ঢাকা ১১:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‌‘কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারীর’ তালিকায় ঢুকল বাংলাদেশ

‌‘কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারীর’ তালিকায় ঢুকল বাংলাদেশ

জার্মানি-ভিত্তিক বার্টেলসম্যান স্টিফটুং রূপান্তর সূচকে (বিটিআই) বাংলাদেশ স্বৈরতন্ত্রের তালিকাতে ঢুকে পড়েছে। বিটিআই তিনটি রূপান্তরের ওপর ভর করে মোট ১৩৭ টি দেশের সূচক প্রকাশ করে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজনৈতিক রূপান্তরে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৭ (৪.০৩/১০), যাকে মাঝারি স্বৈরতন্ত্র বলে অভিহিত করা হয়েছে। অর্থনৈতিক রূপান্তরে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪ (৪.৮৬/১০), যাকে খুব সীমিত বলে অভিহিত করা হয়েছে। শাসনব্যবস্থার সূচকে বাংলাদেশ অবস্থান ১০৬ (৩.৬৬/১০), যা দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

সর্বোপরি ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৩ এবং ১০ এর স্কেলে বাংলাদেশের মান ৪.৪৫। বিটিআই এর সূচক অনুযায়ী মান ৬ এর নিচে হয় তাহলে সেটাকে স্বৈরতন্ত্র হিসেবে হিসেবে বিবেচিত হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুপস্থিতি এবং গুরুতর অনিয়ম নির্দেশক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপদতা দেখা দিয়েছে এবং স্বৈরতান্ত্রিক ঝোঁক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোও সামনে এসেছে। পাশাপাশি, ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলও রাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা শুরু করেছে।

এতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ইত্যাদির মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করার মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। বিভিন্ন দমনমূলক আইন ব্যবহার করে আওয়ামীলীগ সরকার সমালোচক, সাংবাদিকসহ ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করেছে।

প্রতিবেদনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘ড্রাকোনিয়ান’ চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে তল্লাশি ও গ্রেফতার করতে পারে। ২০১৮ এর অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোট ২,৮৮৯ জনের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা হয়েছে এবং এর মধ্যে ২৬ জনের বয়স ছিল ১৮ এর নিচে।

প্রতিবেদনে র‍্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিটিআই বলেছে, আওয়ামীলীগ সরকারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে স্বৈরতান্ত্রিক ঝোঁককে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করলেও এই সময়ের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ও রিজার্ভ সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি গুরুতর হুমকির সম্মুখীন পড়ে। আইএমএফ এর কাছে থেকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ১০টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ আয়োজন করলে সরকার নানাভাবে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালায়। তবু এই সমাবেশে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ দেখা গিয়েছে। ২০২২ সালের শেষ চার মাসে ১০জন বিএনপি নেতাকর্মী পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

বিটিআই ইনডেক্স ২০২৪ এর প্রতিবেদনে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার এক করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশ্বব্যাপী দুর্বল শাসনব্যবস্থার রাষ্ট্রগুলোর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শাসনব্যবস্থার অবনতি, সাংবিধানিক গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ধরে রাখার অক্ষমতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজার অর্থনীতির ব্যর্থতাকে গুরুতর প্রবণতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৩৭টি দেশের মধ্যে ৭৪টি কোনো না কোনোভাবে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অধীনে রয়েছে।

সরকারগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার বাস্তবায়ন ও কার্যকরকভাবে সংস্থান পরিচালনার সক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি, গণতন্ত্রবিরোধী উপাদানগুলো রহিত করার সক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। রেজিমের পরিবর্তন, ক্যু ও স্বৈরতন্ত্রের আধিপত্য রাজনৈতিক রূপান্তরে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। ভারসাম্যের অবক্ষয়, রাজনৈতিক অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার গণতন্ত্রকে আরও ক্ষুণ্ণ করেছে। অর্থনৈতিক রূপান্তরের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে মন্তর পুনরুদ্ধার, মুদ্রাস্ফীতি ও ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের দিকে নজর দিয়েছে।

বিটিআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বৈরতান্ত্রিক রেজিমগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অদক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তারা নিজেদেরকে কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। অনেকগুলো দেশে সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে, ঐক্যমত্য গড়ে তোলার সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

