ঢাকা ০২:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াই,শেষ বলে হার বাংলাদেশের

শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াই,শেষ বলে হার বাংলাদেশের

শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াই। যে লড়াইয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছিল অর্ধেক ইনিংস যেতেই। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝোড়ো ফিফটি আর তারপর জাতীয় দলে ‘অভিষিক্ত’ জাকের আলি অনিকের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে অসাধ্য সাধনের খুব কাছে চলে এসেছিল বাংলাদেশ। হলো না। রুদ্ধশ্বাস এক লড়াইয়ে শেষ বলে ৩ রানে হেরে গেলো বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো শ্রীলঙ্কা।

বাংলাদেশের সামনে ছিল ২০৭ রানের বিশাল লক্ষ্য। এমন এক লড়াই শেষ বল পর্যন্ত জিইয়ে ছিল জাকেরের কল্যাণে। শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার পড়ে ১২ রান। প্রথম বলে রিশাদ হোসেনকে আউট করেন দাসুন শানাকা। পরের বলে ওয়াইড। দ্বিতীয় বলে তাসকিন আহমেদ নেন এক রান।

৪ বলে দরকার ১০। স্ট্রাইকে জাকের আলি। দলকে অবিশ্বাস্যভাবে লড়াইয়ে ফেরানো এই ব্যাটার শেষটা আর করতে পারলেন না। লংঅফে তুলে দিলেন ক্যাচ। ৩৪ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ৬ ছক্কায় জাকেরের ৬৮ রানের ইনিংস থামলো।

পরের বলে শরিফুল ইসলাম বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আশা জাগিয়েছিলেন। ২ বলে দরকার ছিল একটি ছক্কা। কিন্তু শেষ দুই বলে দুই রানের বেশি নিতে পারেননি শরিফুল আর তাসকিন। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ক্রস খেলতে চেয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হন লিটন দাস (০)। সৌম্য সরকারও উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। ১১ বলে ১২ করে বিনুরা ফার্নান্ডোর বলে আকাশে বল তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এই বাঁহাতি।

বিপিএলের দুর্দান্ত ছন্দে থাকা তাওহিদ হৃদয় শুরু করেছিলেন প্রথম বলেই ছক্কা দিয়ে। তবে ৫ বলে ৮ করেই ফিরতে হয় তাকে। ম্যাথিউজের বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গেলে ব্যাটে বল আলতো ছোঁয়া লেগে চটলে যায় উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি। ৩০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আর অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। রিয়াদ মারমুখী হলেও শান্ত এগোচ্ছিলেন ধীরগতিতে।

বল হাতে নিয়েই ২৮ বলে তাদের ৩৮ রানের জুটিটি ভাঙেন মাথিসা পাথিরানা। পাথিরানার গতিতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল শান্তর। অবশেষে তিনি ক্যাচই তুলে দেন। বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাট থেকে ২২ বলে আসে ২০ রান।

তবে আরও একবার বুড়ো হাড়ের ভেল্কি দেখিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। লঙ্কান বোলিং আক্রমণের সামনে যেখানে ধুঁকেছেন তরুণ ব্যাটাররা, সেখানে ‘বুড়ো’ মাহমুদউল্লাহ ২৭ বলে ২ চার আর ৪ ছক্কায় হাঁকান হাফসেঞ্চুরি। যদিও হাফসেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৩১ বলে ৫৪ করে থিকশানার শিকার হন মাহমুদউল্লাহ। জোরেই হাঁকিয়েছিলেন, বাউন্ডারিতে হয়ে যান ক্যাচ।

এরপর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন জাকের আলি। চার-ছক্কায় মাঠ মাতিয়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখেন জাতীয় দলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা এই ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত আর পারলেন না। এর আগে শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ আর মোস্তাফিজুর রহমান-তিন পেসারই তাদের ৪ ওভারের কোটায় দিলেন ৪০ রানের ওপর। সবমিলিয়ে তাদের ১২ ওভারে ১২৯ রান তুলে নিলো শ্রীলঙ্কা। ২০ ওভারে লঙ্কানদের পুঁজি দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ২০৬ রান।

