আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর:
যুগান্তর:
ব্যাংক খাতে আতঙ্ক উদ্বেগ উৎকণ্ঠা
এখন ব্যাংক খাতে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন কোন ব্যাংককে কার সঙ্গে একীভূত করে দেবে তা কেউ জানে না। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আপাতত পাঁচ ব্যাংকের বাইরে আর কোনো ব্যাংক একীভূত করা হবে না। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকারদের পাশাপাশি আমানতকারীদের মধ্যেও নানা রকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। কেউ কেউ ভয়ে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একত্রিত হতে আপত্তি জানিয়েছে সরকারি বেসিক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মানববন্ধন করেছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকও। বুধবার বিকালে বেসিক ব্যাংকের পর্ষদ সভা ছিল। সেখানেও কোনো বেসরকারি ব্যাংকের অধীনে বেসিক ব্যাংক যাবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বেসিক ব্যাংকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ব্যাংক খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সবলের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংককে মার্জার বা একীভূত করে লাভ হবে না। প্রয়োজন ব্যাংক খাতের প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির মুখোমুখি করা। এছাড়া ব্যাংক খাতে এমন অনেক পরিচালক আছেন, যাদের হাতে ব্যাংক বড়ই অনিরাপদ। অর্থাৎ রক্ষক হয়েই তারা ভক্ষকের ভূমিকায় রয়েছেন। ফলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে ব্যাংকে কোনোদিন আস্থা ফিরে আসবে না।
জানতে চাইলে বিআইবিএমের সাবেক মহাপরিচালক ড. মইনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আসলে এত ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া ভুল ছিল। আবার এখন যেসব দুর্বল ব্যাংককে ভালো ব্যাংকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটাও আরেকটা ভুল সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা ঋণখেলাপি। মন্দমানের এ টাকা আদায়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সরকার। উলটো মার্জার এবং খেলাপি ঋণ কীভাবে কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখা যায়, বিভিন্ন সময় সে উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। এটা সরকারের ভুল নীতি। এছাড়া ঋণখেলাপিদের নানা সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়। ব্যাংক খাত উদ্ধারে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি রাঘববোয়ালদের শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। মার্জার করে ব্যাংক খাতকে বাঁচানো যাবে না। মূল অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ডুবন্ত ন্যাশনাল ব্যাংককে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইউসিবির ওপর। যা অনেক আগে লুট হয়ে গেছে। এতে ইউসিবি বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, জোর করে মার্জার করা ঠিক হচ্ছে না। বরং দরকার ছিল দুর্বলের সঙ্গে দুর্বল এবং সবলের সঙ্গে সবল ব্যাংক মার্জার করা। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে-তাতে সবল ব্যাংকও দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এছাড়া ব্যাংকের পর্ষদে থাকতে হবে পেশাদার মানুষ। শুধু ব্যাংকের মালিক হলেই বোর্ডে থাকতে পারবে না-এমন নীতিমালা থাকা দরকার। কারণ অনেক পরিচালক আছেন, যাদের হাতে ব্যাংক অনিরাপদ। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংককে অন্য পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কার্যত কিছুটা সবল ব্যাংকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে দুর্বল ব্যাংকের বোঝা। ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে পথনকশা দেওয়ার পর এই ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি মাসের শুরুতে ব্যাংক একীভূত সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে, তবে সে নীতিমালা জারির আগেই তিনটি ব্যাংক ও পরে দুটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। নীতিমালা অনুযায়ী এই পর্যায়ে ব্যাংক একীভূত হওয়ার কথা স্বেচ্ছায়; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই এই নীতিমালা মানছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
নয়াদিগন্ত:
ব্যাংকের বেশির ভাগ অর্থ সরকারের কোষাগারে
