলে ফলন কমে যেতে পারে। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ক্ষেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচ দেওয়া ব্যাহত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বাংলাদেশে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন কোটি ৭৭ লাখ টন।

এর বিপরীতে চালের উৎপাদন হয়েছে চার কোটি ১৩ লাখ টন। চলতি বছর আউশ, আমন ও বোরো মিলিয়ে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার কোটি ২২ লাখ টন। এর মধ্যে চলতি বোরো মৌসুমে দুই কোটি ২২ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় তিন কোটি ৩০ লাখ টন ধান উৎপাদিত হতে পারে।

যুগান্তর:

সারা দেশে টানা তাপ প্রবাহের রেকর্ড
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৪৩.৮ ও চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.৭ ডিগ্রি * ৩০ দিনের তীব্র গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত * হিট স্ট্রোকে সাত জেলায় ৮ জনের মৃত্যু * দু-একদিনের মধ্যে বৃষ্টির আভাস, কমতে পারে তাপমাত্রা
চলতি বছরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ব্যাপ্তি ও দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়িত্বের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রামের দু-একটি এলাকা ছাড়া সারা দেশের মানুষের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। টানা দাবদাহের এক মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, সারা দেশে তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তি, তীব্রতা ও সময়কাল বিবেচনায় গত ৭৬ বছরের মধ্যে চলতি এপ্রিল মাস নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এর আগে ১৯৯২ সালে ৩০ দিন তাপপ্রবাহ থাকলেও তা শুধু দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এ বছর সারা দেশেই তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপরই চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.৭ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়।

 

চলমান তাপপ্রবাহে বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য ছিল। এ কারণে মানুষের কষ্ট বেশি হয়েছে। প্রচণ্ড গরম সইতে না পেরে হিট স্ট্রোকে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গতকালও দেশের সাত জেলায় আটজন হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন। তাদের বেশিরভাগ রোদে বাইরে কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে মারা যান। এদিন গাজীপুরের কালীগঞ্জে গরমে রেললাইন বাঁকা হয়ে যায়। অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান কালনী এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। এছাড়া প্রচণ্ড গরমের জন্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের আভাস, আজ থেকে গরমের তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে। আগামী দু-একদিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। যত বেশিদিন বৃষ্টি হবে, তাপমাত্রা তত কমতে থাকবে।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক যুগান্তরকে বলেন, এবার টানা ৩০ দিন প্রায় সারা দেশেই তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। যা ৭৬ বছরের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। অতীতে সারা দেশে এভাবে তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে দেখা যায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে ২০১০ সালে ২০ দিন টানা তাপপ্রবাহ ছিল রাজশাহীতে। আর ১৯৯২ সালে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ৩০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। কিন্তু এবার চট্টগ্রাম ও সিলেটের কিছু অংশ ছাড়া সারা দেশে টানা ৩০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। এপ্রিল মাসে স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে ২-৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। তার মতে, চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত না থাকায় তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তি দীর্ঘকাল ছিল। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমে আসবে।

মঙ্গলবার দেশে সর্বোচ্চ ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। এর আগে ১৯৬৪ সালের এপ্রিল মাসে যশোরে ৪৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ওই হিসাবে ১৯৬৪ সালের পর এই প্রথম সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখলেন যশোরবাসী। যদিও ২০০৯ সালে যশোরে ৪৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। গতকাল তাপপ্রবাহের তীব্রতার দিক বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল চুয়াডাঙ্গা। গত ৩৯ বছরের রেকর্ড ভেঙে চুয়াডাঙ্গায় এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় ১৯৮৫ সালে আবহাওয়া অফিস স্থাপনের পর থেকে এটাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও গতকাল কুষ্টিয়ায় ৪২.৫, পাবনা ৪৩.২, রাজশাহী ৪৩, বাগেরহাট ৪২.৩ ও সাতক্ষীরায় ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। অর্থাৎ এসব জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র দাবদাহ বয়ে গেছে। আর টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও খুলনা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল। দেশের অন্য জেলাগুলোতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা কমার আভাস রয়েছে। এ কারণে সারা দেশে না হয়ে অঞ্চলভেদে জারি হবে নতুন হিট অ্যালার্ট।

আবহাওয়াবিদরা জানান, ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড রয়েছে। এবার তাপমাত্রা পারদ ওই পর্যন্ত পৌঁছেনি। তবে চলতি বছরে তাপপ্রবাহের স্থায়িত্বকাল অনেক বেশি। এ কারণে মানুষের কষ্টের তীব্রতাও বেশি। এই সময়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হলে মানুষের এত কষ্ট হতো না। টানা তাপপ্রবাহের কারণে সারা দেশেই মানুষের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। হিট স্ট্রোকে মানুষের মৃত্যু বেড়েছে।