‌‘কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারীর’ তালিকায় ঢুকল বাংলাদেশ

আপডেট সময় ১২:২৯:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

জার্মানি-ভিত্তিক বার্টেলসম্যান স্টিফটুং রূপান্তর সূচকে (বিটিআই) বাংলাদেশ স্বৈরতন্ত্রের তালিকাতে ঢুকে পড়েছে। বিটিআই তিনটি রূপান্তরের ওপর ভর করে মোট ১৩৭ টি দেশের সূচক প্রকাশ করে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজনৈতিক রূপান্তরে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৭ (৪.০৩/১০), যাকে মাঝারি স্বৈরতন্ত্র বলে অভিহিত করা হয়েছে। অর্থনৈতিক রূপান্তরে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪ (৪.৮৬/১০), যাকে খুব সীমিত বলে অভিহিত করা হয়েছে। শাসনব্যবস্থার সূচকে বাংলাদেশ অবস্থান ১০৬ (৩.৬৬/১০), যা দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

সর্বোপরি ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৩ এবং ১০ এর স্কেলে বাংলাদেশের মান ৪.৪৫। বিটিআই এর সূচক অনুযায়ী মান ৬ এর নিচে হয় তাহলে সেটাকে স্বৈরতন্ত্র হিসেবে হিসেবে বিবেচিত হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুপস্থিতি এবং গুরুতর অনিয়ম নির্দেশক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপদতা দেখা দিয়েছে এবং স্বৈরতান্ত্রিক ঝোঁক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোও সামনে এসেছে। পাশাপাশি, ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলও রাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা শুরু করেছে।

এতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ইত্যাদির মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করার মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। বিভিন্ন দমনমূলক আইন ব্যবহার করে আওয়ামীলীগ সরকার সমালোচক, সাংবাদিকসহ ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করেছে।

প্রতিবেদনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘ড্রাকোনিয়ান’ চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে তল্লাশি ও গ্রেফতার করতে পারে। ২০১৮ এর অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোট ২,৮৮৯ জনের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা হয়েছে এবং এর মধ্যে ২৬ জনের বয়স ছিল ১৮ এর নিচে।

প্রতিবেদনে র‍্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিটিআই বলেছে, আওয়ামীলীগ সরকারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে স্বৈরতান্ত্রিক ঝোঁককে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করলেও এই সময়ের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ও রিজার্ভ সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি গুরুতর হুমকির সম্মুখীন পড়ে। আইএমএফ এর কাছে থেকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ১০টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ আয়োজন করলে সরকার নানাভাবে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালায়। তবু এই সমাবেশে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ দেখা গিয়েছে। ২০২২ সালের শেষ চার মাসে ১০জন বিএনপি নেতাকর্মী পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

বিটিআই ইনডেক্স ২০২৪ এর প্রতিবেদনে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার এক করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশ্বব্যাপী দুর্বল শাসনব্যবস্থার রাষ্ট্রগুলোর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শাসনব্যবস্থার অবনতি, সাংবিধানিক গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ধরে রাখার অক্ষমতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজার অর্থনীতির ব্যর্থতাকে গুরুতর প্রবণতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৩৭টি দেশের মধ্যে ৭৪টি কোনো না কোনোভাবে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অধীনে রয়েছে।

সরকারগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার বাস্তবায়ন ও কার্যকরকভাবে সংস্থান পরিচালনার সক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি, গণতন্ত্রবিরোধী উপাদানগুলো রহিত করার সক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। রেজিমের পরিবর্তন, ক্যু ও স্বৈরতন্ত্রের আধিপত্য রাজনৈতিক রূপান্তরে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। ভারসাম্যের অবক্ষয়, রাজনৈতিক অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার গণতন্ত্রকে আরও ক্ষুণ্ণ করেছে। অর্থনৈতিক রূপান্তরের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে মন্তর পুনরুদ্ধার, মুদ্রাস্ফীতি ও ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের দিকে নজর দিয়েছে।

বিটিআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বৈরতান্ত্রিক রেজিমগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অদক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তারা নিজেদেরকে কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। অনেকগুলো দেশে সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে, ঐক্যমত্য গড়ে তোলার সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে।