ঢাকা ১১:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোজার মধ্যে এবার বাড়ল চালের দাম

রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে সব ধরনের পণ্যের বাড়তি দামের মধ্যেই বাড়তি মুনাফা করতে চালের বাজারে মিলারদের চোখ পড়েছে। কারসাজি করে বাড়িয়েছে দাম। ৭ দিনে গরিবের মোটা চাল এবং মাঝারি ও সরু চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০-২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

ফলে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও হু হু করে বাড়ছে দাম। এমন পরিস্থিতিতে- ‘দিন আনে দিন খায়’ এমন খেটে খাওয়া মানুষের এক কেজি মোটা চাল কিনতে ৫২-৫৪ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। শুক্রবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

এদিন নওগাঁ ও দিনাজপুরে মিলপর্যায়ে প্রতি বস্তা মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হয় ২৪০০ টাকায়। যা ৭ দিন আগেও ২২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি বস্তা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হয় ২৪০০ টাকায়। যা ৭ দিন আগে ২৩০০ টাকা ছিল। আর প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হয় ৩২০০ টাকায়। যা আগে ৩১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মিলাররা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। যে কোনো অজুহাতে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ায়। এবারও সেটাই হয়েছে। তাই মূল্য নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে বাজারে চাল কিনতে ক্রেতার ভোগান্তি বাড়বে।

রাজধানীর কাওরান বাজারের আল্লাহ দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন রোজার মাস। এ মাসে মানুষ চাল একটু কম কেনে। বেচাকেনা কম হয়। দামও কম থাকে। কিন্তু এবার উলটো চিত্র। মিলাররা রোজা ঘিরে কারসাজি করছে। বস্তা প্রতি ১০০-২০০ টাকা দাম বাড়িয়ে চাল মিল পর্যায় থেকে বিক্রি করছে। যে কারণে বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি জানান, বাড়তি দামে কিনতে হওয়ায় প্রতি বস্তা মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল ২৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ৭ দিন আগে ২৩৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। পাশাপাশি বিআর-২৮ জাতের চালের বস্তা পাইকারিতে বিক্রি করছি ২৬০০ টাকা, যা ৭ দিন আগে ২৫০০ টাকা ছিল। আর মিনিকেট চালের বস্তা ৩৩০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। যা আগে ৩২০০ টাকা ছিল।

তিনি আরও জানান, কয়েকদিন ধরে মিল পর্যায় থেকে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে না। যে পরিমাণ চাল অর্ডার করা হচ্ছে, দিচ্ছে তার কম। এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে।

এদিকে শুক্রবার অটোরাইস মিল মালিক সমিতি সূত্র জানায়, ধান থেকে চাল তৈরিতে ব্যাঘাত হচ্ছে। তাই একটু সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া সরকার চাল কিনে নানা ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি ও সহায়তা কর্মসূচির আওতায় সাধারণ মানুষকে দিচ্ছে। যে কারণে দাম তুলনামূলক বাড়ছে।

নয়াবাজারে চাল কিনতে আসা আলাউদ্দিন আরিফ বলেন, রোজার বাজারে একটি মাত্র পণ্য ছিল যার দাম স্থিতিশীল ছিল। এবার সেই পণ্যের দামও বাড়ানো হলো। এ দেশের ব্যবসায়ীরা রোজায় সব পণ্য বাড়তি দরে বিক্রি করে মুনাফা করতে চায়। কিন্তু তারা একটুও ভাবে না ভোক্তাকে জিম্মি করে অতি মুনাফা করলে তাদের পরকালে জবাব দিতে হবে। তারা যদি ভাবত তাহলে এমনভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করতে পারত না। আর যারা এ বিষয়ে দেখবে, তারা শুধু মিডিয়ায় বড় বড় বক্তব্য দিতে পারে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করে না। সব মিলে কষ্টে থাকতে হয় ক্রেতাকে।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চালের দাম কেন বেড়েছে তা তদারকি করে বের করা হবে। মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তদারকি করা হবে। অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

