ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সর্ম্পক নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থায় ইসরায়েল-সৌদির চুক্তি বাইডেনের জন্য বড় কূটনৈতিক বিজয় হিসেবেই ধরা দেবে।
তবে এ চুক্তি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার নিজ দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আইন প্রণেতাদের বাধার মুখে পড়তে পারেন, এমন আশঙ্কার কথা বেশ আগে থেকেই বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। এবার তাদের সেই আশঙ্কার কথাই সত্য হলো। সম্ভাব্য মার্কিন-ইসরায়েল-সৌদি কূটনৈতিক চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ২০ মার্কিন ডেমোক্র্যাট সিনেটর। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দেওয়া এই চিঠির পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান ক্রিস মারফি, ডিক ডারবিন, ক্রিস ভ্যান হোলেন ও পিটার ওয়েলচ প্রমুখ। মার্কিন সিনেটররা বলছেন, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তির প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। তবে এই চুক্তির বিনিময়ে রিয়াদ যে মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বা পারমাণবিক সহায়তার দাবি করেছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে দেওয়া চিঠিতে ওই ২০ মার্কিন সিনেটর বলেছেন, রিয়াদের দাবি-দাওয়া মেনে বাইডেন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের শত্রু দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চুক্তি করলে তা মার্কিন কংগ্রেসের বাধার মুখে পড়তে পারে। একই সঙ্গে সম্ভাব্য এই চুক্তি নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন সিনেটররা। তাদের পরামর্শের মধ্যে রয়েছে, চুক্তিতে ইসরায়েলে-ফিলিস্তিন সংঘাত সমাধানে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের অর্থপূর্ণ প্রবিধান যুক্ত করা। যদিও ইসরায়েলের বর্তমান উগ্র-ডানপন্থি সরকার ফিলিস্তিনিদের নিয়ে যে কোনো বড় ছাড় দেওয়ার বিরোধিতা করবে, এমন সম্ভবনায় বেশি। তবে ২০ সিনেটরের এই চিঠির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি হোয়াইট হাউস।
গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বহুল আলোচিত বিষয়—ইসরায়েলের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নিপ্রধান মুসলিম রাষ্ট্র সৌদি আরবের শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা। গেল কয়েক মাসে বিষয়টি বহুদূর এগিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন উভয় পক্ষের রাষ্ট্রপ্রধানরা। জানা যায়, রিয়াদ এবং ওয়াশিংটন ডিসির মধ্যকার প্রতিরক্ষা চুক্তিটি অনেকটা ন্যাটোর প্রতিরক্ষা সুরক্ষার মতো হতে পারে। ২০২২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সৌদি সফরে এ বিষয়ে আলোচনা করেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
রয়টার্স জানায়, রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার প্রতিরক্ষা চুক্তিটি এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা চুক্তির মতো হতে পারে। যদি বিষয়টি কংগ্রেসের অনুমোদন না পায় মধ্যপ্রাচ্যের অপর রাষ্ট্র বাহরাইনের মতো দেশটিতে মার্কিন ঘাঁটি স্থাপন করা হতে পারে।
মার্কিন একটি সূত্র মতে, ন্যাটোবহির্ভূত উল্লেখযোগ্য মিত্র হিসেবে সৌদি আরবকে স্বীকৃতি দিয়ে যে কোনো চুক্তি করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এই স্বীকৃতি এরই মধ্যে ইসরায়েলকে দেওয়া হয়েছে। তবে সৌদি সূত্রগুলো জানায়, চুক্তি স্বাক্ষরের শর্ত হিসেবে আক্রমণের শিকার হলে মার্কিন প্রতিরক্ষার বাধ্যতামূলক প্রতিশ্রুতি নিয়ে কোনো ছাড় দেবে না রিয়াদ। ঐতিহাসিক এই চুক্তির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার পাশাপাশি বেসামরিক পারমাণবিক সহায়তা ও উন্নত অস্ত্রও দাবি করেছে সৌদি আরব। সিনেটরদের চিঠিতে সৌদির এই দাবির বিষয়টিও উঠে এসেছে। সৌদির এমন দাবি-দাওয়ায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।