ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সরস্বতীপূজা উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ঘিরে (কনসার্ট) দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) গভীর রাতে তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ছাত্রসংগঠনটির বিভিন্ন পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনার রেশ ধরে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে মধুর ক্যানটিনেও মারামারিতে জড়িয়েছেন ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা।
গতকাল রাতের ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের মাথায় আটটি সেলাই পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের ভাষ্য, জগন্নাথ হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানের অনুসারীদের মধ্যে মারামারির ঘটনার সূত্রপাত হলেও পরে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অনুসারীরা এতে জড়িয়ে যান। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা হল থেকে বের হওয়ার সময় ধাক্কাধাক্কি থেকে ঘটনার শুরু। শেষ হয় হামলা আর হলের বেশ কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে।
তানভীর হাসানের অনুসারী জগন্নাথ হলের ঋভু মন্ডলের ভাষ্য, কনসার্টের একপর্যায়ে তানভীর হাসান জগন্নাথ হল থেকে যখন বের হচ্ছিলেন, তখন শেখ ওয়ালী আসিফের অনুসারী গণেশ ঘোষ তার কর্মীদের নিয়ে বেশ জটলা তৈরি করেন। এ নিয়ে ছোটখাটো ঝামেলা তৈরি হলে তানভীর হাসান তাদের সঙ্গে কথা বলে বের হয়ে যান৷ পরে এ নিয়ে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হট্টগোল বাধে। রাত দুইটার দিকে হলের সাদ্দাম হোসেন ও শেখ ওয়ালী আসিফের অনুসারী পক্ষগুলো একজোট হয়ে আমাদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে। এতে আট নেতা-কর্মী আহত হন। আমাদের বেশ কিছু কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে।
অন্যদিকে শেখ ওয়ালী আসিফের অনুসারী জগন্নাথ হলের রাজীব বিশ্বাস বলেন, ‘ধাক্কা লাগার পর গণেশ ঘোষ তাৎক্ষণিকভাবে তানভীর হাসানের কাছে ক্ষমা চাইলে তানভীর ঘটনার মীমাংসা করে হল ত্যাগ করেন। পরে তানভীর হাসানের অনুসারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেন। হামলায় আমাদের ৮-৯ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।’
এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন তানভীর হাসানের অনুসারী অপূর্ব চক্রবর্তী। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ সন্ধ্যার পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি থাকার সময় তিনি বলেছিলেন, তিনি তার কর্মীদের কক্ষে চলে যেতে বলে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ রাজীব বিশ্বাস ও গণেশ ঘোষ এসে তার মাথা ও চোখে রড দিয়ে আঘাত করেন। এতে তার চোখের কোনায় কেটে যায় ও মাথা ফেটে যায়৷
জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ভুল-বোঝাবুঝিতে গতকাল রাতে কিছুটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিষয়টি উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রাতের ঘটনার বিষয়ে আজ বিকেলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফের কাছে অভিযোগ জানাতে মধুর ক্যানটিনে যান তানভীর হাসানের অনুসারী জগন্নাথ হল শাখার একদল নেতা-কর্মী। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে আরেক দফা মারামারি হয়।
তানভীর হাসানের অনুসারী পলাশ রায় বলেন, অতর্কিত হামলায় আমাদের দুই নেতা-কর্মীর হাত কেটে গেছে।
শেখ ওয়ালী আসিফ বলেন, ‘আজ বিকেলে মধুর ক্যানটিনে কিছু ছেলেপেলের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ ঘটনা এবং গতকাল রাতে জগন্নাথ হলে বিশৃঙ্খলার ঘটনা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি ও তানভীর হাসান।’
তানভীর হাসান বলেন, জগন্নাথ হলের ঘটনায় বহিরাগত ব্যক্তিদের থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে অবশ্যই প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে৷ ছাত্রলীগও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।