ঈদের পর ২ দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের মোট তরল সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশই এখন সরকারের কোষাগারে আটকে রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে গত জানুয়ারি শেষে ব্যাংকের মোট তরল সম্পদ রয়েছে চার লাখ ২৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের কোষাগারেই রয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। এদিকে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষ আর আগের মতো সঞ্চয় করতে পারছেন না।
বরং সঞ্চিত বিনিয়োগই অনেকেই ভেঙে খাচ্ছেন। এ কারণে ব্যাংকগুলো কাক্সিক্ষত হারে আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না। অপরদিকে, ঋণও আদায় হচ্ছে না কাক্সিক্ষত হারে। এমনি পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আর তারই নমুনা হলো ঈদের পর দুই কার্যদিবসে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খোলার দিনই অর্থাৎ ১৫ এপ্রিলে ধার করেছে ১৯ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংক খাতে কোর ডিপোজিট বাড়ছে না। আবার মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। সবমিলেই নগদ অর্থের সঙ্কট বেড়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ঈদের আগে গ্রাহকরা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে বাড়তি অর্থ উত্তোলন করেন। আর এ কারণে ব্যাংকে নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দেয়। আর এ সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট থেকে উচ্চ সুদে ধার নেয়। আবার বাজারে কাক্সিক্ষত হারে টাকা পাওয়া না গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেয়। ঈদের পরে ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলনের চাপ কম থাকে। তাই ঈদের পর ব্যাংকে তেমন তারল্য সঙ্কট থাকে না।
কিন্তু এবার ঠিক তার উল্টো। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ঈদের ছুটির পর প্রথম কার্যদিবসে অর্থাৎ গত ১৫ এপ্রিলে টাকার সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ১৯ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। আর ১৬ এপ্রিল ধার করেছে ১৬ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। এ থেকেই অনুমান করা যায়, ব্যাংকিং খাতে টাকার সঙ্কটের প্রকৃত অবস্থা কতটা ভয়াবহ। ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরেই টাকার সঙ্কট চলছে। এর অন্যতম কারণ হলো মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ আর আগের মতো সঞ্চয় করতে পারছেন না। বরং বিদ্যমান সঞ্চয় অনেকেই ভেঙে খাচ্ছেন। এ কারণে কোর ডিপোজিট বাড়ছে না।
অপরদিকে, ব্যাংকগুলো দীর্ঘ দিন ধরেই ডলার সঙ্কটের কারণে বাড়তি দামে ডলার কিনছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যাংক ডলার কিনছে। বিপরীতে মার্কেট থেকে টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে যাচ্ছে। অপরদিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কোনো কোনো ব্যাংক বেশি হারে সরকারি ট্রেজারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ করেছিল। সবমিলেই টাকার তারল্য সঙ্কট কাটছে না।
আর এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে অনেক ব্যাংক। এ দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে ব্যাংক ঋণের সুদের একক হার তুলে দিয়ে নতুন মানদণ্ড চালু করা হয়। ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার যেটা হবে তাই সুদহার নির্ধারণের প্রাথমিক মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়। আর এ মানদণ্ডকে সংক্ষেপে স্মার্ট বলা হয়। এই স্মার্টের সাথে সাড়ে তিন শতাংশ সুদহার যুক্ত করে নতুন সুদহার নির্ধারণ করা হয়। জানা গেছে, প্রতি মাসেই এ সুদহার বেড়ে যাচ্ছে। মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে ব্যাংক ঋণের সুদহার প্রায় ৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এ কারণেও ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমে গেছে শিল্প উদ্যোক্তা ও আবাসন খাতের গ্রাহকদের। আর এ কারণে গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ধরে রাখতে ৯ মাস আগের হারেই ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এ জন্য বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করেছে।
মানবজমিন:
ইরান-ইসরাইল সংকট বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন করে উদ্বেগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ ছাড়া চলমান দ্বন্দ্ব দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য হুমকি তৈরি করেছে। বলা হচ্ছে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার অস্থিতিশীল হলে বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের দাম। বেশি দামে জ্বালানি আমদানিতে ব্যর্থ হলে লোডশেডিং ও অর্থনৈতিক ক্ষতি বাড়তে পারে। সুয়েজ খাল বন্ধ থাকলে বাড়বে পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যয়। বাড়বে পণ্য পৌঁছানোর সময়ও।
এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতারা পোশাকের জন্য বিকল্প উৎস খুঁজবে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি অর্ডার হারানোর শঙ্কা রয়েছে। যদি এ সংঘর্ষ দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর বিভিন্ন প্রভাব পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর যেমনটা ঘটেছিল, ঠিক সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে হরমুজ প্রণালিতে আরও জটিলতা দেখা দিলে চলমান পরিস্থিতি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। এ নৌপথটি দিয়ে প্রতিদিন বৈশ্বিক তেল উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশ পরিবাহিত হয়।
এর ফলে পণ্য পরিবহনের খরচ ও শিপিংয়ের সময় বেড়ে যেতে পারে। গত রোববার সিরিয়ার দামেস্কে নিজেদের কনস্যুলেট ভবনে ইসরাইলি হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলে সরাসরি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশ এ উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়েছে। এতে মধ্যপ্রাচ্য সংকট দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে সময়মতো পণ্য হাতে না পাওয়ার শঙ্কায় ইউরোপের ক্রেতারা তাদের কাছাকাছি কোনো দেশে রপ্তানি আদেশ দিতে পারে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা।
প্রথাম আলো:
বিপুল অর্থ ব্যয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা কম। ফলে দুর্ঘটনা কমছে না। আনোয়ার হোসেন, ঢাকা ২০১২ সালের পর ১১ বছরে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে। সড়ক সম্প্রসারণ, নতুন নতুন সেতু ও টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সড়কে দুর্ঘটনা কমছে না, বরং মৃত্যু বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল ব্যয় হলেও যানবাহনের ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স নিশ্চিত করা, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো ও শ্রমিকদের মাদক গ্রহণ বন্ধ করা, নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা, সড়কের ত্রুটি দূর করা, অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করা—এসব নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে দুর্ঘটনা কমেনি। সারা দেশের সড়কে এখন ছয় লাখের বেশি যানবাহন চলছে অবৈধভাবে, যাদের হালনাগাদ ফিটনেস সনদ নেই। সড়কে শৃঙ্খলা না থাকার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে পরপর দুদিন দুটি বড় দুর্ঘটনার পর।
গতকাল বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় একটি দ্রুতগতির ট্রাক তিনটি ইজিবাইক, একটি গাড়ি (প্রাইভেট কার) ও একটি ছোট ট্রাককে ধাক্কা ও চাপা দিলে ১৪ জন মারা যান। অথচ ইজিবাইক মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ। এর এক দিন আগেই ফরিদপুরে বাস ও যাত্রীবাহী ট্রাকের সংঘর্ষে ১৫ জন মারা যান। দুর্ঘটনায় পড়া বাসটির রুট পারমিট (নির্দিষ্ট পথে চলাচলের অনুমোদন), হালনাগাদ ফিটনেস সনদ ও ট্যাক্স টোকেন (কর পরিশোধের সনদ) কিছুই ঠিক ছিল না। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা ছিলেন ছোট ট্রাকের যাত্রী। যদিও আইনে ট্রাকে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার এবং বেশি সংখ্যায় প্রাণহানির মতো অবস্থা সড়কে বিদ্যমান। দুর্ঘটনা কমানো ও প্রাণহানি ঠেকাতে সরকারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সে অনুযায়ী কোনো কর্মসূচি নেই। এমনি এমনি প্রাণহানি কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। ‘শিক্ষার্থীরা চোখ খুলে দিয়েছে’—নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ এমন কথাও বলেছিলেন। কিন্তু এরপরও বদলায়নি তেমন কিছু। আন্দোলনের চাপে তড়িঘড়ি সড়ক পরিবহন
বাংলাদেশ প্রতিদিন:
বেপরোয়া ট্রাক পিষে মারল ১৪ জনকে