১৪ বলে ১ চার আর ২ ছক্কায় ১৯ রান করা এই ব্যাটারকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। মিডউইকেটে দারুণ ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৪৫ রান তুলতে পারে শ্রীলঙ্কা। ৩৭ রানে ২ উইকেট হারিয়েছিল লঙ্কানরা। তবে সেখান থেকে তৃতীয় উইকেট জুটিতে কুশল মেন্ডিস আর সাদিরা সামারাবিক্রমার ৬১ বলে ৯৬ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারি দল।

১৪তম ওভারে বল হাতে নিয়েই সুযোগ তৈরি করেছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু উইকেটরক্ষক লিটন দাস আকাশে উঠে যাওয়া বলটি দৌড়ে গিয়ে গ্লাভসবন্দী করলেও ভারসাম্য রাখতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৫৬ রানে জীবন পান কুশল মেন্ডিস। তবে মেন্ডিসকে আর ভয়ংকর হতে দেননি রিশাদ হোসেন। পরের ওভারেই তাকে লংঅফ বাউন্ডারিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যাচ বানান এই লেগস্পিনার। ৩৬ বলে ৬ চার আর ৩ ছক্কায় মেন্ডিস করেন ৫৯।

এরপর উইকেটে এসেই চড়াও হন অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। ২১ বলে ৬ ছক্কায় ৪৪ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৪৮ বলে ৬১ করেন সাদিরা। শরিফুল ৪ ওভারে ৪৭ রানে একটি, তাসকিন ৪০ রানে নেন একটি উইকেট এবং মোস্তাফিজ ৪ ওভারে ৪২ রান দিয়ে পাননি উইকেটের দেখা। ৪ ওভারে ৩২ রানে একটি উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। শেখ মেহেদি হাসান ৩ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।

জনপ্রিয় সংবাদ

বাগেরহাটে প্রয়াত কবি ড. হিমেল বরকতের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াই,শেষ বলে হার বাংলাদেশের

আপডেট সময় ১০:১৭:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ মার্চ ২০২৪

শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াই। যে লড়াইয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছিল অর্ধেক ইনিংস যেতেই। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝোড়ো ফিফটি আর তারপর জাতীয় দলে ‘অভিষিক্ত’ জাকের আলি অনিকের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে অসাধ্য সাধনের খুব কাছে চলে এসেছিল বাংলাদেশ। হলো না। রুদ্ধশ্বাস এক লড়াইয়ে শেষ বলে ৩ রানে হেরে গেলো বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো শ্রীলঙ্কা।

বাংলাদেশের সামনে ছিল ২০৭ রানের বিশাল লক্ষ্য। এমন এক লড়াই শেষ বল পর্যন্ত জিইয়ে ছিল জাকেরের কল্যাণে। শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার পড়ে ১২ রান। প্রথম বলে রিশাদ হোসেনকে আউট করেন দাসুন শানাকা। পরের বলে ওয়াইড। দ্বিতীয় বলে তাসকিন আহমেদ নেন এক রান।

৪ বলে দরকার ১০। স্ট্রাইকে জাকের আলি। দলকে অবিশ্বাস্যভাবে লড়াইয়ে ফেরানো এই ব্যাটার শেষটা আর করতে পারলেন না। লংঅফে তুলে দিলেন ক্যাচ। ৩৪ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ৬ ছক্কায় জাকেরের ৬৮ রানের ইনিংস থামলো।

পরের বলে শরিফুল ইসলাম বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আশা জাগিয়েছিলেন। ২ বলে দরকার ছিল একটি ছক্কা। কিন্তু শেষ দুই বলে দুই রানের বেশি নিতে পারেননি শরিফুল আর তাসকিন। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ক্রস খেলতে চেয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হন লিটন দাস (০)। সৌম্য সরকারও উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। ১১ বলে ১২ করে বিনুরা ফার্নান্ডোর বলে আকাশে বল তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এই বাঁহাতি।

