চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে পাবনার চাটমোহরে চড়ক পূজা ও মেলা শুরু হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এ মেলা শুক্রবার (১২ এপ্রিল) প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
মেলার আয়োজক সূত্র জানায়, প্রথমদিন মন্দিরে মহাদেব স্থাপন করা হয়েছে এবং পুকুর থেকে চড়ক গাছ তুলে পূজা স্থানে (চড়ক বাড়িতে) স্থাপন করা হয়। শনিবার পূজার আনুষ্ঠানিকতা ও চড়ক গাছ ঘোরানো হবে। রোববার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। প্রায় ৭০০ বছরের ঐতিহ্যের এ মেলাকে ঘিরে জনসাধারণ বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
মেলা কতৃপক্ষ জানায়, এ বছরও মেলায় পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রকমারি পণ্য বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন দোকানদাররা। শুধু এপার বাংলা নয়, ওপার বাংলা থেকেও ভক্ত-পুণ্যার্থীরা আসেন এ চড়ক পূজায়। মেলায় নাগরদোলা, বায়োস্কোপ, যাত্রা, পুতুলনাচ ও সার্কাস অনুষ্ঠিত হবে।
পূজার প্রধান পুরোহিত সৌরেশ চক্রবর্তী শুটকা ঠাকুর বলেন, বানরাজার আমল থেকে এখানে চড়ক মেলা চলছে। প্রথম চড়কগাছ প্রতিস্থাপন করেছিলেন মাখন স্যানাল নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী। আসাম থেকে কিনে আনা তার কাঠের মধ্যে চড়কগাছের আগমন ঘটেছিল এখানে। আর মাখনের স্ত্রীকে স্বপ্নের মাধ্যমে দেবতা মহাদেব জানিয়ে দেন চড়ক হয়ে তিনি এসেছেন এখানে। তাকে স্থাপন করে যেন পূজা দেওয়া হয়। সেই থেকে স্যানাল আর আচার্য পরিবার পূজা শুরু করেন হলদার আর সূত্রধরদের নিয়ে।
আচার্য পরিবারের সদস্য বিপ্লব কুমার আচার্য জানান, গ্রামে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই জামাই-মেয়েকে এরমধ্যে দাওয়াত করে নিয়ে এসেছেন। নতুন জামাই-মেয়েকে এ সময় ইলিশ মাছ খাওয়ানের চল বহুদিনের। পাশাপাশি দূরের আত্মীয়-স্বজনরাও বোথর গ্রামে বেড়াতে এসেছেন।
তিনি আরও জানান, ভক্ত-অনুসারীরা তাদের মনোবাসনা পূরণের আশায় চড়ক গাছে তেল, দুধ-দই-চিনি মাখেন। চৈত্র সংক্রান্তির তিথিতে চড়কগাছ ঘোরানো হবে। এদিন বেশি জাঁকজমকপূর্ণ হবে। রোববার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী বোঁথরের চড়ক পূজা ও মেলা উৎসব শেষ হবে।
চাঁদবাড়ীর বড়কর্তা শংকর কুমার সাহা বলেন, মেলার জৌলুস আগের চেয়ে কমে গেছে। চড়কবাড়ির মন্দির টিনের আটচালা থেকে এখন পাকা হয়েছে বটে তবে সেই জৌলুস নেই। আগে টানা সাতদিন চলতো মেলা। এখন পরিধি কমে তিনদিনে এসে ঠেকেছে।