রোজার মধ্যে এবার বাড়ল চালের দাম

আপডেট সময় ১১:৪২:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে সব ধরনের পণ্যের বাড়তি দামের মধ্যেই বাড়তি মুনাফা করতে চালের বাজারে মিলারদের চোখ পড়েছে। কারসাজি করে বাড়িয়েছে দাম। ৭ দিনে গরিবের মোটা চাল এবং মাঝারি ও সরু চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০-২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

ফলে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও হু হু করে বাড়ছে দাম। এমন পরিস্থিতিতে- ‘দিন আনে দিন খায়’ এমন খেটে খাওয়া মানুষের এক কেজি মোটা চাল কিনতে ৫২-৫৪ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। শুক্রবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

এদিন নওগাঁ ও দিনাজপুরে মিলপর্যায়ে প্রতি বস্তা মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হয় ২৪০০ টাকায়। যা ৭ দিন আগেও ২২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি বস্তা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হয় ২৪০০ টাকায়। যা ৭ দিন আগে ২৩০০ টাকা ছিল। আর প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হয় ৩২০০ টাকায়। যা আগে ৩১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মিলাররা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। যে কোনো অজুহাতে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ায়। এবারও সেটাই হয়েছে। তাই মূল্য নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে বাজারে চাল কিনতে ক্রেতার ভোগান্তি বাড়বে।

রাজধানীর কাওরান বাজারের আল্লাহ দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন রোজার মাস। এ মাসে মানুষ চাল একটু কম কেনে। বেচাকেনা কম হয়। দামও কম থাকে। কিন্তু এবার উলটো চিত্র। মিলাররা রোজা ঘিরে কারসাজি করছে। বস্তা প্রতি ১০০-২০০ টাকা দাম বাড়িয়ে চাল মিল পর্যায় থেকে বিক্রি করছে। যে কারণে বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি জানান, বাড়তি দামে কিনতে হওয়ায় প্রতি বস্তা মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল ২৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ৭ দিন আগে ২৩৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। পাশাপাশি বিআর-২৮ জাতের চালের বস্তা পাইকারিতে বিক্রি করছি ২৬০০ টাকা, যা ৭ দিন আগে ২৫০০ টাকা ছিল। আর মিনিকেট চালের বস্তা ৩৩০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। যা আগে ৩২০০ টাকা ছিল।

তিনি আরও জানান, কয়েকদিন ধরে মিল পর্যায় থেকে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে না। যে পরিমাণ চাল অর্ডার করা হচ্ছে, দিচ্ছে তার কম। এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে।

এদিকে শুক্রবার অটোরাইস মিল মালিক সমিতি সূত্র জানায়, ধান থেকে চাল তৈরিতে ব্যাঘাত হচ্ছে। তাই একটু সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া সরকার চাল কিনে নানা ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি ও সহায়তা কর্মসূচির আওতায় সাধারণ মানুষকে দিচ্ছে। যে কারণে দাম তুলনামূলক বাড়ছে।

নয়াবাজারে চাল কিনতে আসা আলাউদ্দিন আরিফ বলেন, রোজার বাজারে একটি মাত্র পণ্য ছিল যার দাম স্থিতিশীল ছিল। এবার সেই পণ্যের দামও বাড়ানো হলো। এ দেশের ব্যবসায়ীরা রোজায় সব পণ্য বাড়তি দরে বিক্রি করে মুনাফা করতে চায়। কিন্তু তারা একটুও ভাবে না ভোক্তাকে জিম্মি করে অতি মুনাফা করলে তাদের পরকালে জবাব দিতে হবে। তারা যদি ভাবত তাহলে এমনভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করতে পারত না। আর যারা এ বিষয়ে দেখবে, তারা শুধু মিডিয়ায় বড় বড় বক্তব্য দিতে পারে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করে না। সব মিলে কষ্টে থাকতে হয় ক্রেতাকে।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চালের দাম কেন বেড়েছে তা তদারকি করে বের করা হবে। মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তদারকি করা হবে। অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে।