ঢাকা ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতারণার শিকার নোবিপ্রবির মেধাবী শিক্ষার্থীরা

ডিজিটাল প্রতারণার শিকার নোবিপ্রবির বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

স্কলারশিপ নিয়ে ডিজিটাল প্রতারণার শিকার হয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একগুচ্ছ শিক্ষার্থী। বিভিন্ন বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেও নোবিপ্রবির বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। টাকা হারিয়েছেন একই বিভাগের ৩ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের অভিমত বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা এতে জড়িত থাকতে পারে।

সাধারণত উচ্চমাধ্যমিকে বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বোর্ড থেকে দুই ক্যাটাগরিতে বৃত্তি দিয়ে থাকে। মেধাবৃত্তি প্রাপ্তরা চার বছরে ৪৬,৫০০ ও সাধারণ বৃত্তি প্রাপ্তরা ২১,০০০ টাকা পেয়ে থাকে বোর্ড থেকে।

সম্প্রতি কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তা পরিচয়ে বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্যবহার করে অভিভাবকদের ব্যাংক একাউন্ট থেকে অর্থ লুট করে নিয়েছে প্রতারক চক্র। প্রতারক কর্তৃক উপস্থাপিত শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য শধুমাত্র সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাবোর্ডেই থাকে বলে জানিয়েছেন ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ব্যাংক একাউন্ট থেকে ৬০ হাজার টাকা লুট করে নিয়েছে প্রতারক চক্র, অথচ ঠিকভাবে মেধাবৃত্তি প্রাপ্তদের চার বছরে সবমিলে ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা দেয় সরকার, সাধারন বৃত্তিপ্রাপ্তরা পান মোট ২১ হাজার টাকা।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কিছু শিক্ষার্থীর অভিভাবকের একাউন্ট থেকেও অর্থ লুট করে নিয়েছে প্রতারকরা। অনেক শিক্ষার্থীদের ফোন দিয়ে টাকা নিতে না পেরে গালিগালাজ ও করেছে প্রতারকরা। এক শিক্ষার্থী প্রতারকের কাছে টাকা ফেরত চাইলে প্রাপ্ত ফোন রেকর্ডে প্রতারককে বলতে শুনা যায়, “অনেকের লাখ লাখ টাকা চলে গেছে, আপনার ৫ হাজার টাকা কোনো টাকা হইলো মিয়া?”

শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধুমাত্র আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের পলি মজুমদার, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বেনজির জাহান জেমিমা ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের রাহাতুল ইসলাম রাফির অভিভাবকের কাছ থেকে যথাক্রমে ৬০ হাজার, ১০ হাজার ও ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। ডিজিটাল এই প্রতারক চক্রের কাছে ১০ হাজার টাকা করে হারিয়েছেন বায়োটেকনলোজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী নিশাত মরিয়ম ও ফুড টেকনলোজি এন্ড নিউট্রিশন সাইন্স বিভাগ ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হিমেল।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বেনজির জাহান জেমিমার অভিযোগ অনুযায়ী, উল্লেখিত 01323911157 নাম্বার থেকে কল দিয়ে নিজেদের বোর্ড সদস্য পরিচয় দেয় প্রতারকচক্র। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীর নাম, বাবা-মায়ের নামসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের বৃত্তির টাকা প্রদানের একাউন্ট পরিবর্তন করার কথা বলে প্রতারক চক্র। পরবর্তীতে অভিভাবকের কার্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে টাকা উত্তোলন করে নেয় প্রতারকরা।

নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী তামজিদা দেওয়ান মৃত্তিকা অভিযোগ করে বলেন, একই নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে তার সকল তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করে পূর্বের একাউন্টে আর বৃত্তির টাকা আসবেনা বলে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে এটিএম কার্ডের তথ্য চাইলে অভিভাবক কর্তৃক এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললে কল কেটে দেন। পরবর্তীতে আর যোগাযোগ করেন নি প্রতারকরা।

অন্য আরেক শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম আযাদের অভিযোগ অনুযায়ী, একইভাবে শিক্ষার্থীর একাডেমিক সকল সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে প্রতারণার চেষ্টা করে চক্রটি। একইরকম অভিযোগ করেন প্রতারকচক্রের কাছে টাকা হারানো অন্য শিক্ষার্থীরাও। এছাড়াও এই অভিযোগ তুলেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী। অভিভাবকদের সচেতনতার ফলে প্রতারক চক্রের বিষয়ে বুঝে গেলে তথ্য দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন তারা।

এদিকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রতারকচক্র এসব তথ্য পেয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ নোটিশ দিয়ে বৃত্তিপ্রাপ্তদের তথ্য চান। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা প্রশোজনীয় সকল তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দেন। তারা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আমাদের তথ্য পাচার হচ্ছে। মোবাইল ফোনে অভিভাবকদেরকে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করার কারণে অনেকের অভিভাবক এটা যে প্রতারণা বুঝতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের তথ্যের নিরাপত্তা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় এর দায় এড়াতে পারে না।

তবে ভিন্নমত দিয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) সাইবার সেন্টারের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এ.আর.এম মাহামুদুল হাসান রানা। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য বোর্ড থেকেও ছড়াতে পারে। নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুঠোফোনে শেয়ার করার আগে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। তিনি আরও বলেন, আমাদের কোন তথ্য দরকার হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি চাওয়া হবে। তারপরও ফোনে কেউ যোগাযোগ করে তথ্য চাইলে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। আমরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কুমিল্লা বোর্ড ছাড়াও অন্যান্য বোর্ডের অধীনে উচ্চমাধ্যমিকে অংশ নেয়া বৃত্তিপ্রাপ্তও রয়েছেন। এদের মধ্যে একাধিক শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম ও ঢাকা বোর্ডের অধীনে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। এমন এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তিনি ঢাকা বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেও তার অভিভাবককে কল করে কুমিল্লা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয়ে বৃত্তির সংশ্লিষ্ট একাউন্ট পরিবর্তনের বিষয়ে কথা বলেছে প্রতারক চক্র।
এদিকে চক্র শনাক্তকরণে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে। এই বিষয়ে ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীদের নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন বিভাগের পুলিশ সুপার এনামুল হক সাগর। তিনি বলেন, ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীরা তাদের নিকটস্থ পুলিশের যেকোন স্টেশনে যোগাযোগ করে আমাদের নিকট অভিযোগ জমা দিলে আমরা যথাযথ আইনী সহায়তা প্রদান করব।

তবে ভুক্তোভোগী এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, এই বিষয়ে যোগাযোগ করতে গেলে বলতে গেলে অভিযোগ করে কোন লাভ হবে না বলে নোয়াখালীর সুধারাম থানা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আমরা জিডি করতে গেলে থানায় বলা হয় এটি অভিযোগ আকারে দিতে হবে। পরে অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ জানায় প্রতারক চক্রের সদস্যরা অপরিচিত কারো নাম্বার ব্যবহার করে এসব প্রতারণা করে থাকে। অনেকসময় দেখা যায়, এভাবে যাদের ধরে আনা হয় অভিযোগের ঘটনার সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা থাকে না। এসব বলে থানা থেকে জানানো হয়, এই বিষয়ে অভিযোগ করেও প্রকৃত আসামীকে খুজে পাওয়া যায় না।

এই বিষয়ে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি এই বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীরা আমাদের অফিসে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের যথাযথ আইনী সহায়তা প্রদান করবো। একইসঙ্গে প্রতারক চক্র বের করে আনতে আমাদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম জানান, “ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার দপ্তরে বিষয়টি জানালে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করব। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা প্রতারকদের বের করার চেষ্টার করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।”

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশ–ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ আজ টিভিতে যা দেখবেন