ঝালকাঠি গাবখান ব্রিজের টোল প্লাজায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি প্রাইভেট কার ও কয়েকটি অটোরিকশার ওপর উঠে গেছে বেপরোয়া ট্রাক। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৪ জন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৪ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজন পুরুষ, তিনজন নারী ও চার শিশু। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, টোল প্লাজায় টাকা দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল তিনটি ইজিবাইক, একটি পণ্যবাহী ছোট ট্রাক, একটি প্রাইভেট কারসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি। এ সময় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সিমেন্টবাহী ট্রাকটি সেতুর দক্ষিণ দিক থেকে প্রচণ্ড গতিতে টোল প্লাজার সামনে থাকা সব গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পশ্চিম পাশে খাদে পড়ে যায়।
এতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রাইভেট কারটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই আটজন নিহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে বরিশাল ও ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে আরও চারজন ও বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন মারা যান। নিহতরা হলেন- নজরুল (৩৫), সফিকুল মাঝি (৫০), আতিকুর রহমান সাদি (১১), ইমরান হোসেন (৪০), নুরজাহান (৭), তাহমিনা (২৫), ইব্রাহিম (৪০), হাসিবুর রহমান (৪০), সোনিয়া বেগম (৩০), তানিয়া আক্তার (৩), তাহমিদ রহমান (০১), নিপা (২২), রুহুল আমিন ও শহিদুল ইসলাম।
ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলেই আটজনকে নিহত পাওয়া যায় এবং ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে আনার পরে আরও চারজন মারা যায়। ঝালকাঠিতে মোট ১২ জন মারা যায়। বিকালে বরিশাল শেবাচিমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যায়। এ ঘটনায় আরও ১৪ জন আহত হন। ১০ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চারজন ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঝালকাঠি পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, ঘাতক ট্রাকটিকে আটক করা হয়েছে। ড্রাইভার ও হেলপারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ড্রাইভারের নাম আলামিন হাওলাদার। আলামিনের পিতার নাম আনসার উদ্দিন। তার বাড়ি সদর উপজেলার নবগ্রামে ও হেলপার নাজমুল শেখের বাড়ি খুলনায়।
দুর্ঘটনার পর গতকাল দুপুরে আহতদের আনা হয় ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে। একে একে সেখানে মারা যান চারজন। নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে যায় হাসপাতালের পরিবেশ। এ ঘটনায় শিশু ও মহিলাসহ একই পরিবাবের ছয়জন মারা গেছেন। নিহতদের স্বজনরা জানালেন, তারা চারটি অটোরিকশায় করে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের দুটি অটোরিকশা সামনে চলে যায়। পিছনে থাকা দুটি অটোকে ঘাতক ট্রাক চাপা দেয়। এর মধ্যে একটি অটোতে থাকা সবাই মারা যান। একই সঙ্গে থাকা একটি প্রাইভেট কারকে চাপা দিলে ড্রাইভারসহ সব যাত্রী নিহত হয়। এদিকে, গতকাল সন্ধ্যার পর ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল থেকে নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন ঝালকাঠি সিভিল সার্জন এ এইচ এম জহিরুল ইসলাম। এখান থেকে ১২ জনের লাশ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
ইত্তেফাক:
ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি সামান্য কমেছে। তবে সুদের হার ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার সুবাদে আমানতের প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ফেব্রুয়ারি মাসে মোট আমানত ১৬ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েকটি কারণে আমানতে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যতম কারণ হচ্ছে সম্প্রতি আমানতের সুদহার বাড়ানো। এতে সঞ্চয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে মানুষ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকে টাকা রাখতে উৎসাহিত হচ্ছে। এছাড়া রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিও আমানতের প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমানতের জন্য অর্থও বেশি পাওয়া। আমানতের প্রবৃদ্ধি টানা তিন মাস ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানতে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ১১ দশমিক ০৪ শতাংশে পৌঁছায়, যা ২৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে করোনা মহামারির বৈশ্বিক লকডাউন ও সে কারণে হওয়া অর্থনৈতিক গতি মন্থরতার প্রভাবে আমানত প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ২৬ শতাংশে পৌঁছেছিল।