বিপিএলের দুর্দান্ত ছন্দে থাকা তাওহিদ হৃদয় শুরু করেছিলেন প্রথম বলেই ছক্কা দিয়ে। তবে ৫ বলে ৮ করেই ফিরতে হয় তাকে। ম্যাথিউজের বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গেলে ব্যাটে বল আলতো ছোঁয়া লেগে চটলে যায় উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি। ৩০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আর অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। রিয়াদ মারমুখী হলেও শান্ত এগোচ্ছিলেন ধীরগতিতে।

বল হাতে নিয়েই ২৮ বলে তাদের ৩৮ রানের জুটিটি ভাঙেন মাথিসা পাথিরানা। পাথিরানার গতিতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল শান্তর। অবশেষে তিনি ক্যাচই তুলে দেন। বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাট থেকে ২২ বলে আসে ২০ রান।

তবে আরও একবার বুড়ো হাড়ের ভেল্কি দেখিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। লঙ্কান বোলিং আক্রমণের সামনে যেখানে ধুঁকেছেন তরুণ ব্যাটাররা, সেখানে ‘বুড়ো’ মাহমুদউল্লাহ ২৭ বলে ২ চার আর ৪ ছক্কায় হাঁকান হাফসেঞ্চুরি। যদিও হাফসেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৩১ বলে ৫৪ করে থিকশানার শিকার হন মাহমুদউল্লাহ। জোরেই হাঁকিয়েছিলেন, বাউন্ডারিতে হয়ে যান ক্যাচ।

এরপর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন জাকের আলি। চার-ছক্কায় মাঠ মাতিয়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখেন জাতীয় দলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা এই ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত আর পারলেন না। এর আগে শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ আর মোস্তাফিজুর রহমান-তিন পেসারই তাদের ৪ ওভারের কোটায় দিলেন ৪০ রানের ওপর। সবমিলিয়ে তাদের ১২ ওভারে ১২৯ রান তুলে নিলো শ্রীলঙ্কা। ২০ ওভারে লঙ্কানদের পুঁজি দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ২০৬ রান।

১৪ বলে ১ চার আর ২ ছক্কায় ১৯ রান করা এই ব্যাটারকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। মিডউইকেটে দারুণ ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৪৫ রান তুলতে পারে শ্রীলঙ্কা। ৩৭ রানে ২ উইকেট হারিয়েছিল লঙ্কানরা। তবে সেখান থেকে তৃতীয় উইকেট জুটিতে কুশল মেন্ডিস আর সাদিরা সামারাবিক্রমার ৬১ বলে ৯৬ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারি দল।

১৪তম ওভারে বল হাতে নিয়েই সুযোগ তৈরি করেছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু উইকেটরক্ষক লিটন দাস আকাশে উঠে যাওয়া বলটি দৌড়ে গিয়ে গ্লাভসবন্দী করলেও ভারসাম্য রাখতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৫৬ রানে জীবন পান কুশল মেন্ডিস। তবে মেন্ডিসকে আর ভয়ংকর হতে দেননি রিশাদ হোসেন। পরের ওভারেই তাকে লংঅফ বাউন্ডারিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যাচ বানান এই লেগস্পিনার। ৩৬ বলে ৬ চার আর ৩ ছক্কায় মেন্ডিস করেন ৫৯।

এরপর উইকেটে এসেই চড়াও হন অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। ২১ বলে ৬ ছক্কায় ৪৪ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৪৮ বলে ৬১ করেন সাদিরা। শরিফুল ৪ ওভারে ৪৭ রানে একটি, তাসকিন ৪০ রানে নেন একটি উইকেট এবং মোস্তাফিজ ৪ ওভারে ৪২ রান দিয়ে পাননি উইকেটের দেখা। ৪ ওভারে ৩২ রানে একটি উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। শেখ মেহেদি হাসান ৩ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।