প্রতারণার শিকার নোবিপ্রবির মেধাবী শিক্ষার্থীরা

ডিজিটাল প্রতারণার শিকার নোবিপ্রবির বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় ০৯:৩৮:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪

স্কলারশিপ নিয়ে ডিজিটাল প্রতারণার শিকার হয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একগুচ্ছ শিক্ষার্থী। বিভিন্ন বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেও নোবিপ্রবির বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। টাকা হারিয়েছেন একই বিভাগের ৩ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের অভিমত বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা এতে জড়িত থাকতে পারে।

সাধারণত উচ্চমাধ্যমিকে বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বোর্ড থেকে দুই ক্যাটাগরিতে বৃত্তি দিয়ে থাকে। মেধাবৃত্তি প্রাপ্তরা চার বছরে ৪৬,৫০০ ও সাধারণ বৃত্তি প্রাপ্তরা ২১,০০০ টাকা পেয়ে থাকে বোর্ড থেকে।

সম্প্রতি কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তা পরিচয়ে বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্যবহার করে অভিভাবকদের ব্যাংক একাউন্ট থেকে অর্থ লুট করে নিয়েছে প্রতারক চক্র। প্রতারক কর্তৃক উপস্থাপিত শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য শধুমাত্র সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাবোর্ডেই থাকে বলে জানিয়েছেন ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ব্যাংক একাউন্ট থেকে ৬০ হাজার টাকা লুট করে নিয়েছে প্রতারক চক্র, অথচ ঠিকভাবে মেধাবৃত্তি প্রাপ্তদের চার বছরে সবমিলে ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা দেয় সরকার, সাধারন বৃত্তিপ্রাপ্তরা পান মোট ২১ হাজার টাকা।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কিছু শিক্ষার্থীর অভিভাবকের একাউন্ট থেকেও অর্থ লুট করে নিয়েছে প্রতারকরা। অনেক শিক্ষার্থীদের ফোন দিয়ে টাকা নিতে না পেরে গালিগালাজ ও করেছে প্রতারকরা। এক শিক্ষার্থী প্রতারকের কাছে টাকা ফেরত চাইলে প্রাপ্ত ফোন রেকর্ডে প্রতারককে বলতে শুনা যায়, “অনেকের লাখ লাখ টাকা চলে গেছে, আপনার ৫ হাজার টাকা কোনো টাকা হইলো মিয়া?”

শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধুমাত্র আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের পলি মজুমদার, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বেনজির জাহান জেমিমা ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের রাহাতুল ইসলাম রাফির অভিভাবকের কাছ থেকে যথাক্রমে ৬০ হাজার, ১০ হাজার ও ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। ডিজিটাল এই প্রতারক চক্রের কাছে ১০ হাজার টাকা করে হারিয়েছেন বায়োটেকনলোজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী নিশাত মরিয়ম ও ফুড টেকনলোজি এন্ড নিউট্রিশন সাইন্স বিভাগ ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হিমেল।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বেনজির জাহান জেমিমার অভিযোগ অনুযায়ী, উল্লেখিত 01323911157 নাম্বার থেকে কল দিয়ে নিজেদের বোর্ড সদস্য পরিচয় দেয় প্রতারকচক্র। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীর নাম, বাবা-মায়ের নামসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের বৃত্তির টাকা প্রদানের একাউন্ট পরিবর্তন করার কথা বলে প্রতারক চক্র। পরবর্তীতে অভিভাবকের কার্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে টাকা উত্তোলন করে নেয় প্রতারকরা।

নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী তামজিদা দেওয়ান মৃত্তিকা অভিযোগ করে বলেন, একই নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে তার সকল তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করে পূর্বের একাউন্টে আর বৃত্তির টাকা আসবেনা বলে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে এটিএম কার্ডের তথ্য চাইলে অভিভাবক কর্তৃক এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললে কল কেটে দেন। পরবর্তীতে আর যোগাযোগ করেন নি প্রতারকরা।