তাপমাত্রা আজ থেকে কমার আভাস : গতকাল সন্ধ্যা ৬টার পূর্বাভাসে আজ বুধবার দিনে কিছু কিছু জায়গায় তাপপ্রবাহ কমতে পারে। সারা দেশে তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। দেশের পূর্বাঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাশাপাশি ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। এতে বিরাজমান তাপপ্রবাহের তীব্রতা কমে আসতে পারে। দেশের পূর্বাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। পরের পাঁচ দিনে সারা দেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

হিট স্ট্রোকে মৃত্যু : মুন্সীগঞ্জে মঙ্গলবার হিট স্ট্রোকে ওমর আলী (৬৫) ও আব্দুল বাতেন মাঝি (৬৮) নামের দুই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মরদেহে হিট স্ট্রোকের উপসর্গ ছিল বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল। জানা গেছে, ওমর আলী মাঠে কাজ করার সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আর আব্দুল বাতেন মাঝি ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যান। একইদিন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার চর তারাবাড়িয়া মাঠে ধান কাটার সময়ে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন জিল্লুর রহমান (৩৫) নামের একজন কৃষক। তিনি চর তারাবাড়িয়া গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে। সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

এছাড়া সাতক্ষীরার নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারুক হোসেন গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। সোমবার তিনি নিজ কর্মস্থলে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথম তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে খুলনা সিটি মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কাজী আরিফ তাকে দেখার পর অতিরিক্ত গরমের কারণে হিট স্ট্রোক হয়েছে বলে ধারণা করেন। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় পাঠানো হয়। নাটোরের নলডাঙ্গায় তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে খায়রুল ইসলাম (৩৯) নামে এক সৌদি প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। দুই কন্যার জনক খায়রুল ইসলাম কিছুদিন আগে সৌদি আরব থেকে ছুটিতে দেশে আসেন। মঙ্গলবার নিজের ভুট্টার জমিতে শ্রমিকরা কাজ করার সময় তিনি নিজেও গিয়ে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে হিট স্ট্রোকে মুনছের আলী (৯০) নামের একজন মারা গেছেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা নারান্দিয়া ইউনিয়নের তালতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার জানান, মুনছের আলী নারান্দিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। তিনি সকালে বাড়ি থেকে বাজার করতে সিঙ্গুরিয়া বাজারে যান। বাজার থেকে হেঁটে বাড়িতে এসে হিট স্ট্রোকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় বাড়িতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এছাড়া মঙ্গলবার দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে হিট স্ট্রোকে রহিমা বেগম (৪৭) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঘোড়াঘাট থানার ওসি আসাদুজ্জামান আসাদ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে মনির উদ্দিন নামের এক যুবক মারা গেছেন।

কালীগঞ্জে বেঁকে গেছে রেললাইন : কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, প্রচণ্ড গরমে কালীগঞ্জের আড়িখোলার দুই কিলোমিটার দূরে কাজিবাড়ীসংলগ্ন এলাকায় ৪০ ফিট রেললাইন বেঁকে যায়। ওয়েম্যানদের সতর্কতার কারণে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান।

কর্তব্যরত ওয়েম্যান রাজু লাল সাহা জানান, প্রতিদিনের মতো আমরা রেললাইনে কাজ করছিলাম। আনুমানিক ১২টার দিকে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে আড়িখোলা স্টেশনে পৌঁছায়। এ সময় কাজীবাড়িসংলগ্ন রেললাইনটি প্রচণ্ড দাবদাহে প্রায় ৪০ ফুট সাপের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করলে দ্রুত ট্রেনটি গ্রিন সিগন্যাল তুলে ইমার্জেন্সি সংকেত দিয়ে থামানো হয়। ফলে প্রাণে বেঁচে যায় যাত্রীরা। ২ ঘণ্টা ট্রেনটি থামানো অবস্থায় রেললাইনে ডোবা থেকে পানি ছিটিয়ে ঠান্ডা করে এবং লাইনের কাজ সম্পন্ন করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে ট্রেন চলাচলে সক্ষম হয়।

সিলেটে স্বস্তির বৃষ্টি : সিলেট ব্যুরো জানায়, মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৫টায় শুরু হওয়া বৃষ্টি কিছুক্ষণ থেমে ফের শুরু হয় সন্ধ্যায়। বৃষ্টি চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। এতে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ মানুষ ফিরে পেয়েছে শান্তি। সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন বলেন, মঙ্গলবার বিকালে ৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেট অঞ্চলে এমন বৃষ্টি আরও হতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানায়, সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টির পাশাপাশি ঝড়ও হতে পারে।

দৈনিক সংগ্রাম:

ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নবেম্বর’ নিয়ে আর অনুসন্ধান চলবে না: হাইকোর্ট
ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নবেম্বর’ নিয়ে আর অনুসন্ধান না চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), সিআইডি চাইলে স্বাধীনভাবে অনুসন্ধান করতে পারবে।

গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল খারিজ করে এ আদেশ দেন।

এর আগে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ লোপাটের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। ওই দিন আদালতে দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ নবেম্বর একটি দৈনিকে ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নবেম্বর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের প্রথমাংশে বলা হয়, ব্যাংকের নথিপত্রে নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেডের অফিসের ঠিকানা বনানীর বি ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ভবন। ঋণ পাওয়া মার্টস বিজনেস লিমিটেডের ঠিকানা বনানীর ডি ব্লকের ১৭ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে মিলল রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের অফিস। তবে মার্টস বিজনেস লাইন নামে তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এভাবেই ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে দুই কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে দুই হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি অসাধু চক্র।

সব মিলিয়ে বিভিন্ন উপায়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি বছরেই এ অর্থ নেয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ তুলে নেয়া হয় চলতি মাসের ১ থেকে ১৭ নবেম্বর সময়ে। যার পরিমাণ ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এজন্য ব্যাংকটির কর্মকর্তারা চলতি মাসকে ‘ভয়ংকর নবেম্বর’ বলে অভিহিত করছেন।

একইভাবে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকেও ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কোম্পানিগুলো। ফলে এ তিন ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদসহ দেনা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এমন সময়ে এসব অর্থ তুলে নেয়া হয়, যখন ব্যাংক খাতে ডলার-সংকটের পর টাকার সংকট বড় আলোচনার বিষয়।

কালবেলা:

বিএনপিতে বহিষ্কার বাণিজ্য
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপিতে চলছে বহিষ্কারের হিড়িক। গত কয়েক দিনে দল ও অঙ্গসংগঠনের ৮০ জনের মতো নেতাকে তাদের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে প্রাথমিক সদস্যপদ। তবে সরকারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনে হামলা-মামলা-গ্রেপ্তারে বিপর্যস্ত তৃণমূল নেতাকর্মীদের এমন গণবহিষ্কার নিয়ে দলের ভেতরে মতভেদ দেখা দিয়েছে। ভিন্নমত পোষণ করছেন খোদ স্থায়ী কমিটির অনেক নেতা। সাংগঠনিক হিসাবনিকাশ, জাতীয় নির্বাচনের পর নেতাকর্মীদের মানসিক অবস্থা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘিরে এলাকাভিত্তিক নানা ইস্যুসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উপজেলা নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় থাকার পক্ষে মত দিয়েছিলেন তারা। অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকায় দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা বহিষ্কার হওয়ায় তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন দলীয় ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে, তেমনি বিএনপি আরও দুর্বল হবে বলে অনেকের আশঙ্কা। সাংগঠনিক শৃঙ্খলার প্রশ্ন সামনে আনা হলেও তৃণমূল নেতাদের গণহারে বহিষ্কারের এই প্রবণতার পেছনে কারও কারও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও মনে করেন তৃণমূলের অনেক নেতা।

তারা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঠুনকো অভিযোগে দল থেকে এভাবে গণহারে বহিষ্কার করা সমীচীন নয়। জাতীয় নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে বর্জনের সিদ্ধান্ত হলেও বিপর্যস্ত তৃণমূলকে উজ্জীবিত করার স্বার্থে নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণকারী নেতাদের ব্যাপারে এতটা কঠোর হওয়া ঠিক হয়নি। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ায় দলের অনেক নেতা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করতে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের তৎপরতাকে উৎসাহিত করেন। বহিষ্কারের পর পদ ফিরে পেতে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কাছে ধরনা দেন। অনেক ক্ষেত্রে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আর্থিক লেনদেনও হয়ে থাকে। উপজেলা নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক বহিষ্কারের পেছনেও কারও কারও সে ধরনের উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাসহ একটি বড় অংশ মনে করে, আন্দোলন-সংগ্রামে যারা মাঠে ছিলেন, তাদের এভাবে বহিষ্কার করায় দল উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জেল-জুলুম উপেক্ষা করে আন্দোলনে থাকায় তাদের যেখানে পুরস্কৃত করার কথা, সেখানে উল্টো শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এমন সিদ্ধান্ত সংগঠনের জন্য বুমেরাং হতে পারে।