বুধবার বিকেল চারটায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্বকাপে অংশ নিতে ভারতে উড়াল দিয়েছে। এই বহরে থাকার কথা ছিল জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালেরও। কিন্তু ফিটনেস নিয়ে ঝুঁকি থাকায় তামিমকে নেওয়া হয়নি এমন ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষণার পর তামিম টুঁ শব্দটি করেননি। তাকে দলে নেওয়া, না নেওয়া নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর নাটক হয়েছে মিরপুরে। অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। এসব নিয়ে রাতেই নির্বাচকরা গণমাধ্যমের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু তামিম ছিলেন আড়ালে।
তবে বুধবার বিকেলে এক ভিডিও বার্তা নিয়ে হাজির হন তিনি। যেখানে জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ খেলার ইচ্ছা ছিল তারও। ফিটনেস নিয়ে নির্বাচকরা যে প্রশ্ন তুলেছেন তা অমূলক, এমনটা জানিয়েছেন তামিম। বরং বিশ্বকাপ দলে না থাকার আসল কারণটা ব্যাখ্যা করেছেন ভিডিওতে। গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, তামিম নিজেও পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলতে রাজি ছিলেন না। সাকিব এমন কথা শোনার পর আনফিট তামিমকে বিশ্বকাপে নিতে চাননি! এজন্য বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে তামিমকে বাদ দেওয়া হয়। এসবও ভিত্তিহীন। তামিম বলেছেন, ‘একটা বিষয় পরিস্কার করতে চাই, আমি কোনো সময় কোনো মুহূর্তে কাউকেই বলিনি যে আমি পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারব না। এই কথাটা কোনো সময় হয়নি। কালকে নান্নু ভাইও এই কথাটা পরিস্কার করেছেন।’
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৯০ মিনিট ক্রিজে কাটিয়েছিলেন তামিম। খেলেছেন ৪৪ রানের ইনিংস। তিন চার মাস পর ব্যাটিংয়ে ফিরে আত্মবিশ্বাসও পেয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ফিটনেসে স্বস্তিতে না থাকলেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের আগে আরো চাঙ্গা হয়ে যাবেন তিনি।
কিন্তু বিসিবির হাই অফিসিয়াল থেকে অদ্ভুত প্রস্তাব আসার পর বেঁকে বসেন তামিম। প্রস্তাব ছিল, ৭ অক্টোবর ধর্মশালায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ না খেলার। প্রথমে না খেলানোর কথা বলার পর তামিম কড়া প্রতিক্রিয়া দেখালে পরে মিডল অর্ডারে খেলানোর প্রস্তাব আসে। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগেই এতো শর্ত, এতো দেনদরবার মানতে পারেননি তামিম। সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেন তাকে বিশ্বকাপ দলে না রাখতে।
ভিডিওতে তামিম বলেন, ‘ওই ম্যাচের পর আমি মানসিকভাবে বেশ ফুরফুরে ছিলাম। যা শেষ চার-পাঁচ মাস হয়েছে…আমি আবারও খেলতে মুখিয়ে ছিলাম। বিশ্বকাপের জন্য তাকিয়ে ছিলাম।’‘আমাকে বোর্ডের টপ লেভেল থেকে একজন ফোন করলেন। উনি বেশ ইনভলভ আমাদের ক্রিকেটের সাথে। উনি আমাকে ফোন করে বললেন যে, তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলবা না আফগানিস্তানের সাথে।’
‘আমি বললাম, ভাই এটা তো এখনো ১২-১৩ দিনের কথা। ১২-১৩ দিনে তো আমি আরো ভালো কন্ডিশনে থাকবো। কি কারণে খেলবে না। তখন বললো যে, তুমি যদি খেল আমরা এরকম একটা পরিকল্পনা করছি, আলোচনা করছি তুমি যদি খেল তোমাকে আমরা নিচে ব্যাটিং করাব। ন্যাচারেলি ভাই আপনারা একটা জিনিস মনে রাখতে হবে আমি কোন মাইন্ডসেট থেকে আসছিলাম। হঠাৎ করে একটা ভালো ইনিংস খেলেছি, আমি হ্যাপি ছিলাম। হঠাৎ করে আবার এসব কথা। আমার পক্ষে নেওয়া আসলে সম্ভব না। আমি সতের বছর ধরে এক পজিশনে ব্যাটিং করেছি। জীবনে কোনোদিন তিন চারে ব্যাটিং-ই করিনি। যদি এরকম হতো আমি তিনে ব্যার্টিং করে চারে ব্যাটিং করি তারপরে যদি উপরে-নিচে করা হয় দ্যাট ক্যান বি অ্যাডজস্টাবেল। কিন্তু আমার তিন, চার ও পাঁচে ব্যাটিং করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই।’
‘ন্যাচারেলি আমি কথাটা কোনোভাবেই ভালোভাবে নেইনি। আমি উত্তেজিতও হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ আমার এটা পছন্দ হয়নি। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমাকে জোর করে করে অনেক জায়গায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। ইচ্ছা করে করে। এটা ঠিক হলো, আচ্ছা এখন আরেকটা নতুন জিনিস বলি। যেটা আমি অনুভব করেছি। তখন আমি বললাম যে দেখেন, আপনারা একটা জিনিস করেন আপনাদের যদি এরকম চিন্তা থাকে তাহলে আমাকে পাঠায়েন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। আপনারা আমাকে প্রতিদিন একটা নতুন জিনিস ফেস করাবেন। এখানে আমি থাকতে চাই না।’
ফিজিওর রিপোর্ট নিয়ে তামিমের ব্যাখ্যা, ‘ফিজিওর রিপোর্টে এক্সাটলি কি ছিল সেটা আমি শেয়ার করি। আর কেউ যদি জিনিসটার জন্য চ্যালেঞ্জড করতে চান তাহলে মোস্ট ওয়েলকাম। ফিজিওর রিপোর্টে যেটা ছিল, আমার কন্ডিশনটা বলা হয়েছিল। প্রথম ম্যাচের পর এমন পেইন হয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচের পর এমন পেইন হয়েছে। আজকের দিনের হিসেবে হি ইজ অ্যাভেইলেভেল ফর সিলেকশন ফর দ্য টোয়েন্টি সিক্সথ (২৬ তারিখ) গেম। কিন্তু মেডিকেল বিভাগ মনে করে যদি আমি বিশ্রাম নেই ২৬ তারিখে, কারণ ২৭ তারিখ আমাদের ট্রাভেলিং ডে। ২৯ তারিখ আমাদের অনুশীলন ম্যাচ এরপর ১-২ তারিখে আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচ। আমি যদি এখন বিশ্রাম নেই এবং দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচটা খেলি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগে তাহলে আমার হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকবে। এই দুই সপ্তাহে আমার রিহ্যাব হয়ে যাবে। ওভারঅল দশ সপ্তাহের রিহ্যাব হয়ে যাবে। তাহলে আমি প্রথম ম্যাচ খেলার জন্য খুব ভালো অবস্থায় চলে যাবো।