অন্য আরেক শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম আযাদের অভিযোগ অনুযায়ী, একইভাবে শিক্ষার্থীর একাডেমিক সকল সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে প্রতারণার চেষ্টা করে চক্রটি। একইরকম অভিযোগ করেন প্রতারকচক্রের কাছে টাকা হারানো অন্য শিক্ষার্থীরাও। এছাড়াও এই অভিযোগ তুলেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী। অভিভাবকদের সচেতনতার ফলে প্রতারক চক্রের বিষয়ে বুঝে গেলে তথ্য দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন তারা।

এদিকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রতারকচক্র এসব তথ্য পেয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ নোটিশ দিয়ে বৃত্তিপ্রাপ্তদের তথ্য চান। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা প্রশোজনীয় সকল তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দেন। তারা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আমাদের তথ্য পাচার হচ্ছে। মোবাইল ফোনে অভিভাবকদেরকে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করার কারণে অনেকের অভিভাবক এটা যে প্রতারণা বুঝতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের তথ্যের নিরাপত্তা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় এর দায় এড়াতে পারে না।

তবে ভিন্নমত দিয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) সাইবার সেন্টারের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এ.আর.এম মাহামুদুল হাসান রানা। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য বোর্ড থেকেও ছড়াতে পারে। নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুঠোফোনে শেয়ার করার আগে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। তিনি আরও বলেন, আমাদের কোন তথ্য দরকার হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি চাওয়া হবে। তারপরও ফোনে কেউ যোগাযোগ করে তথ্য চাইলে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। আমরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কুমিল্লা বোর্ড ছাড়াও অন্যান্য বোর্ডের অধীনে উচ্চমাধ্যমিকে অংশ নেয়া বৃত্তিপ্রাপ্তও রয়েছেন। এদের মধ্যে একাধিক শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম ও ঢাকা বোর্ডের অধীনে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। এমন এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তিনি ঢাকা বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেও তার অভিভাবককে কল করে কুমিল্লা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয়ে বৃত্তির সংশ্লিষ্ট একাউন্ট পরিবর্তনের বিষয়ে কথা বলেছে প্রতারক চক্র।
এদিকে চক্র শনাক্তকরণে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে। এই বিষয়ে ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীদের নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন বিভাগের পুলিশ সুপার এনামুল হক সাগর। তিনি বলেন, ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীরা তাদের নিকটস্থ পুলিশের যেকোন স্টেশনে যোগাযোগ করে আমাদের নিকট অভিযোগ জমা দিলে আমরা যথাযথ আইনী সহায়তা প্রদান করব।

তবে ভুক্তোভোগী এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, এই বিষয়ে যোগাযোগ করতে গেলে বলতে গেলে অভিযোগ করে কোন লাভ হবে না বলে নোয়াখালীর সুধারাম থানা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আমরা জিডি করতে গেলে থানায় বলা হয় এটি অভিযোগ আকারে দিতে হবে। পরে অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ জানায় প্রতারক চক্রের সদস্যরা অপরিচিত কারো নাম্বার ব্যবহার করে এসব প্রতারণা করে থাকে। অনেকসময় দেখা যায়, এভাবে যাদের ধরে আনা হয় অভিযোগের ঘটনার সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা থাকে না। এসব বলে থানা থেকে জানানো হয়, এই বিষয়ে অভিযোগ করেও প্রকৃত আসামীকে খুজে পাওয়া যায় না।

এই বিষয়ে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি এই বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীরা আমাদের অফিসে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের যথাযথ আইনী সহায়তা প্রদান করবো। একইসঙ্গে প্রতারক চক্র বের করে আনতে আমাদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম জানান, “ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার দপ্তরে বিষয়টি জানালে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করব। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা প্রতারকদের বের করার চেষ্টার করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।”